‘ঘোস্ট গানস’ বা কাগজপত্রবিহীন অবৈধ অস্ত্র ঠেকাতে একটি আদেশ জারি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। অবৈধ এসব অস্ত্র বা বন্দুককে ঘোস্ট গানস বলা হয়েছে, কারণ সেগুলো বাসা-বাড়িতেই তৈরি করা হয় এবং সেগুলোর কোনো নিবন্ধনও নেই। এমনকি সেগুলো শনাক্তও করা সম্ভব হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রতি বন্দুক হামলার ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব হামলার ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আর এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জো বাইডেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘দেশে বন্দুক হামলার ঘটনা মহামারির রূপ নিয়েছে। এটা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের জন্য বিব্রতকর।’
আর তাই এসব ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নতুন নির্বাহী আদেশ জারি করছেন ডেমোক্র্যাটিক এই প্রেসিডেন্ট। এর অর্থ- অন্তত এই ক্ষেত্রে তাকে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে না। এই আদেশের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু বন্দুক বা অস্ত্রের ক্ষেত্রে নতুন নিয়মকানুন জারি, অস্ত্র ব্যবহারে ইচ্ছুক ব্যক্তির অতীত কর্মকাণ্ড যাচাই এবং সহিংসতা প্রতিরোধে স্থানীয় সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।
হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে বক্তব্য দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, বন্দুক ব্যবহার করে দেশে প্রতিদিন ১০৬ জনকে হত্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা নিশ্চিতভাবেই একটা মহামারি। এটাকে বন্ধ করতে হবে।’
বাইডেনের জারি করা নতুন এই নির্বাহী আদেশের ফলে তথাকথিত ঘোস্ট গানস বা নিবন্ধনহীন অস্ত্র কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কী হতে পারে তা জানাতে বা প্রস্তাব করতে ৩০ দিন সময় পাবে মার্কিন আইন বিভাগ।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সকল অস্ত্রেই কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। অবৈধ অস্ত্রের পাশাপাশি বৈধভাবে কেনা অস্ত্রেও লাগাম টানবেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক চলছে। দেশটিতে এই আইন পরিবর্তন খুব সহজ নয়। তাই কাজটি কঠিন হলেও একেবারে বসে না থেকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণের পথেই হাঁটছেন বাইডেন।
এদিকে বন্দুক হামলা ও অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের বৃহস্পতিবারের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ব্রায়ান শহরের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আবারও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে এক ব্যক্তি নিহত ও আরও পাঁচজন আহত হন।
ব্রায়ান পুলিশের প্রধান এরিক বাস্কে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হামলার ঘটনা ঘটা ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম কেন্ট মুর ক্যাবিনেটস। সেখানকার এক স্টাফ বন্দুক দিয়ে এই হামলা চালান। সন্দেহভাজন অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, হামলায় এক ব্যক্তি নিহত ও অপর চারজন আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে টেক্সাসের ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটি জানিয়েছে, অভিযুক্ত হামলাকারীকে আটকের আগে তাকে অনুসরণ করার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য গুলিতে আহত হন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হলেও স্থিতিশীল বলে জানানো হয়।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের ইয়র্ক কাউন্টিতে গোলাগুলিতে একই পরিবারের পাঁচ জন নিহত হওয়ার খবর জানায় সিএনএন। মার্কিন কর্তৃপক্ষ একে ‘গণহত্যার উদ্দেশে গুলির’ ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে।
স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় রক হিল নামক এলাকায় এই গুলির ঘটনায় এক চিকিৎসক, তার স্ত্রী ও তাদের দুজন নাতি-নাতনি প্রাণ হারিয়েছেন বলে টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় নিশ্চিত করেছে ইয়র্ক কাউন্টির শেরিফ অফিস।
তাদের গৃহকর্মী জেমস লুইসইও গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন জো বাইডেন।
তবে অহরহ এমন ঘটনার পরও যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকানরা সবসময়ই মার্কিনিদের কাছে বন্দুক বা অস্ত্র রাখার পক্ষে। তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো পদক্ষেপ দেশটির নাগরিকদের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের শামিল।