মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের কর্মদক্ষতা এবং সফলতা বিবেচনা করে বাংলাদেশ স্পেশাল ফোর্স এবং কুইক রি-অ্যাকশন ফোর্সের নতুন জনবল এবং সরঞ্জামাদি বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘ।
আজ মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে গত ৯ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও বেশি বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী মোতায়েনের আহ্বান জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
জাতিসংঘের পিস অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ-পিয়েরে ল্যাক্রুয়া এবং অপারেশনাল সাপোর্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল অতুল খারের সঙ্গে ওই বৈঠকে এ আহ্বান জানান সেনাবাহিনী প্রধান।
এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রতি বাংলাদেশের অবিচল প্রতিশ্রুতি ও অব্যাহত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ও জাতিসংঘ সদর দফতরের শান্তিরক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিক সংখ্যক বাংলাদেশি অফিসারদের পদায়নের জন্যও অনুরোধ জানান জেনারেল আজিজ আহমেদ।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী জোগানদাতা দেশ। বাংলাদেশ এখন জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী জোগানে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরানের মধ্যে সশস্ত্র সহিংসতা বন্ধে নিয়োজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘে বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম শুরু হয়। গত তিন দশকে যেসব দেশে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কাজ করেছেন, কর্ম আর দক্ষতায় তা অনন্য হয়ে উঠেছে।
জাতিসংঘের দেয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০টি পৃথক মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা কাজ করছেন। মোট ৭ হাজার ২৪৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মধ্যে সেনা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনের নীল পতাকা হাতে আর নীল হেলমেট পরে মিশনগুলোয় নানা কাজে নিয়োজিত আছেন এসব শান্তিরক্ষী। নিরাপত্তা প্রদান থেকে শুরু করে সড়ক নির্মাণ, সহিংস দেশগুলোর সরকার ও জনগণকে সহযোগিতা করার নিরলস কাজের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা সুনাম অর্জন করেছেন।
হাইতির শান্তি মিশন বাংলাদেশ পুলিশের নারী সদস্যদের নিয়ে গঠন করা হয়েছিল। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত এ শান্তি মিশন ভূমিকম্পবিধ্বস্ত হাইতির পুনর্গঠনকাজ এবং দেশটির বিরাজমান সহিংসতার মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে মিশন সমাপ্ত করে।
বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকায় শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত থেকেছেন। সেন্ট্রাল আফ্রিকার দেশগুলো, কঙ্গো, সুদানের দাফুরসহ কঙ্গোর বুনিয়া, ইটুরি প্রদেশে কাজ করেছেন বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা।
বিশ্ব শান্তির অন্বেষণে এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১৩২ জন শান্তিরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের এ আত্মত্যাগ এক গর্বের এবং অহংকারের উপাখ্যান।