চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বহিষ্কৃত) আব্দুল মাজেদের সঙ্গে তার স্ত্রীসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য দেখা করেছেন। তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। জল্লাদ শাহজাহানের নেতৃত্বে মো. আবুল, তরিকুল ও সোহেলসহ ১০ জন জল্লাদের একটি দল তৈরি করেছে ঢাকা জেল কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) সিনিয়র জেল সুপার ইকবাল কবীর চৌধুরীবলেন, মাগরিবের নামাজের পর মাজেদের স্ত্রীসহ পরিবারের ৫ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করে কারাগার ত্যাগ করেছেন।
সূত্র জানায়, সন্ধ্যা সাতটার কিছু সময় আগে তারা ভিতরে যান। এর আগে বিকেলে তারা জেল গেইটে আসেন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবারের সদস্যরা দেখা করতে যান।
শুক্রবার রাতে আব্দুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে এমন আলোচনা আছে কারা কর্তৃপক্ষসহ সরকারের বিভিন্ন মহলে। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও অতিরিক্ত আইজি প্রিজন কর্নেল আবরার হোসেনকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আজ খুনি মাজেদের ফাঁসি হচ্ছে না। কাল বা পরশু তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর হতে পারে।
আদালতের নির্দেশে বুধবার দুপুরে কারা কর্তৃপক্ষ আসামিকে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলাল চৌধুরীর আদালতে হাজির করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা আসামি গ্রেপ্তার দেখানোসহ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তারসহ মৃত্যু পরোয়ানার আবেদন মঞ্জুর করেন। একইদিন সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন আব্দুল মাজেদ। কিন্তু আবেদনটি খারাজি হয়ে যায়। এতে তার দণ্ড কার্যকরে বাধা দূর হয়ে যায়।
দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনিকে মঙ্গলবার ভোরে মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একটি দল। গত মাসে দেশে ফিরে মাজেদ স্ত্রীর ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকার এক নম্বর রোডের ১০/এ বাড়িতে বসবাস করছিলেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। ৩৪ বছর পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। খুব ধীরে দীর্ঘ বারো বছরে নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছতার সঙ্গে অতিক্রম করে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্বঘোষিত খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাবন্দী পাঁচ আসামির ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলেন- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ছয় আসামি পলাতক ছিলেন। তাদের মধ্যে আবদুল মাজেদকে গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়।
পলাতক বাকি পাঁচজনের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আব্দুর রশিদ (বরখাস্ত) লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগ সময় লিবিয়াতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম (বরখাস্ত) পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী (বরখাস্ত) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে, লে. কর্নেল (অব.) এন এইচ এমবি নূর চৌধুরী (বরখাস্ত) কানাডায় রয়েছেন। আর রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতের কারাগারে আটক বলে অনেকে ধারণা করছেন।