অবৈধ গর্ভপাত : হাসপাতাল থেকে রুগি ভাগিয়ে নেয়াসহ নানা অপকর্ম
ফুলতলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স তাসলিমা আফরোজের অপরাধের সাতকাহন
চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃসাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার আলোচনা বা শিরোনামে এসেছে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন সংবাদ। কখনও হাসপাতালে চিকিৎসককে ছুরিকাঘাত, কখনও হাসপাতাল অভ্যান্তরে মানবন্ধন। এবার বেরিয়ে এসেছে এ হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র নার্স তাসলিমা আফরোজের বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর অপরাধের সাতকাহন। নিজের বাসায় খুলেছেন কথিত মিনি ক্লিনিক। এখানে বিবাহিত মহিলাদের পাশাপাশি অবিবাহিত প্রেগনেন্স মেয়েদের সুলভমূল্যে গর্ভপাত করেন। এখানেই শেষ নয়, তাসলিমার অপরাধের চিত্র।
ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আগত মা ও শিশু রোগিরা চিকিৎসা নিতে আসলে কৌশলে হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে নিয়ে যায় নিজের বাসাস্থ চেম্বারে। এছাড়া সরেজমিনে তথ্যানুসন্ধানে গেলে বেরিয়ে আসে আরো জানা অজানা অনেক তথ্য। হাসপাতাল সুত্র জানায়, তাসলিমা আফরোজ (৪৫) ২০০৩ সাল থেকে অদ্যবদি একটানা দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ফুলতলায় কর্মরত আছেন। এদিকে নতুনহাটে বিলাসবহুল দুই তলা বাড়ি করেছেন। তাসলিমা আফরোজের বাসার পাশে একটি আধাপাকা টিনশেড ঘর মূলত মিনি ক্লিনিক হিসেবে গড়ে তুলেছেন বলে এলাকাবাসির দাবি। এখানে প্রতিদিনই রোগি দেখেন। নরমাল ডেলেভারী, এমআর (গর্ভপাত), ডিএনসিসহ বিভিন্ন চিকিৎসা নিজে হাতে করেন। যদিও তিনি একজন নার্স, তবে তাঁর কথিত মিনি ক্লিনিকে ডাক্তারের ভূমিকায় থাকেন।
উল্লেখ থাকে যে গর্ভপাত করানো সম্পূর্ণ অবৈধ। শুধুমাত্র একজন গর্ভবতী মায়ের জীবন ঝুঁকিতে থাকলে তখনই গর্ভপাত করানো যায়। গর্ভপাত করাতে হলে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন হয়। তবে এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে বীরদর্পে রুটিন মাফিক বিভিন্ন বয়সি মহিলাদের এম আর, ডিএনসি করে যাচ্ছেন তিনি বহাল তবিয়তে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, কোন স্পেশালিস্ট ডাক্তার ব্যতিত রোগিকে এম আর করাতে গেলে রুগির জীবন ঝুঁকির আশংকা থাকে, ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের কোন দূর্ঘটনা। তাসলিমা আফরোজ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন এম আর করানোর জন্য। তবে অবিবাহিত মেয়েরা তাসলিমার কাছে গর্ভপাত করানোর জন্য আসলে সুযোগ বুঝে এম আর করানোর রেট বাড়িয়ে দেন। এভাবে তাসলিমা দিনের পর দিন অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা আয় করে যাচ্ছে বলে সূত্রে জানা যায়। এদিকে তাসলিমা আফরোজ তার কথিত মিনি ক্লিনিকে সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রতিদিনই রোগি ভাগিয়ে নিয়ে যায়। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালে ডিউটিরত অবস্থায় রোগি দেখার স্লিপে তাসলিমা নিজেই রোগিদের প্রেসক্রিপশন করেন। ওই প্রেসক্রিপশনে ইচ্ছামত দেওয়া হয় বড় ধরনের টেস্ট। বড় অক্ষরে নিজের নাম ও স্বাক্ষর করে থাকেন প্রেসক্রিপশনে।
যাতে ডায়াগনস্ট্রিক সেন্টারের কমিশন পেতে সুবিধা হয়। যেখানে এমবিবিএস ডাক্তার এর নিচে প্রেসক্রিপশন করার বিধান নেই, অথচ কোন অদৃশ্য শক্তির বলিয়ানে প্রতিনিয়তই হাসপাতালে পর্যাপ্ত এমবিবিএস ডাক্তার থাকা স্বত্ত্বেও তাসলিমা নিজেই রোগিদের প্রেসক্রিপশন করে যাচ্ছে তা প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহিলা রোগি জানান, ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এম আর করাতে গেলে তাসলিমা আফরোজ তাকে কৌশলে বুঝিয়ে শুনিয়ে তার বাসায় যেতে বলে এমআর করানোর জন্য।
সেখানে ওই মহিলার কাছে ৩ হাজার টাকার দাবি করেন সিনিয়র নার্স তাসলিমা। যেখানে সরকারি হাসপাতালে এমআর ফ্রি করানো হয়। অথচ হাসপাতালে আগত রোগিকে মোটা অংকের টাকার বিনিময় তার বাসায় যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন ওই নার্স। জানা যায়, একটি চক্রের সহায়তায় নার্স তাসলিমা আফরোজ দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রেসক্রিপশন করে টেস্ট দেয়, হাসপাতাল থেকে রোগি ভাগিয়ে নেয়, গর্ভপাত, ডিএনসি, হোম ডেলিভারী করে। অথচ হাসপাতালের অধিকাংশ নার্স, ডাক্তার বিষয়টি জানলেও কোন এক অজানা কারণে নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন সকলেই।
তাসলিমা আফরোজের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি কিছু ইমারজেন্সী রোগিদের এমআর করাই, তবে প্রেসক্রিপশনতো সবাই করে। এতে দোষের কি। ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডাঃ শেখ কামাল হোসেন মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, তাসলিমা আফরোজের বিষয় নিয়ে এ পর্যন্ত কোন অভিযোগ আসেনি। যদি অভিযোগ আসে তাহলে ব্যবস্থা নিব। খুলনার সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, তাসলিমা আফরোজের বিষয় আমি কিছু জানিনা, জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নিব।