সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শুক্রবার , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বাংলাদেশ ক্রিকেটের দীর্ঘশ্বাসের একাদশ | চ্যানেল খুলনা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের দীর্ঘশ্বাসের একাদশ

চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃছোট্ট চোখে বিরাট স্বপ্ন, যেতে হবে ওই চূড়ায়। পাড়ি দিতে হবে অনেক পথ। যে পথে বাঁক বদল হয়, শেষ হয় জাতীয় দল নামের গন্তব্যে। সেখান থেকে আবার নতুন পথচলা শুরু। সেই পথচলায় অনেকেই দাপুটে, অনেক আবার পা হড়কে পতিত হন নিকষ কালো অন্ধকারে।

গুটিগুটি পা ফেলা আর স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে এই যাত্রা। কিন্তু স্বপ্নকে ছোঁয়ার পর অনেকেই হারিয়ে ফেলেন কক্ষপথ। অপার সম্ভাবনা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেও নিভে যান দপ করে। কিংবা যথেষ্ট সুযোগের অভাবে সামর্থ্যের পুরোটা দেওয়ার আগেই হয়ে ওঠেন অতীত স্মৃতি। আফসোস, আক্ষেপ নিয়ে ইতি টেনে ফেলেন ক্যারিয়ারের।

বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন ক্রিকেটার কম নেই। তালিকাটা বেশ লম্বাই, দীর্ঘশ্বাসও তাই দীর্ঘ। এই দীর্ঘশ্বাস প্রতিভা অপচয়ের, এই দীর্ঘশ্বাস মেধাবীদের কাছ থেকে সেবা না পাওয়ার। কয়েকটি নাম বললেই বুঝে ফেলা সম্ভব কোন সব ক্রিকেটারের কথা বলা হচ্ছে। এই তালিকার ক্রিকেটাররা হলেন মেহরাব হোসেন অপি, আফতাব আহমেদ, তালহা জুবায়ের, শাহরিয়ার নাফিস, এনামুল হক জুনিয়ররা।

হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন; এদের নিয়ে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন থাকলেও হয়তো পূরণ হয়নি ৫০ ভাগও। এমন ক্রিকেটারদের নিয়ে একাদশ তৈরি করেছে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। কেন দীর্ঘ হয়নি পথ, সেই উত্তরও জানার চেষ্টা করা হয়েছে। এই একাদশের ক্রিকেটাররা তাদের উপলব্ধি জানিয়েছেন, বেশিরভাগ ক্রিকেটারের মুখেই যথেষ্ট সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপ। দেখে নেওয়া যাক দীর্ঘশ্বাসের এই একাদশে কোন ক্রিকেটারদের জায়গা।

মেহরাব হোসেন অপি

বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ব্যাটিং স্টাইল ছিল অনুকরণীয়, ২২ গজে ছিলেন খুব সাহসীও। অনায়াসে খেলে ফেলতেন কঠিন সব শট। যা তখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে অপরিচিত। বাংলাদেশের সেই সময়ের দলের মধ্য থেকে যাকে বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান ভাবা হতো, তিনি মেহরাব হোসেন অপি।

প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভার তালিকা করলে ওপরের দিকে থাকবেন বাংলাদেশের সাবেক এই ব্যাটসম্যান। তার মেধা, সামর্থ্য জানান দিচ্ছিল, লম্বা রেসের ঘোড়া হবেন দলে ঢুকেই খুব দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়ে যাওয়া অপি। অথচ তার ক্যারিয়ার থেমে গিয়েছিল মাত্র ৫ বছরে। ৯ টেস্ট ও ১৮ ওয়ানডে খেলেই ইতি টানতে হয়েছিল ক্যারিয়ারের।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ১৯৯৮-২০০৩, ৫ বছর

ম্যাচ: ৯ টেস্ট এবং ১৮ ওয়ানডে

মেহরাব হোসেন অপির উপলব্ধি: ২০০৩ সালে আমি শেষবারের মতো খেলি। পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার কারণেই বাদ পড়া। বাদ পড়ার পর চেষ্টা করেছি। কিন্তু আর ফেরা হয়নি। বাদ পড়ার পর আশানুরূপ পারফরম্যান্স করতে পারিনি আমি। জাতীয় দলে আর ফিরতে না পারার অন্যতম কারণ এটাই। জাতীয় দলে তখন যারা খেলছিল, তাদের ঘরোয়া লিগের পারফরম্যান্স আমার চেয়ে ভালো ছিল। এ কারণে তাদের টপকে আমার জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া হয়নি।

নাফিস ইকবাল

তামিম ইকবালের বড় ভাই নাফিস ইকবাল। মেধা, সামর্থ্যের দিক থেকে কেউ কেউ তামিমের চেয়েও এগিয়ে রাখেন নাফিসকে। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আলোচনায় ছিলেন সাবেক এই ওপেনার। বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই নাফিসকে বলা হচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ।

শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, ভবিষ্যৎ অধিনায়কও ভাবা হয়েছে সাবেক ডানহাতি এই ব্যাটসম্যানকে। বিশেষ করে লঙ্গার ভার্সনে নাফিসের লম্বা পথ হবে, এমনটা ভাবা হয়েছিল। বয়সভিত্তিক পর্যায় থেকেই তার পরিপক্কতা দারুণ ছিল। কিন্তু এত সম্ভাবনা নিয়ে শুরু করেও নাফিসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র ২ বছরেই থেমে যায়। এ পথে ইনজুরি একটা বাধা ছিল। তবে ক্যারিয়ার বড় না হওয়ার পথে সবচেয়ে বাধা ছিল সুযোগ না পাওয়ার বিষয়টি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৪-০৬, ২ বছর

ম্যাচ: ১১ টেস্ট ও ১৬ ওয়ানডে

নাফিস ইকবালের উপলব্ধি: সবচেয়ে বড় কারণ আমার ইনজুরি। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ইনজুরি ছিল। যে কারণে দেড় দুই বছর আমি মাঠ থেকে পুরোপুরি বাইরে ছিলাম। কেউ যখন দুই-এক বছর যখন খেলে না, তখন ফিটনেস স্বাভাবিকভাবেই একটু নিচের দিকে নেমে আসে। ফিরে পেতে সময় লেগেছিল। এর মাঝে দুই-একবার সুযোগ পেতে পারতাম, কিন্তু সুযোগ পাইনি। হয়তো সুযোগ পেলে ওখান থেকে আবার ক্যারিয়ার গড়তে পারতাম।

ইনজুরির পর সেভাবে সুযোগ পাইনি। এটার জন্য আমি প্রথম ইনজুরিকে দুষি। আবার ইনজুরির আগে আমার সেরা সময়ে আমি যদি আরেকটু কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে ভালোভাবে গুছিয়ে নিতাম, হয়তো আরও ভালো খেলোয়াড় হতাম। এই দুটি জিনিসকে দোষ দেই। তবে ইনজুরির পরও ম্যাচ খেলার সুযোগ দেওয়া হয়। আমার কয়েকটা ইনিংস থাকার কারণেই মানুষ আমাকে এখনও মনে রেখেছে। তো ওই বিশ্বাসটা যদি সে সময় আমার ওপর কেউ দেখাতো যে ওকে আরেকবার দেখা যাক, তাহলে ভালো হতে পারত। কিন্তু ওই সুযোগটা হয়নি।

শাহরিয়ার নাফিস

নাফিস ইকবাল, শাহরিয়ার নাফিসদের শুরু একই সময়ে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ছিলেন ‘কমপ্লিট প্যাকেজ।’ কেবল ব্যাটিং নয়; কথাবার্তা, শিক্ষা, চালচলন, চুলের স্টাইল বা পোশাকে আধুনিকতার ছোঁয়া নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেকের পর দলে জায়গা করে নিতে সময় নেননি তিনি।

অভিষেকের পর থেকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন শাহরিয়ার নাফিস। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার ব্রেট লি, ম্যাকগ্রাদের সামলে ৪৭ রান করেন তিনি। এর এক ম্যাচ পর অজিদের বিপক্ষে করেন ৭৫ রান। তার পর থেকে রানের ফুলঝুরি ফুটতে থাকে তার ব্যাটে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক বছরে হাজার করেন নাফিস।

ব্যাট হাতে ঝলক দেখিয়ে দ্রুতই সহ-অধিনায়ক হয়ে যান। বিবেচনায় চলে আসেন ভবিষ্যৎ অধিনায়কেরও। বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক ছিলেন নাফিস। ২০০৭ বিশ্বকাপে টানা চার ম্যাচে খারাপ করার পর একাদশ থেকে বাদ পড়েন তিনি। খারাপ সময়ের শুরু তখনই। পরে যুক্ত হয় ভারতের নিষিদ্ধ লিগ আইসিএল খেলার ব্যাপারটি। যা তাকে পিছিয়ে অনেকটা। এরপর চেষ্টা করলেও সেভাবে সুযোগ না পাওয়ায় দীর্ঘ হয়নি তার পথচলা।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৫-২০১৩, ৮ বছর

ম্যাচ: ২৪ টেস্ট, ৭৫ ওয়ানডে ও একমাত্র টি-টোয়েন্টি

শাহরিয়ার নাফিসের উপলব্ধি: পরিসংখ্যানে আমি বাংলাদেশের চুতর্থ সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিয়ান। রানে আমি সপ্তম। আর ৫০টা ওয়ানডে খেলেছে, এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে হয়তো আমি উপরের দিকে থাকব। এমন হিসেব কষার পর যদি বলতে বলা হয়, তাহলে আমি বলব যে সময় আমার ঠিক সুযোগ ও সমর্থন দরকার ছিল, সেটা আমি পাইনি।

এ কারণে আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী শেষ করতে পারিনি। আমার রান, সেঞ্চুরি বা গড় যদি ওই পর্যায়ে থাকে তাহলে আমাকে যথেষ্ট সুযোগ ও সমর্থন দেওয়া দরকার ছিল। ২০১১ সালে যখন আমি শেষ ওয়ানডে খেলেছি, সেই সময় আমি সেটা পাইনি। বাংলাদেশ ওয়ানডে নির্ভর দল। ওয়ানডেতে না টিকতে পারলে অন্য কোথাও পারবে না। একমাত্র মুমিনুল পেরেছে।

মোহাম্মদ আশরাফুল

এই একাদশে মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম দেখে খটকা লাগার কথা। ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তার। তবু বাংলাদেশ ক্রিকেটে হয়তো সবচেয়ে বড় আফসোসের নাম আশরাফুল। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান আশার ফুল হয়ে জাতীয় দলে নাম লেখান। মাত্র ১৭ বছর ৬১ দিন বয়সে অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন তিনি। যা এখনও সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরির রেকর্ড হয়ে আছে।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গৌরবের জয়ের নায়ক আশরাফুল। দুই বছর পালন করেছেন অধিনায়কত্বের দায়িত্বও। কিন্তু হঠাৎই তার ক্যারিয়ারে ‘ফুল স্টপ’ পড়ে যায় বিপিএলে ফিক্সিং কাণ্ডে। আশার ফুল ঝরে যায় সেখানেই। বাংলাদেশ হারায় নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকে। এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আশরাফুল। কিন্তু তার জন্য জাতীয় দলে ফেরাটা যে কাটা বেছানো পথ পাড়ি দেওয়ার মতো, সেটা তিনিও জানেন ভালো করে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০১-১৩, ১২ বছর

ম্যাচ: ৬১ টেস্ট, ১৭৭ ওয়ানডে ও ২৩ টি-টোয়েন্টি

মোহাম্মদ আশরাফুলের উপলব্ধি: হয়তো আমার জন্য এটাই লেখা ছিল, এ কারণে প্রত্যাশার জায়গাতে যেতে পারিনি। এটা বিশ্বাস করতে হবে। যা হয়েছে, সেটা আমার ভাগ্যে লেখা ছিল। তবে যা পেয়েছি, খারাপ নয়। বাংলাদেশের হয়ে একটা বিশ্ব রেকর্ড আছে। অনেক বড় বড় জয়ের সাক্ষীও আছি। তবে গড় ৪০, ৫০ থাকলে ভালো লাগতো।

এখন যেমন সাকিব, তামিম, মুশফিকরা একটা পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ৫-১০ বছর পরে হয়তো ওদের ছাড়িয়ে যাবে কেউ। এটাই নিয়ম। আমার ক্ষেত্রে আরেকটু ভালো গাইড পেলে হয়তো ভালো হতো। শুরুর দিকে যাদের সাথে খেলেছি, তারা লেজেন্ড। কিন্তু তাদেরকে আমার সমর্থন দিতে হয়েছে। উনাদের কাছ থেকে সেভাবে সাপোর্ট পেলে হয়তো আরও ভালো হতে পারত। কিন্তু যা হয়েছে, এটাই লেখা ছিল। এটা বিশ্বাস করতে হবে।

অলোক কাপালি

নাফিস ইকবাল বা আশরাফুলদের মতো বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই বিসিবির রাডারে ছিলেন না অলোক কাপালি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও নজরকাড়া পারফরম্যান্স ছিল না তার। বাংলাদেশের দুই পাকিস্তানি কোচ আলী জিয়া ও মহসিন কামাল সেরা উপহার ছিলেন ডানহাতি এই অলরাউন্ডার।

বাংলাদেশে ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে নিন্দিত সাবেক এই দুই কোচ নেটে অলক কাপালির খেলা দেখে পছন্দ করে ফেলেন। কাপালির সামর্থ্যে ভরসা রেখে শ্রীলঙ্কা সফরে নিয়ে যান তারা। প্রতিদানও দেন কাপালি। অভিষেক সিরিজেই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দেন দিনি। তাই সম্ভাবনা নিয়ে দলে না ঢুকলেও দ্রুত জায়গা পোক্ত হয়ে যায় তার।

‌’মিনি’ অলরাউন্ডার কাপালি হয়ে ওঠেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। স্টাইলিশ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে করতেন লেগ স্পিন। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার ফিল্ডিংয়েও ছিলেন অসাধারণ। দ্রুত শেখার সামর্থ্য থাকা কাপালির পথ আরও দীর্ঘ হতে পারতো। কিন্তু আইসিএলে অংশ নেওয়ায় বিসিবির বাম নজরে পড়ে যান কাপালি। এরপর সেভাবে আর সুযোগ মেলেনি তার।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০২-১১, ৯ বছর

ম্যাচ: ১৭ টেস্ট, ৬৯ ওয়ানডে ও ৭ টি-টোয়েন্টি

অলোক কাপালির উপলব্ধি: নিজের দোষের কথাই বলতে হয়। সুন্দর করে এগিয়েছিলাম। ২০০৪-০৫ থেকে শুরু হয় খারাপ সময়। ওই সময়ে আমি তেমন সমর্থন পাইনি। বড়রা যারা ছিলেন, যদি সমর্থন দিতেন, হয়তো ভালো হতে পারতো। মানুষের খারাপ সময় যায়। আমার খারাপ সময়ে সমর্থন কম পেয়েছি। ২০০৭ বিশ্বকাপের আগে আমি ৫টা সেঞ্চুরি করি। তিনটি লিস্ট ‘এ’ ও দুটি প্রথম শ্রেণিতে। এসব সেঞ্চুরি করার পর বিশ্বকাপে ডাক পাই। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচে আমাকে ৮-৯ নম্বরে সুযোগ দেওয়া হয়।

মাশরাফির পরে আমাকে ব্যাটিংয়ে নামানো হয়। খারাপ লেগেছিল যে এত রান করলাম, ফিরব। কিন্তু আমাকে পাত্তা দেওয়া হয়নি। তখন ভেবেছি দেশে সেঞ্চুরি করে লাভ নেই, বিদেশে কিছু করলে কাজে দেবে। এটা ভেবেই আমার আইসিএলে যাওয়া। প্রমাণও করেছি আমি। আইসিএলে ভালো খেলার পর আইপিএলে ডাক পাই। আইসিএল আমার ক্যারিয়ারে খারাপ প্রভাব ফেলেছে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি আমার জন্য ঠিক সিদ্ধান্ত ছিল সেটা।

২০১১ বিশ্বকাপের আগে আমি দারুণ পারফরম্যান্স করেছি। ডাবল সেঞ্চুরি দুটি করেছি। তারপরও আমি বাদ পড়েছি। বলা হয়েছিল আমি আড়াই বছর কোনো টুর্নামেন্ট খেলিনি। আবার ২০০২ সালে আমি সুযোগ পাই, এটায় আমার ক্ষতি হয়েছে। এটা যদি ২০০৫-০৬ এ হতো আমার জন্য ভালো হতো। শুরুটা হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি। ওই বছরই আমি প্রথম প্রিমিয়ার লিগে সুযোগ পাই।

রাজিন সালেহ

অলোক কাপালির মতো রাজিন সালেহও সম্ভাবনা নিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেননি। কিন্তু জাতীয় দলে নাম লিখিয়েই নিজের পরিপক্কতার প্রমাণ দিয়ে দেন তিনি। রাজিনই বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার, যিনি ফিল্ডিং দিয়েও নজর কাড়েন। অভিষেক টেস্টের স্কোয়াডে শুধু ফিল্ডিংয়ের কারণেই তাকে রাখা হয়েছিল।

একজন টেস্ট ব্যাটসম্যানের যতটা সাহসী হতে হয়, রাজিন ঠিক তেমনই ছিলেন। ফিটনেসেও দলের বাকিদের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তিনি। রাজিনকে মনে করা হয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ভরসা। বাংলাদেশ ক্রিকেটে যখন পরিপক্কতা ছিলই না, রাজিন তখন নিজেকে পুরোপুরি ভিন্নভাবে হাজির করেছিলেন। ব্যাটিং, ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি তার বোলিংও কার্যকর ছিল।

ওয়ানডে মেজাজের ব্যাটসম্যান না হওয়ার পরও কিছুদিন এই ফরম্যাটে ভালো করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার নামের পাশে ৩৫-৪০টি টেস্ট থাকতে পারতো। কিন্তু সুযোগের অভাবে তাকেও আগেইভাগেই বিদায় নিতে হয় জাতীয় দল থেকে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৩-০৮, ৫ বছর

ম্যাচ: ২৪ টেস্ট ও ৪৩ ওয়ানডে

রাজিন সালেহর উপলব্ধি: আমি যদি আমার ঘরোয়া পারফরম্যান্স ধরে রাখতে পারতাম, তাহলে মনে হয় ভালো হতো। কিন্তু আমি যখন শুরু করি, তখন বাংলাদেশ কেবল জিততে শিখেছে। বড় দলের বিপক্ষে কীভাবে খেলতে হয় সেই সাহস তৈরি হয়েছে। আমরা যখন পরিণত হয়েছি, তখন সুযোগটা দেওয়া হয়নি। হয়তো আমি আরও অনেক টেস্ট খেলতে পারতাম। দুর্ভাগ্যবসত আমি ২০০৮ সালে বাদ পড়ে গেছি।

২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমাকে একটা সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রথম ম্যাচে আমি ২৬ করি, দ্বিতীয় ম্যাচে একটা ইনিংসে আমি রান করতে পারিনি। এরপর আমি বাদ পড়ে যাই। আমাকে যদি আরেকটু সুযোগ দিতো, আমার ক্যারিয়াররা লম্বা হতে পারতো। আমি আরেকটু সুযোগের আশায় ছিলাম। ইচ্ছা ছিল আমি টেস্ট বেশি করে খেলব। কিন্তু সেভাবে সুযোগ পাইনি।

আফতাব আহমেদ

বাংলাদেশের সাবেক এই ব্যাটসম্যানই প্রথম, যিনি প্রতিপক্ষ বা প্রতিপক্ষের বোলার দেখে ব্যাটিং করতেন না। খেলতেন নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই। বাংলাদেশ তখন অন্যদের দেখে ভীত হলেও ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করে বসতেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন আফতাব। দারুণ সম্ভাবনা নিয়ে জাতীয় দলে যাত্রা শুরু করেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ওই সময়ে প্রথম উইকেট পড়লে গ্যালারিতে আনন্দ হতো আফতাব নামবেন বলে। প্রতিভা বা সামর্থ্যের কোনো ঘাটতি ছিল না তার। কিন্তু পিছিয়ে পড়েন চেষ্টার কমতির কারণে।

কিছুটা অলস প্রকৃতির ছিলেন আফতাব। অনুশীলনে আর সবার মতো সরব ছিলেন না তিনি। নিজেকে অন্য পর্যায়ে নেওয়ার যে চেষ্টা, সেটা তার মধ্যে সেভাবে ছিল না। যে কারণে প্রত্যাশিত অনুপাতে তার উন্নতি হয়নি। তবু আরও কয়েক বছর খেলতে পারতেন সাবেক এই ক্রিকেটার। কিন্তু আইসিএল খেলায় বাকিদের মতো তাকেও আর সেভাবে বিবেচনা করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৪-১০, ৬ বছর

ম্যাচ: ১৬ টেস্ট, ৮৫ ওয়ানডে ও ১১ টি-টোয়েন্টি

আফতাব আহমেদের উপলব্ধি: এখন যদি মুশফিক, তামিম, সাকিব বা মাহমুদউল্লাহকে দেখেন, ওরা প্রচুর পরিশ্রম করে। আমি অবশ্যই প্রতিভাবান ছিলাম কিন্তু প্ররিশ্রমের যে ব্যাপারটা, ওটার একটা ঘাটতি অবশ্যই ছিল। এরপর জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর ‘এ’ দল বা একাডেমি; কোনো জায়গায় আমাকে না রাখার একটা হতাশাও ছিল। আমার সবকিছু ভালোমতো হয়নি। এ কারণে আমি ক্যারিয়ারটাকে বড় করতে পারিনি।

ছোটবেলা থেকে আমাকে নিয়েই একাদশ করা হয়েছে। হঠাৎ করে যখন দেখেছি, দলে জায়গা হচ্ছে না, তখন একটা হতাশা কাজ করেছে। আমি অবশ্যই কম সুযোগ পেয়েছি। এখন অনেক খেলোয়াড় বাদ পড়ে এইচপি, ‘এ’ দলে ক্যাম্প করে ফিরে আসে। আমিই একমাত্র যে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ার পর একদিনের জন্যও কোনো জায়গায় সুযোগ পাইনি। আমি ক্যাম্পে থাকলে বাধ্য হয়ে আমাকে পরিশ্রম করতে হতো। কিন্তু ওই সুযোগটা আমি পাইনি।

সোহাগ গাজী

অলোক কাপালি, রাজিন সালেহর মতো সোহাগ গাজীও বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। তবে ঘরোয়াতে সব সময়ই ভালো করেছেন তিনি। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংয়েও অবদান রাখতেন তিনি। হইচই ফেলে জাতীয় দলে না ঢুকতে পারলেও এই কাজটা তিনি জাতীয় দলে ঢুকে করেছেন।

টেস্ট ইতিহাসের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও হ্যাটট্রিকের রেকর্ড গড়েন তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটেও তার এই রেকর্ড আছে। প্রকৃতিপদত্ত প্রতিভা নিয়ে জাতীয় দলে নাম লেখান গাজী, সাফল্যও মিলছিল। কিন্তু হারিয়ে যেতে সময় লাগেনি। নিজেকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার যে তাড়না, সেটা তার মাঝে সেভাবে দেখা যায়নি বলে মনে করেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

দলে তিথু হতে ডানহাতি এই অফ স্পিনার যথেষ্ট চেষ্টা করেননি বলেও মত দেন কেউ কেউ। অবশ্য সময় ফুরিয়ে যায়নি সোহাগ গাজীর জন্য। সর্বশেষ ২০১৫ সালে জাতীয় দলের হয়ে খেলা গাজী এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় দলে ফেরার লক্ষ্য নিয়ে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০১২-১৫, ৩ বছর

ম্যাচ: ১০ টেস্ট, ২০ ওয়ানডে ও ১০ টি-টোয়েন্টি

সোহাগ গাজীর উপলব্ধি: আমার কাছে মনে হয়েছে আমি হয়তো ঠিকভাবে সুযোগ পাইনি। জাতীয় দলের বাইরে যাওয়ার পরে বোর্ডের তত্ত্বাবধানে আমার যেভাবে থাকার কথা ছিল, সেটা হয়নি। এইচপি, ‘এ’ দল বা একাডেমির কোনো ক্যাম্পের সাথে যদি থাকতে পারতাম, হয়তো ফিটনেস আরও উন্নত করতে পারতাম। হয়তো আরও আগে ফিরতে পারতাম।

জাতীয় দলের বাইরে যাওয়ার পর আমি কোথাও ছিলাম না। ওই পরিচর্যা হয়নি। সেটা জানি না কেন। বয়সভিত্তিক থেকে একাডেমি হয়ে আমি জাতীয় দলে আসি। ওখানে যেভাবে পরিচর্যা করে আমাকে নিয়ে এসেছে বোর্ড, হয়তো এটার ফল কিছুটা হলেও দিতে পেরেছি। কিন্তু জাতীয় দল থেকে বের হওয়ার পর আমাকে গাইড করা হয়নি। এইচপি, একাডেমি, ‘এ’ দলের ক্যাম্প ছিল। স্পিন ক্যাম্পও হয়েছে। সেখানেও আমাকে রাখা হয়নি। এটাই মূল কারণ।

তবু আমার কাজ আমাকে করতে হবে। নেওয়া না নেওয়া তাদের দায়িত্ব। তবে আমার মনে হয় আমার পরিচর্যাটা করতে পারলে আমি ভালো একটা অবস্থানে থাকতাম। আমি নাসির, শামসুর রহমান শুভ হয়তো কারও নজরে নেই। তবে আমি মনে করি আমাদের কাছ থেকেও এখনও অনেক কিছু নেওয়ার আছে। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পে না নিলে কঠিন। কারণ একা একা কীভাবে, কতক্ষণ করবেন।

এনামুল হক জুনিয়র

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই নিজের আগমনী বার্তা দেন এনামুল হক জুনিয়র। বাঁহাতি এই স্পিনার জাতীয় দলে ঢোকার পর বলা হচ্ছিল, মোহাম্মদ রফিকের উত্তরসূরী মিলে গেছে। সে সময় বাংলাদেশের স্পিনাররা সেভাবে বল ঘোরাতে পারতেন না। কিন্তু এনামুল জুনিয়র প্রকৃতিগতভাবে টার্নার ছিলেন।

এ কারণে আগেই জাতীয় দলে সুযাগ হয়ে যায় তার। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার আগেই জাতীয় দলে অভিষেক হয় এনামুলের। টেস্টের নিয়মিত সদস্য হয়ে ওঠা এনামুল ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক। সিরিজ জেতার পথে তার বড় অবদান ছিল। সিরিজ সেরার পুরস্কারও তার হাতে উঠেছিল।

এরপর দারুণ পারফরম্যান্স করলেও তাকে সেভাবে সুযোগ দেওয়া হয়নি। ধীরে ধীরে তাই দৃশ্যপটের বাইরে চলে যেতে হয় তাকে। যদিও হার মানেননি এনামুল জুনিয়র। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফর্ম করে এসেছেন তিনি। এমন কি এখনও ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত পারফর্মার বাঁহাতি এই স্পিনার।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৩-১৩, ১০ বছর

ম্যাচ: ১৫ টেস্ট ও ১০ ওয়ানডে

এনামুল হক জুনিয়রের উপলব্ধি: ২০০৭ সালে টেস্ট ক্রিকেটে এক বছরের একটা গ্যাপ ছিল। ক্যারিয়ার না হওয়ার পেছনে এটাকে একটা কারণ মনে হয়। আরেকটা কারণ হলো পারফরম্যান্স করার পরও তাচ্ছিল্য বা অবহেলা করার একটা ব্যাপার ছিল। মাঝখানে অনেক পারফরম্যান্স করার পরও সুযোগ আসেনি। ভাগ্যের কথাও বলতে হবে। যেভাবে আমি শুরু করেছিলাম, আমার অনেকগুলো টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা ছিল। আমাকে টেস্ট বোলার বানিয়ে দেওয়ার কারণে আমি পিছিয়ে পড়েছি। কারণ বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট কম খেলে।

আমাকে শুধু টেস্ট ম্যাচের জন্য অপেক্ষা করতে হতো। তখন কঠিন ছিল টেস্ট ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়া। সব কিছু মিলিয়ে বলব কিছুটা দুর্ভাগ্য আমার। প্রধান কারণ বলব আমাকে টেস্ট বোলার বানানো। ২০০৭ সালে আমাদের ১৩ মাসের একটা গ্যাপ ছিল টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বকাপের কারণে। এই গ্যাপটা আমার ক্যারিয়ারে অনেক প্রভাব ফেলেছে। তারপরও আমি ফিরে এসেছি, ভালো খেলেছি ২০০৯ সালে। কিন্তু দল নির্বাচনে সেই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য।

সৈয়দ রাসেল

বাংলাদেশ ক্রিকেটের আনসাং হিরো সৈয়দ রাসেল। যার উপস্থিতি সেভাবে বোঝা যেত না, কিন্তু দলের জন্য বড় অবদান রাখতেন। বলে তেমন গতি ছিল না। কিন্তু সুইংয়ের ভেল্কিতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়তেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে সুইং ভালোভাবে পরিচিত হয়।

পাশাপাশি দারুণ স্লোয়ার ডেলিভারি দিতে পারতেন। উইকেট, ব্যাটসম্যান এবং নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে বোলিং করতেন রাসেল। যা একজন বোলারের সবচেয়ে বড় গুণ। বেশ অনেকটা সময় ধরেই তিনি দলের হয়ে অবদান রেখেছেন। কিন্তু ইনজুরি ও জেমি সিডন্স কোচ হয়ে আসতেই তার ক্যারিয়ারে বিরাম চিহ্ন পড়ে যায়। কোচের পছন্দের পাত্র হতে না পারায় তার ক্যারিয়ারটা আর সামনে এগোয়নি।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০৫-১০, ৫ বছর

ম্যাচ: ৬ টেস্ট, ৫২ ওয়ানডে ও ৮ টি-টোয়েন্টি

সৈয়দ রাসেলের উপলব্ধি: আমার মনে হয় আমি হয়তো ওই পর্যায়ের শক্তিশালী ছিলাম না। যে কারণে ইনজুরিতে পড়েছি। ইনজুরির কারণেই তো প্রধান ঝামেলা হয়েছে। সেই সাথে কোচের পছন্দের একটা ব্যাপার ছিল। জেমি সিডন্স তখন নুতন কোচ। সব কোচই দুই-একজনকে টার্গেট করে। এরপর সেখানে দুজন তরুণ খেলোয়াড় ঢোকায়। এটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে, রাজ্জাকের ক্ষেত্রে হয়েছে। মাশরাফিরও চেষ্টা করেছিল কিন্তু পারেনি।

কোচ এসে দুজন খেলোয়াড় তৈরি করতে চায় যে, এই দুটি আমার খেলোয়াড়। এই দুজনকে আমি তৈরি করেছি। ওরকম একটা জটিলতায় পড়ে গিয়েছিলাম। আর এর সাথে ইনজুরি। স্বাভাবিকভাবে আপনি দুর্বল থাকলে ইনজুরি হবে, শক্তিশালী হলে সেভাবে হবে না। পেস বোলার হিসেবে যতটা শক্তিশালী হওয়ার দরকার ছিল, আমার মনে হয় কম ছিল। আমি সিডন্সের রসানলে পড়েছিলাম। আবার ডেভ হোয়াটমোর আমাকে পছন্দ করতেন। আমি তার সময়ে ঢুকেছিলাম। তবে ডেভ এসেও কিন্তু দজনের ক্যারিয়ারকে থামিয়ে দিয়েছে। একইভাবে জেমি সিডন্স দুজনকে টার্গেট করেছে, আমি তার মধ্যে পড়ে গেছি।

তালহা জুবায়ের

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আফসোসের নামের মধ্যে তালহা জুবায়ের একজন। হুই-হুল্লোড় ফেলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে এসেছিলেন তিনি। গতিতে ছিলেন দুর্দান্ত, লাইন লেংন্থও ছিল দারুণ। এ কারণে ১৬ বছর বয়সেই তার টেস্ট অভিষেক হয়ে যায়।

এত কম বয়সী বোলারের বোলিং দেখে প্রতিপক্ষরা পর্যন্ত চমকে যেত। এ কারণেই মাশরাফি ও তালহাকে ভালোভাবে যত্ন নেওয়ার জন্য বলে গিয়েছিলেন অ্যান্ডি রবার্টস। বিশ্ব ক্রিকেটের অনেকেরই ধারণা ছিল, দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সেবা দিতে পারবেন তালহা। মাশরাফি ও তালহার জুটিতে বাংলাদেশের পেস আক্রমণ নতুনত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা জেগেছিল।

যদিও সেটা হয়নি। ইনজুরিতে পড়ে সব ভেস্তে যায়। ইনজুরিতে পড়ার পর বোর্ড থেকে তাকে সেভাবে যত্ন করা হয়নি। পাশাপাশি তালহা নিজেও সেভাবে চেষ্টা করেননি। যে কারণে মাত্র ৭ টেস্ট ও ৬ ওয়ানডে খেলেই থামতে হয় তাকে।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার: ২০০২-০৪, ২ বছর

ম্যাচ: ৭ টেস্ট ও ৬ ওয়ানডে

তালহা জুবায়েরের উপলব্ধি: ইনজুরিটা সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল। আবার ইনজুরির পর আমাকে যেভাবে বোর্ড থেকে যত্ন করার কথা ছিল, সেটা একদমই হয়নি। আমার খুবই দুর্ভাগ্য যে সম্ভাবনা ছিল, যা অনেকেই জানতো বা আমার মধ্যে দেখেছিল। এ কারণেই আমাকে অত কম বয়সে সুযোগ দিয়েছিল। আমাকে নিয়ে অনেক আশাও ছিল সবার। আমার কাছেও এই প্রশ্নের উত্তরটা অজানা যে, আমাকে নিয়ে যদি এতই প্রত্যাশা ওই সময় করে থাকে, তাহলে আমি ইনজুরিতে পড়ার পরে কেন আমাকে আর সুযোগ দেওয়া হলো না।

আমি যখন ইনজুরি থেকে ফিরলাম, আমাকে সেভাবে আর সুযোগ দেওয়া হয়নি। একটা সুযোগ আমি পেয়েছিলাম ২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। আমাকে একদম বাদ দিয়ে দেওয়ার জন্যই ওই সুযোগটা দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় ভারত দলে শচিন, গাঙ্গুলি, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, শেবাগ, গম্ভীররা খেলেন। এদের সামনে এম এ আজিজের মতো ফ্ল্যাট উইকেটে দুই বছর পর পারফর্ম করা খুবই কঠিন। তো আমার কাছে মনে হয়েছিল যে আমাকে একদমই বাদ দিয়ে দেওয়ার জন্য ওই সুযোগটা দেওয়া হয়েছিল।

কারণ সুযোগ দিলে আমাকে আরও ভালো জায়গায় সুযোগ দিতে পারতো। একটা ম্যাচ খেলেই বাদ? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও আমার কাছে অজানা। আফসোস, ক্ষোভ অনেক কিছুই আছে। অবশ্য আমি একাই নই, আমার মতো এমন দুর্ভাগ্যবান খেলোয়াড় অনেক আছে আমাদের দেশে। ওই সময় অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছিল। আমরাও যদি দীর্ঘ সময় সুযোগ পেতাম, আমাদেরও হয়তো আজ মাশরাফির মতো নাম হতো।

আমার আসলে সুযোগটাই হয়নি। মাশরাফি ও আমাকে নিয়ে অ্যান্ডি রবার্ট বলে গিয়েছিল, “এই দুই পেস বোলারের তোমরা যত্ন করো। তারা তোমাদের লম্বা সময় সার্ভিস দেবে।” আমার তো সামান্য একটা ইনজুরি ছিল, যেটা ৪-৫ মাসের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা যায়। কিন্তু ওই ইনজুরিতে আমি দুই বছর খেলতেই পারিনি। আমার দিকে ওইভাবে নজর দেওয়া উচিত ছিল। হয়তো কারো পছন্দের হতে পারিনি, আমি কোনোদিন তেলবাজি করতে পারিনি। এসব করতে না পারায় হয়তো হয়নি।

পাদটীকা: এই একাদশের বাইরেও অনেক ক্রিকেটার আছেন, যাদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় সেবা পেতে পারতো বাংলাদেশ ক্রিকেট। এর মধ্য অন্যতম আল শাহরিয়ার রোকন। কিন্তু ১৫টি টেস্ট এবং ২৯টি ওয়ানডে খেলেই শেষ দেখে ফেলতে হয় বেশ কয়েক বছর আগে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমানো সাবেক ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। দারুণ প্রতিভাবান এই ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার মাত্র ৩ বছরের।

একইভাবে মাহমুদুল হাসানের (ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার নাম ছিল বিকাশ রঞ্জন দাস) নাম মনে করেও অনেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। সাবেক বাঁহাতি এই পেসার বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের একাদশে ছিলেন। কিন্তু ওই এক টেস্টেই তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ। আর খেলা হয়নি জাতীয় দলের জার্সিতে।

এরপর তুষার ইমরান, ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, নাজিম উদ্দিন, জুয়ায়েদ সিদ্দিকী, নাজমুল হোসেন, রবিউল ইসলাম শিবলু, নাঈম ইসলাম, মার্শাল আইয়ুব, সোহরাওয়ার্দী শুভরাও হতে পারতেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পদ। কিন্তু এদের কেউই সম্পদে পরিণত হতে পারেননি। স্বপ্ন বহুদূরে থাকতেই শেষ হয়ে গেছে তাদের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার।

https://channelkhulna.tv/

সংবাদ প্রতিদিন আরও সংবাদ

সাবেক আইজিপি ও কেএমপি কমিশনারসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

আদালত চত্বরে সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্রের ওপর ডিম নিক্ষেপ

আমির হোসেন আমু গ্রেপ্তার

কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের ঢুকতে দেওয়া হবে না তাবলিগ জামাত

কালীগঞ্জে ভারতীয় গরু আনতে গিয়ে যুবক আটক

পাটের ব্যাগ পুনরায় সর্বত্র চালুর উদ্যোগ নিয়েছি : সাখাওয়াত

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।