বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চেকপোস্টের নামে বাস মালিক সমিতির লোকজন যাত্রীদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবৈধভাবে চেকপোস্ট বসিয়ে মহাসড়কে চলাচল করা থ্রি-হুইলার (মাহিন্দ্র) থামিয়ে চালকদের মারধর এবং গাড়ি ভাঙচুর করায় মাহিন্দ্র এবং বাস শ্রমিকদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। আর এতে ভোগান্তিতে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা।
সর্বশেষ শুক্রবার (৭ আগস্ট) ভোরে দু’পক্ষের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন জানা গেছে। সংঘর্ষের পর টানা তিন ঘণ্টা বাস চলাচল বন্ধ রাখেন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ। পরে ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
যদিও শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টা থেকে ৬টার মধ্যে সংঘটিত এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ করেছে। এ নিয়ে দুই পক্ষই মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে। তবে রোববার বাস মালিক এবং থ্রি-হুইলার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টির স্থায়ী সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন।
মাহিন্দ্রা চালকরা অভিযোগ করে বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলের বিষয়টি তদারকি করে ট্রাফিক বিভাগে। কিন্তু তাদের অবর্তমানে ভোর ৬টার আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে মাহেন্দ্র চালক এবং যাত্রীদের হয়রানির পাশাপাশি চাঁদাবাজি করে বাস মালিক সমিতির লোকজন। কোন কোন সময় তারা মাহিন্দ্রা থামিয়ে চাকা ফুটো করে দেয় এবং চালকদের মারধর করে।
শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ঢাকা থেকে আসা লঞ্চ যাত্রীদের নিয়ে তিনটি মাহিন্দ্রা বাকেরগঞ্জ ও নলছিটির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ওই তিনটি মাহিন্দ্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে যাওয়ার পথে মালিক সমিতির চেকপোস্টে থাকা লোকজন তাদের গতিরোধ করে। পরে মহাসড়কে যাত্রী পরিবহনের অপরাধে মাহিন্দ্রা চালক লাবলু, মনোয়ার এবং নূরুকে মারধরসহ যাত্রী থাকাবস্থায় তিনটি মাহিন্দ্রার সামনের গ্লাস ভাঙচুর করে। ঘটনাটি রূপাতলীতে অবস্থানরত মাহেন্দ্র শ্রমিকদের মধ্যে জানাজানি হলে তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তবে ওই সময় কোন বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি।
তারা আরও বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচলে বাঁধা কিংবা চেকপোস্ট বসালে পুলিশ বসাবে। কিন্তু সেখানে বাস মালিক সমিতি অবৈধভাবে চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রী এবং চালক উভয়কেই হয়রানি করছে। তারা নিজেরা আইন হাতে তুলে নিয়ে চালকদের মারধর করছে। শুক্রবারের ঘটনায় আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তবে সেখানে পুলিশের কতটুকু সহযোগিতা পাওয়া যাবে সে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তারা।
রূপাতলীস্থ বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শুক্রবারের ঘটনাটি পুরোপুরি সাজানো এবং পূর্বপরিকল্পিত। কি কারণে তারা এই হামলা করেছে সেটা আমার বোধগম্য নয়। শুক্রবার সকালে মতিন হাওলাদার ও সুলতান হাওলাদার নামের দুই বাস মালিককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এসময় ৫টি বাসের গ্লাস ভাংচুর করে তারা। এতে বাসে থাকা কয়েকজন যাত্রী আহত হন। তারা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। গুরুতর আহত দুজন বাস মালিককে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, হামলার ঘটনা বাস মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে সকাল ৭টার দিকে তারা দক্ষিণাঞ্চলের সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এসময় তারা মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। পরে ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে সকাল সোয়া ১০টার দিকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। পাশাপাশি আগামী রোববার দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মহাসড়কে অবৈধভাবে চেকপোস্ট বসানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের বাসে যাত্রী কম ওঠে। তার মধ্যে মাহিন্দ্রাগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। অথচ মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ। এগুলো চলাচল করা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের বাঁধা দেয় না। এ কারণে আমাদের সমিতি চেকপোস্ট বসিয়ে বিষয়টি তদারকি করে।
তদারকির নামে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান বাস মালিক সমিতির এই নেতা।
এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ। চলাচল করলে সেটা দেখা বা ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব পুলিশের। বাস মালিক সমিতির চেকপোস্ট বসিয়ে থ্রি-হুইলার চলাচলে বাঁধা দেয়ার এখতিয়ার নেই। তারা পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারে। এরপরেও পুরো বিষয়টি নিয়ে রোববার বাস ও মাহিন্দা মালিকদের আমার কার্যালয়ে ডেকেছি। সেখানে পুরো বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। আশা করছি, মহাসড়কে বাস এবং থ্রি-হুইলার চলাচল নিয়ে দীর্ঘদিনের যে দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে তা ওই বৈঠকের মাধ্যমে সমাধান হবে।