বাংলাদেশের অনেক পেশাজীবীদের নিয়েই সমালোচনা আছে৷ তবে যে পেশার দায়িত্বশীলতা বেশি, সেখানে ‘খারাপ’ থাকলে সমাজে এর প্রভাব ভয়াবহ। দেশে রয়েছে বহু ভুয়া সাংবাদিক। যারা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার জাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করে। এতে বিপাকে পড়ছেন পেশাদার সাংবাদিকরা।
আবার অনলাইনের যুগে একটা বুম (মাইক্রোফোন) আর একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলেই বলে যাচ্ছেন অনলাইন টিভি চ্যানেলের মালিক। চটকদার কথাবার্তা আর নানা কৌশলে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সরকার এসব বিষয় খুব একটা মনযোগ দিচ্ছে বলেও মনে করেন না অনেক সিনিয়র সাংবাদিকগণ।
আজ থেকে দেশে শুরু হচ্ছে কঠোর লকডাউন। এই লকডাউনে পেশার কারণে বিশেষ ছাড় পাচ্ছেন সাংবাদিকগণ। পরিচয়পত্র প্রদর্শনপূর্বক সাংবাদিকগণ তাদের পেশাগত কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন এই সময়ে। তবে এই পেশাগত কাজকে অপেশাদারে রূপ দিচ্ছে গুটি কয়েক অসৎ লোকজন। যারা এই কার্ডের (প্রেস কার্ড) প্রলভনে হাতিয়ে নিচ্ছে অনেকের কাছ থেকে টাকা। অনেকে ফাঁদে পা দিয়ে টাকা দিচ্ছেন কার্ডও নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তোভোগি জানান, ‘গত কয়েকদিন আগে Syful Islam Shuvo নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোষ্ট দিয়েছিল লকডাউনে অবাধ চলাচলের জন্য কেউ সাংবাদিক কার্ড নিতে আগ্রহী হলে তার সাথে যোগাযোগ করতে। পরবর্তিতে আমি যোগাযোগ করলে সে আমার কাছে ৫০০০ টাকা চায়। এত টাকা দিতে পারবনা বলে আর কার্ড নেয়া হয়নি।’
পরে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, ‘Syful Islam Shuvo’ আইডি থেকে একটি পোষ্ট করা হয় যেখানে লেখা ছিল, ‘লকডাউনে অবাধ চলাচলের জন্য সাংবাদিক কার্ডের বিকল্প নেই! কেউ কার্ড নিতে আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন !
এই পোষ্টের নিচে অনেক আগ্রহী ব্যক্তিদের মন্তব্য করতে দেখা যায়। সেখানে উক্ত ব্যক্তি তাদের ইনবক্সে যোগাযোগ করেন। পোষ্টটিতে সমালোচনাও করেন অনেকে। এতে বিব্রতকর অবস্থায় পরতে দেখা যায় অনেক সাংবাদিককে।
স্ট্যাটাসের বিষয়টি নজরে পরে বিডি২৪লাইভের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট নাহিদ হাসানের। তিনি বিষয়টির স্ক্রিনশর্ট নিয়ে একটি বিশদ স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে নিজের ওয়ালে। এরপরই শুরু হয় যত বিপত্তি। সাইফুল ইসলাম শুভ নামের ঐ ব্যক্তি নাহিদ হাসানের স্ট্যাটাসের নিচে নানা রকম অশ্লিল গালিগালাজ সহ হুমকি প্রদান শুরু করেন ।
এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন সাংবাদিক নাহিদ হাসান। বিষয়টির জন্য মিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ দিয়ে একটি সাধারণ ডায়রি করেন। জিডি নম্বর ২৩৫২।
এবিষয় কথা হয় বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) এর সভাপতি খায়রুল আলম রফিকের সাথে। তিনি জানান, ‘বিষয়টি সত্যি গুরুতর। সাংবাদিক পেশার নাম ভাঙ্গিয়ে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ। এতে বিব্রত অবস্থায় পরতে হচ্ছে মূলধারার সাংবাদিকদের। এবিষয় প্রশাসন তৎপর হতে হবে, না হয় ফেসবুকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ বাড়বে।’
সাইফুলের স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমককর্মী। তারা বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা, ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রেসকার্ড বিক্রি করা একটি গর্হিত অপরাধ।
জানা যায় এই সাইফুল ইসলাম দৈনিক দেশজগত নামের একটি পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার। পড়ছেন আইন পেশায়। নিজের রয়েছে নাম সর্বস্ব একটি অনলাইন টিভি চ্যানেল। নাম দিয়েছে ৪৭ টিভি। তার ফেসবুক টাইমলাইনে দেখা যায় বিভিন্ন পেশার কিছু লোকের সাক্ষাতকার ধারণ করে ফেসবুকে আপ করেছেন তিনি। তার ইউটিউব টিভি চ্যানেলের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে মাত্র ৬০ জন সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।
নিজেকে কলামিস্ট দাবি করা সাইফুল ইসলামকে বিডি২৪লাইভ বিষটির বিস্তারিত জানতে কল দিলে তিনি বলেন, ‘ও তো বেয়াদব, আমার ভারসিটির ছোট ভাই। ও বিষয়টা খারাপ কাজ করছে। এটা একটা ফানি পোষ্ট। আমরা ফানি ভাবেই বিষয়টি নিয়েছি। ও তো ভাব নিয়ে হিরো সাজতে চাইছে। এখানে মজা নেয়া কি আছে। আমি আইনের ছাত্র। সব বিষয় ধারণা আছে।’
বিষয়টি সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলামের নজরে দিলে তিনি বিষয়টি দেখছেন বলেও জানান।
সূত্র- বিডি২৪লাইভ