সাতক্ষীরা: জন্ম অন্ধ বশির আহম্মেদ (৩৬)। রাস্তায় রাস্তায় বাঁশি বাজিয়ে মানুষের করুণা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। একদিন বাঁশি বাজানোর পর ৩/৪দিন থাকতে হয় বিশ্রামে। আর এতে দারুণ কষ্টের সময় পার হয় তার পরিবারের।
বলছিলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুশখালি গ্রামের মৃত আফসার আলীর ছেলে বশির আহম্মেদের কথা। সাত ভাই বোনের ছোট বশির জন্ম অন্ধ হলেও বাকি ৬ জন স্বাভাবিক। সে কারণে ছোট থেকে সে পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েন তিনি। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পারিবারিক ভাবে তাকে বিবাহ প্রদান করা হয় এক প্রতিবন্ধী নারীর সাথে। এরপর তাকে আলাদা করে দেওয়া হয় ভাইয়ের পরিবার থেকে। এতে তাদের জীবনে নেমে আসে আরো অন্ধকার। একজন জন্ম অন্ধ অপর জন শারীরিক প্রতিবন্ধী। খুবই কষ্টে তাদের দিন অতিক্রম হতে লাগে। এর আগে স্থানীয় একজনের কাছ থেকে বশির আহম্মেদ বাঁশির সুর শেখে। আর সেই সুর দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করে জীবিকা নির্বাহের পথ খোঁজেন তিনি।
এক জোড়া বাঁশি কিনে রাস্তায় রাস্তায় বাজাতে শুরু করেন বশির। অন্ধ হওয়ায় পথ চলা তার জন্য ব্যাপক হুমকি স্বরূপ হয়ে পড়ে। লাঠির সাহায্যে অনুমান করে পায়ে হেটে হেটে শুরু হয় পথচলা। এক সময় এলাকা ছেড়ে জেলা শহর ও যশোর, খুলনায় চলে যান বশির। বর্তমানে সে জেলা সহ জেলার বাহিরে বিভিন্ন এলাকায় বাজারে বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে ২/৩ শত টাকা রোজগার করেন। কখনো রাত হয়ে গেলে রাস্তার পাশে শুয়ে রাত কাটে তার। আর এ থেকে কোন রকম চলে তার সংসার। পাশপাশি তিনি সমাজসেবা দপ্তর থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর তালিকাভূক্ত হওয়ায় ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু ২ কন্যা সহ মোট ৪জনের সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তবে বশির ও তার স্ত্রী প্রতিবন্ধী হলেও কন্যারা পুরোপুরি স্বাভাবিক। শত কষ্টের মধ্যেও বড় কন্যাকে ¯ু‹লে পাঠায় সে।
বশির উদ্দীনের বাড়িতে গেলে দেখা মেলে তার মানবেতার জীবন যাপন। কথা হয় জন্ম অন্ধ বশির আহম্মেদের সাথে। তিনি জানান, জন্ম থেকে চোখে দেখতে পারেন না। তাই অন্যের অনুগ্রহ নিয়ে জীবন যাপন করেন তিনি। বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে তাদের থেকে ২/১ টাকা করে দিনে ২শ থেকে ৩শ টাকা উপর্জন করেন। কিন্তু একদিন বাঁশি বাজালে তাকে বিশ্রাম নিতে হয় ৩/৪দিন। এর ফলে কখনো অনাহারে দিন পার হয় তাদের। তবে শীতের মৌসুমে তাকে বিভিন্ন গানের আসরেও দাওয়াত করা হয় বাঁশির সুর শোনারোর জন্য। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বেশিরভাগ অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় আরো বেশি কষ্টের সময় পার হচ্ছে তার।
তবে, বশিরের বাঁশির সুর শুনলে সবাই মুগ্ধ হন। এসব প্রতিভাবান মানুষদের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিলে তারাও সম্পদে পরিণত হতে পারে বলে মনে করেন সুধী সমাজ।