বিএইচ সজল :: খরগোশ বা গিনিপিগ গোত্রীয় পাটাগোনিয়ান মারা একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। সামনের পায়ের তুলনায় পেছনের পা দুটো বেশ দীর্ঘ। সামনের দুই পায়ে চারটি আঙুল, পেছনের পায়ে তিনটি করে আঙুল হয়। গায়ের রং সাধারণত বাদামি। বাংলাদেশে এই প্রথম জন্ম নিলো আর্জেন্টিনার পাটাগোনিয়ান মারা।
মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) বেলা ১২টায় খুলনার বন্যপ্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে উদ্ধারকৃত ছয়টি আর্জেন্টিনার পাটাগোনিয়ান মারার মধ্যে একটি বাচ্চা প্রসব করে। বাচ্চাটি এখন সুস্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তা।
গত ৩ মার্চ কলারোয়ার তুষখালী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় সাতটি পাটাগোনিয়ান মারা উদ্ধার করে বিজিবি। আলাদা আলাদা ব্যাগে প্রাণীগুলোকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পাচারকারীরা বিবিজির উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যাগগুলো ফেলে পালিয়ে যান। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পাঁচ মাস প্রাণীগুলো বিজিবি’র কাছে ছিল। সেখানে একটি প্রাণী মারা যায়। গত ২২ আগস্ট বিজিবি ছয়টি প্রাণী বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।
খুলনা বণ্য প্রাণী উদ্ধার ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের ফরেস্টার আবু নাঈম মোহাম্মদ নুরুন্নবী বলেন, ২৩ আগস্ট বিজিবি ছয়টি পাটাগোনিয়ান মারা আমাদের হস্তান্তর করে। আজ সকালে একটি বাচ্চা প্রসব করেছে। সেটি ভালো রয়েছে। তার মায়ের দুধ খাচ্ছে।
আর্জেন্টিনার পাটাগোনিয়ান মারা প্রাণীটি নিয়ে এখন কী করা হবে, সেই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছেন, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, প্রাণীগুলোকে খুলনার বন্য প্রাণী রেসকিউ সেন্টারে পাঠানো হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএন এর তালিকা অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে এটি বিপদাপন্ন প্রাণী। এ ধরনের প্রাণী আমদানি-রপ্তানি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
তার ধারণা, বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক পাচারকারী চক্র প্রাণীগুলো ভারতে পাচার করছিল। এর আগে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ হয়ে ভারতে পাচারকালে জিরাফ, জেব্রা, সিংহের শাবক উদ্ধার করা হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের রিসোর্টের চিড়িয়াখানায় এসব প্রাণী রাখা হয়। এই প্রাণীগুলো আর্জেন্টিনার পাটাগোনিয়ান মারা বলে প্রথম শনাক্ত করেছেন গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাদ মোহাম্মদ জুলকারনাইন।
তিনি বলেন, এই প্রাণী সাধারণত ২৭ দশমিক ৫ ইঞ্চি বা ৭০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়। চোখ আর কানের তুলনায় লেজটা বেশ ছোট। মাত্র দেড় থেকে দুই ইঞ্চি লম্বা লেজ হয়। ওজন ৮ থেকে ১৬ কেজির মতো। এরা তৃণভোজী। সাধারণত হাঁটাহাঁটি করে চলাফেরা করলেও সুযোগ পেলেই খরগোশ বা ক্যাঙারুর মতো লাফালাফি করে। বছরে এক থেকে দুবার বাচ্চা দেয় তারা। যত্ন পেলে তাদের আয়ু ১৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে।প্রাণীগুলো কবে, কারা, কীভাবে দেশে এনেছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বিজিবির সাতক্ষীরা ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল মাহমুদ বলেন, গত ৩ মার্চ কলারোয়ার তুষখালী সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচারের সময় প্রাণীগুলোকে উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আলাদা আলাদা ব্যাগে প্রাণীগুলোকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পাচারকারীরা বিবিজির উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যাগগুলো ফেলে পালিয়ে যান।
ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন সোসাইটির এদেশীয় প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কেবল বন্য প্রাণীগুলো উদ্ধার করলেই হবে না। এই ব্যবসার সঙ্গে কারা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। নইলে এই অপরাধ দমন করা যাবে না।