চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃফুলতলা উপজেলাবাসী খুলনা ওয়াসাকে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন করতে দেবে না; প্রয়োজনে রক্ত দেবে। এমনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ফুলতলা উপজেলা পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটি। গতকাল রবিবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ফুলতলা থেকে বুস্টার পাইপের মাধ্যমে ওয়াসাকে পানি নেয়ার চেষ্টা প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফুলতলা উপজেলা পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মোঃ আনছার আলী মোল্লা।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ ২ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় ফুলতলা আসাদ রফি গ্রন্থাগারে গণজমায়েত, আগামীকাল ৩ ডিসেম্বর জামিরা বাজারে হাটসভা, ৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় পথেরবাজারে পথসভা, ১২ ডিসেম্বর বেজেরডাঙ্গা শহিদ মিনারে পথসভা, ১৩ ডিসেম্বর মশিয়ালীতে গণসংযোগ এবং ২০ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় ফুলতলা স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৫ সালে নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের নামে ফুলতলার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের আত্মঘাতি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। আফিলগেট থেকে বেজেরডাঙ্গা পর্যন্ত ৪০টি বুস্টার পাইপ বসানো এবং আফিলগেটে এক বিশালাকৃতির পানির বার্জ করার সিদ্ধান্ত হয়। প্রায় ৪০ কোটি টাকার বাজেটও গ্রহণ করা হয়, যা ছিল সম্পূর্ণ ১৯৮৩ সালের পানি উত্তোলন আইনের পরিপন্থি। ২০০৫ সালের শুরুতে এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ফুলতলা পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির ব্যানারে হাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে আন্দোলন শুরু করেন স্থানীয়রা।
তিনি আরও বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। ধীরে ধীরে ফুলতলার তৃণমূল পর্যায়ে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে এবং পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে, প্রতি ইউনিয়নে উঠান বৈঠক, পথসভা, মতবিনিময়, পদযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। ফুলতলা স্বাধীনতা চত্বরে হাজার হাজার মানুষের সমাগমে অনুষ্ঠিত হয় মহাসমাবেশ। ফুলতলাবাসীর জীবন-মরণ এ সমস্যা সমাধান করতে সেদিন সবাই আওয়াজ তোলেন ‘পানি দেবো না, প্রয়োজনে রক্ত দেবো।’ তবে পানি নিতে জনমত উপেক্ষা করে বুস্টার পাইপ বসানোসহ পাইপলাইন বসানোর কাজ চলতে থাকে। পরে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে ফুলতলাবাসী রাজপথ অবরোধসহ হরতালের মতো কর্মসূচি পালন করে। আন্দোলনের একপর্যায়ে পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা আইনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। হাইকোর্টের রিটের মাধ্যমে কাজের ওপর স্থগিতাদেশ দিলে তা বন্ধ হয়ে যায়। এই আন্দোলন ২০০৫ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত চলে। এক পর্যায়ে কেসিসি বিকল্প উপায়ে পানি সরবরাহের জন্য ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাজেট করে মধুমতি নদী থেকে পানি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ফুলতলাবাসী হাফ ছেড়ে বাঁচে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বর্তমানে ফুলতলা থেকে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের জন্য ফের কার্যক্রম শুরু করেছে খুলনা ওয়াসা। ইতোমধ্যে বুস্টার পাম্পগুলো ঘঁষা-মাজা করেছে। পাইপলাইন খোঁড়াখুঁড়ি করছে। বুস্টারের পাম্প দিয়ে পানির ফোয়ারা ছোটাচ্ছে। পানির বার্জারের সঙ্গে বড় পাইপ সংযুক্ত করছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের অর্থ পরিবেশ বিপর্যয়, ফুলতলার নলকূপ বন্ধ হওয়া, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া, নার্সারির ক্ষতি, ক্ষেতের ফসল শুকিয়ে মারা যাওয়া, গাছপালা পানির শুকিয়ে মারা যাওয়া, খাবার পানিতে আর্সেনিকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, মাছের হ্যাচারি ধ্বংস হওয়া, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়া, ডাকাতিয়ার বিলের মাছের ক্ষতিসাধন হওয়া। এতে হাজার হাজার পরিবার পথে বসবে আশঙ্কা প্রকাশ করছে উপজেলাবাসী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফুলতলা উপজেলা পানি ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সরদার শাহাবুদ্দিন জিপ্পী, মোঃ আসলাম খান, আঃ মজিদ মোল্লা, ডাঃ সরোজ সুর, কেএম জিয়া হাসান তুহীন, এসএম মুস্তাফিজুর রহমান, মোঃ নেছার উদ্দিন, মৃণাল হাজরা, কামরুজ্জামান নান্নু, ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ মোহাম্মদ ভূইঁয়া শিপলু, রবিউল ইসলাম মন্টু, আঃ হামিদ মোড়ল, প্রভাষক গৌতম কুন্ডু, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, ইসমাইল হোসেন বাবলু ও মোল্লা শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।