চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃফের আমরণ অনশনে বসছে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। প্রথম দফায় অনশনের ১৫ দিন পর আজ রবিবার দুপুর থেকে দ্বিতীয় দফায় স্ব স্ব মিল গেটের সামনের সড়কে এ কর্মসূচি শুরু হবে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে আমরণ গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে তিন দফা বৈঠকেও সূরহা না হওয়ায় গত ২৬ ডিসেম্বর বৈঠক শেষে পরিষদের নেতারা দ্বিতীয় দফায় আজ ২৯ ডিসেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেয়।
এদিকে অনশন কর্মসূচি সফলে গতকাল শনিবার সকালে স্ব স্ব পাটকলের গেটে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি ও পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহানা শারমিন তিনি বলেন, তিন দফায় বৈঠকে অনুষ্ঠিত হলেও কোন সুরহা না হওয়ায় শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে আর কোন আশ্বাস বা প্রতিশ্র“তি নয়, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন শ্রমিকরা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবে না তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খালিশপুর জুট মিলের প্রধান গেটের সামনে বিআইডিসি সড়কে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে চালিয়ে যাওয়া অনশনের প্যান্ডেল এখনো রয়েছে। ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, স্টার ও দৌলতপুর জুট মিলের প্যান্ডেলও রয়েছে। পাশ দিয়ে কিছু যানবাহন চলাচল করছে। তবে গতকাল রাত থেকে পুনরায় প্যান্ডেল ঠিকঠাক করার কাজ শুরু করা হয়। আজ দুপুর ২টা থেকে শ্রমিকরা অনশনে বসবে বলে জানিয়েছেন একাধিক শ্রমিক ও সিবিএ নেতা।
শ্রমিক নেতারা জানায়, গত ১৩ ডিসেম্বর রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে তিন দিনের জন্য আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকরা। রাত ১টার দিক থেকে একে একে খুলনার বিভিন্ন পাটকলের শ্রমিকরা ঘরে ফিরে যান। ওই রাতে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী। এ সময় তিনি ১৫ ডিসেম্বর শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেলে বিজেএমসি সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সভার কথা জানান। ওই সভা থেকে ভালো ফলাফল আসতে পারে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী শ্রমিক নেতাদের অনশন তুলে নিয়ে ঘরে ফিরে যেতে বলেন। ওই আশ্বাসের প্রেক্ষিতে প্রথম দফায় ১৭ ডিসেম্বর পযন্ত অনশন স্থগিত করেছিলেন শ্রমিকরা। ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাতভর শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের দফায় দফায় আলোচনা চলে।
এ সময় নেতারা চাইলেও শ্রমিকরা অনশন ভঙ্গ করতে নারাজ ছিলেন। তবে রাতেই তাঁরা বাড়িতে ফিরে যান। শ্রমিকরা বাড়িতে ফিরলেও অনশন স্থলের প্যান্ডেল সেভাবেই থেকে যায়। ১৪ ডিসেম্বর থেকে একে একে খুলনা অঞ্চলের সকল পাটকলের উৎপাদনে যোগ দেয় শ্রমিকরা। তবে ১৫ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠক ব্যর্থ হয়। পরে ২২ ডিসেম্বর পযন্ত সময় চাওয়া হয় শ্রমিক নেতাদের কাছে। ওইদিন শ্রম প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকেও ভালো কোনো ফল হয়নি। ওই বৈঠকে প্রতিমন্ত্রী ২৬ ডিসেম্বর পযন্ত সময় চান। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বরের বৈঠকে মজুরি কমিশনের বিষয়ে কোন সুরাহা না হওয়ায় ২৯ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শ্রমিক নেতারা।
এর আগে গত ২৩ নভেম্বর থেকে ১১ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা। বিক্ষোভ মিছিল, শ্রমিক ধর্মঘট, গেটসভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে ১০ ডিসেম্বর দুপুর থেকে আমরণ অনশনে বসেন তাঁরা। ওই কর্মসূচি খুলনা অঞ্চলে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে ৮টি পাটকলের শ্রমিকরা অংশ নেন। শুধু যশোরের কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা ওই কর্মসূচিতে অংশ নেননি।
অন্যদিকে গতকালের পৃথক পৃথক শ্রমিক সমাবেশে বক্তৃতা করেন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক সরদার আব্দুল হামিদ, মোঃ সোহরাব হোসেন, শাহানা শারমিন, মোঃ মুরাদ হোসেন, মোঃ সাইফুল ইসলাম লিটু, মোঃ আলাউদ্দিন, বিল্লাল হোসেন মল্লিক, দ্বীন মোহাম্মদ, হারুন অর রশিদ মল্লিক, হুমায়ুন কবির, কওসার আলী মৃধা, খলিলুর রহমান, মনিরুল ইসলাম, আঃ মান্নান, ইব্রাহীম ও আক্তার হোসেন প্রমুখ।