দুনিয়া জুড়ে অস্থিরতা, সন্ত্রাস ও অশান্তির বদলে ভারত ও বাংলাদেশ স্থিতিশীলতা ও শান্তি চায় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় দিনে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের সভায় মোদি এসব কথা বলেন।
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে সুধী সমাবেশে এ কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সাতক্ষীরায় যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পূজা দেওয়ার পর টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রধান তীর্থপীঠ শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ ঠাকুর মন্দিরে যান মোদি। সেখানে পূজা দেন। পরে তিনি ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও মতুয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। সারা দেশ থেকে সাড়ে তিন শ মতুয়া প্রতিনিধি নরেন্দ্র মোদির এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মস্থান ওড়াকান্দিকে একদিক থেকে ‘ভারত ও বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থক্ষেত্র’ উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘আমাদের সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, মনের সঙ্গে মনের সম্পর্ক।’
বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিষয়টিকে সামনে এনে মোদি বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশ- উভয় দেশই নিজেদের বিকাশ, নিজেদের প্রগতির চেয়ে সমগ্র বিশ্বের উন্নতি দেখতে চায়। উভয় দেশই পৃথিবীতে অস্থিরতা, সন্ত্রাস ও অশান্তির পরিবর্তে স্থিতিশীলতা, প্রেম ও শান্তি চায়।’
দুই দেশের অগুণতি মানুষের কল্যাণে ভারত-বাংলাদেশকে এক হয়ে পথ চলার আহ্বান জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ ভারত এবং বাংলাদেশের সামনে যে একই ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার সমাধানের জন্য শ্রী শ্রী হরিচাঁদ দেবজির অনুপ্রেরণা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুদেশের একজোট হয়ে প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা উচিত। এটি আমাদের কর্তব্য। এটি দু দেশের কোটি কোটি জনগণের কল্যাণের পথ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে উঠে আসে করোনার টিকা প্রসঙ্গটিও। বলেন, বাংলাদেশের জনগণের কাছে করোনা প্রতিরোধী টিকা পৌঁছে দেয়া ভারতের দায়িত্ব।
মোদি বলেন, করোনা মহামারির সময় ভারত এবং বাংলাদেশ- উভয় দেশেই নিজেদের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছে। আজ উভয় দেশ এই মহামারির জোরদার মোকাবেলা করছে। মেড ইন ইন্ডিয়া ভ্যাকসিন বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে যাতে পৌঁছায় সে জন্য ভারত একে নিজেদের কর্তব্য মনে করে কাজ করছে।
বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় ভারতকে সহযাত্রী আখ্যা দিয়ে ভারতের সরকার প্রধান বলেন, ‘ভারত আজ সকলের সঙ্গে সকলের বিকাশ এবং সকলের বিশ্বাস- এই মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আর বাংলাদেশ এতে সহযাত্রী। সেই বাংলাদেশে আজ বিশ্বের সামনে বিকাশ আর পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী উদাহরণ পেশ করেছে। আর সেই প্রচেষ্টায় ভারত আপনাদের সহযাত্রী।’
একবিংশ শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ সময়কালে নিজেদের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে মোদি বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশ উন্নতি এবং প্রেমের পথে বিশ্বের পথপ্রদর্শন করতে থাকবে।
ওড়াকান্দিতে শিক্ষার অভিযানে ভারতে অংশীদার হতে চায় জানিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের জন্য নিজের ঘোষণা মেলে ধরেন নরেন্দ্র মোদি।
তিনি বলেন, ওড়াকান্দিতে ভারত সরকার মেয়েদের মিডল স্কুল আপগ্রেড করবে। নতুন আধুনিক সুবিধা দেবে। একই সঙ্গে ভারত সরকার এখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করবে।
মোদি বলেন, ‘এটি ভারতের কোটি কোটি মানুষের পক্ষ থেকে শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এই কাজে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’
ভারতের সংসদে শান্তুনু ঠাকুরকে নিজের সহযোগী জানিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের উদ্দেশে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘বয়সে উনি আমার চেয়ে ছোট। কিন্তু আমিও উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। এর কারণ হলো উনিও শ্রী শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের মহান শিক্ষা নিজের জীবনে গ্রহণ করেছেন। উনি খুবই কর্মঠ। সমাজের লোকেদের জন্য সংবেদনশীলতার সঙ্গে দিনরাত প্রচেষ্টা করেন।’
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার বাংলাদেশ সফরে এসে ওড়াকান্দি আসার ইচ্ছে থাকলেও আসতে পারেননি মোদি। সেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করেন তিনি।
মোদি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানে ভারতের ১৩০ কোটি ভাইবোনের পক্ষ থেকে আপনাদের জন্য শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি। আপনাদের সকলকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হওয়ায় অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।
বলেন, ‘আমার মনে আছে পশ্চিমবঙ্গের ঠাকুরনগরে আমি যখন গিয়েছিলাম, সেখানে আমার মতুয়া ভাই বোনেরা আমাকে নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মতো অনেক ভালোবেসেছেন। বিশেষ করে বড় মা। বড় মার স্নেহ, মায়ের মতো তার আশীর্বাদ, সেটি আমার জীবনের এক অমূল্য সময় ছিল।’
ভারতের সরকার প্রধান বলেন, ‘পশ্চিমবাংলা ঠাকুরনগর থেকে বাংলাদেশের ঠাকুর বাড়ি পর্যন্ত একই রকম শ্রদ্ধা রয়েছে, একই রকমের আস্থা রয়েছে, একই রকমের অনুভূতি রয়েছে।’
এসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য নেতৃত্বের কথা আবারও স্মরণ করে মোদি বলেন, ‘এখানে আসার আগে আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে গিয়েছি। সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছি। শেখ মুজিবুর রহমানজির নেতৃত্ব, উনার ভিশন, আর বাংলাদেশের লোকেদের ওপর উনার বিশ্বাস এক উদাহরণস্বরূপ।’
মোদি বক্তব্য শেষ করেন ‘জয় বাংলা, জয় হিন্দ, ভারত–বাংলাদেশ মৈত্রী চিরজীবী হোক’ বলে।