বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচিং স্টাফে এক সময় বড় একটি সংখ্যা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটারদের। এখনকার কোচিং প্যানেলেও সহকারী কোচ হিসেবে আছেন নিক পোথাস, তিনি নিজেও একজন প্রোটিয়া। ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের শেষ পর্যন্ত টাইগারদের প্রধান কোচ ছিলেন রাসেল ডোমিঙ্গো। তার বিদায়ের ঘটনাও বেশ বিতর্কিত ছিল। নতুন করে তার মন্তব্য সেই বিতর্ক নতুন করে উসকে দিতে পারে। কারণ তিনি বাংলাদেশে থাকাকালীন কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা সামনে এনেছেন।
ইউটিউবের ‘পিচসাইড পডকাস্ট’ নামে এক অনুষ্ঠানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ দলকে কোচিং করানোর বিষয়ে তুলনামূলক কিছু চিত্র তুলে ধরেন ডোমিঙ্গো। এমনকি উপমহাদেশীয় (বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তানসহ অন্যান্য) দলে কোনো কোচ আসতে চাইলে তাদের প্রতিও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, ‘যেকোনো কোচকেই আমি উৎসাহ দিব উপমহাদেশে কোনো না কোনো সময়ে কোচিং করানোর জন্য। কারণ উপমহাদেশে কোচিংয়ের মতো কিছু নেই। এটা বিশৃঙ্খল, এটা নির্মম।’
উপমহাদেশে কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা অনেক ভিন্ন বলেও মত সাবেক টাইগার কোচের, ‘কখনও আপনার সস্তা মনে হবে যে এটা কীভাবে কাজ করল অথবা তারা কীভাবে এই দলটা নির্বাচন করল। কিন্তু তবুও কাজ চলে, তারা নিজেদের দিনে যেকোনো দলকে হারাতে পারে। তো এরকম পরিবেশে কোচিং করানো দারুণ শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা যেকোন কোচের জন্য। কারণ দক্ষিণ আফ্রিকায় এমন কিছুই অভিজ্ঞতা হয়নি আমাদের।’
এরপর বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকায় কোচিংয়ের তুলনা করে বলেন, ‘কোচিংয়ের ২৫ বছর কেটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। উপমহাদেশের কোচিংয়ের সঙ্গে কোন কিছুর তুলনা হয় না। যেমন আবেগ, সমর্থন, মিডিয়ার মনোযোগ, জেতার জন্য মরিয়া থাকা এসব দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় একেবারে ভিন্ন পর্যায়ে। আপনাকে অবশ্যই বুঝতে হবে বাংলাদেশের মতো জায়গায় ২০ কোটি মানুষের বসবাস, এবং শুধুমাত্র ক্রিকেটেই তাদের আগ্রহ। আর ছয় কোটির আফ্রিকায় এটা ছাড়াও ফুটবল, বক্সিং ও রাগবির মতো খেলা আছে।’
বাংলাদেশে টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসা পাননি বলেও একপর্যায়ে মন্তব্য করেন ৪৯ বছর বয়সী এই কোচ, ‘আমার একটা ম্যানেজমেন্ট দল ছিল সেখানে (দক্ষিণ আফ্রিকা দলের প্রধান কোচ থাকার সময়), যেটিতে আমি শতভাগ বিশ্বাস রেখেছি। আমি জানতাম আমার ওপর তাদের শতভাগ সমর্থন আছে। বাংলাদেশে আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত না কখনোই। কারণ আপনি একটা (আলাদা) ম্যানেজমেন্ট দল পেয়ে থাকেন। সেখানে আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত না যে এই লোকের এজেন্ডা কী, সে কী করছে, আমি কী এই সিদ্ধান্ত নিতে তার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারি বা সে যা বলছে আমি কি তাকে বিশ্বাস করতে পারি। দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে ওই সময়ের সংস্কৃতি ও পরিবেশের হিসেবে বাংলাদেশে ছিল অনেক ভিন্ন।’
এর আগে ২০১৯ সালে রাসেল ডোমিঙ্গো প্রধান কোচ হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। টাইগারদের সঙ্গে ছিলেন ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আফ্রিকান নিল ম্যাকেঞ্জি, অ্যাশওয়েল প্রিন্স, অস্ট্রেলিয়ার জেমি সিডন্স থেকে শুরু করে ওটিস গিবসন, শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট, অ্যালান ডোনাল্ডরা তার প্যানেলে ছিলেন ভিন্ন ভিন্ন সময়। এর আগে ডোমিঙ্গো কাজ করেছেন প্রোটিয়াদের কোচিং স্টাফে। প্রথমে সহকারী কোচ হিসেবে থাকলেও, ২০১৩ সাল থেকে প্রধান কোচের চাকরি পান। এই পদে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রোটিয়াদের সঙ্গে ছিলেন ডোমিঙ্গো।