চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।তবে মাজেদকে গ্রেপ্তারে ভারতীয় গোয়েন্দারা বাংলাদেশকে সহায়তা করেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ডেকান হেরাল্ড। যদিও বাংলাদেশ কিংবা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ওই ধরণের কোনো যৌথ অভিযানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি।
উল্লেখ্য, বুধবার (৮ এপ্রিল) ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ এম হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তাকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তার ফাঁসির পরোয়ানা ইস্যু করেন। পরোয়ানা জারির আগে তাকে রায় পড়ে শোনানো হয়।তবে এর মধ্যেই তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছেন।
গত সোমবার ৬ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এ আসামি। পরদিন ডেকান হেরাল্ডের খবরে বলা হয়, ক্যাপ্টেন মাজেদকে গ্রেপ্তারের অভিযানে ভারত এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দারা যৌথভাবে কাজ করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে মিরপুর এলাকা থেকে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা গ্রেপ্তার করেন। ধারণা করা হচ্ছিলো ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার শাস্তি এড়াতে তিনি ভারতে পালিয়ে ছিলেন।
ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লির একটি সূত্র তাদের জানিয়েছে, ভারত এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তার ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত হতে এবং ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করতে একসঙ্গে কাজ করেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদকে খুঁজে বের করে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য শেখ হাসিনা সরকার ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছেন। মনমোহন সিং শেখ হাসিনাকে এক্ষেত্রে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এবার মোদি সেই কাজটি করলেন।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ারা জারি করেছেন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। লাল সালু কাপড়ে মোড়ানো মৃত্যু পরোয়ানার নথিটিও আদালত থেকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। এবার কারাবিধি অনুযায়ী রায় কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ। তবে এর মধ্যেই তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করেছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব শহীদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, আমরা আবেদন পেয়েছি। সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এর আগে দুপুরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর কড়া পাহারায় কারাগার থেকে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানার শুনানির পর আদালত আসামির বক্তব্য শোনেন। এ সময় আসামি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ আদালতের কাছে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মশোররফ হোসেন কাজল বলেন, তিনি অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মাজেদ। ৭৫ এ তার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। এরপরে তিনি কি করেছেন কোথায় ছিলেন জানতে চাওয়া হয়েছে। আদালত তার ব্যাপারে সুনিশ্চিত হয়ে দণ্ডাদেশ জারি করেছে।
আদালত কর্তৃক মৃত্যু পরোয়ানা জারিকৃত লালসালু কাপড়ে মোড়ানো নথি কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। জেলকোড অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ রায় কার্যকরের ব্যবস্থা করবেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ। ৪৫ বছর দেশের বাইরে পলাতক থাকার পর গত ৬ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় এই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।।২০০৯ সালে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে বাংলাদেশ পুলিশ।