অনলাইন ডেস্কঃদুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বাউফল উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমত আরার বিরুদ্ধে। মাত্র ১০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প কেনার নামে অধীনস্থ উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডার, উপজেলা আনসার প্লাটুন কমান্ডার, ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার, ইউনিয়ন সহকারী আনসার প্লাটুন কমান্ডারদের মাসিক সম্মানী ভাতা থেকে তিনি জনপ্রতি হাতিয়ে নিয়েছেন ২ হাজার ২শ’ টাকা। উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমত আরা দীর্ঘদিন ধরে তার অধীনস্থ আনসার সদস্যদের মাসিক সম্মানী ভাতা, পূজা ও নির্বাচনী ডিউটির টাকা আত্মসাৎ করলেও রহস্যজনক কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না এমনই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আর এই দূর্ণীতির খবর দেশের বিভিন্ন গনমাধ্যমে বাউফল উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমত আরা বেগম কাছে ১০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প ২২শ টাকা শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। পূর্ব নিধারিত সময় অনুয়ায়ী আজ সোমবার সকালে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা আনসার ভিডিপি কার্যালয়ে গিয়ে নতুন নিয়োগকৃত ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার ও সহকারি আনসার কমান্ডারদের জবানবন্দি নেন। অভিযোগ রয়েছে, নতুন ৩৩ জন নিয়োগকৃত ইউনিয়ন আনসার কমান্ডার ও সহকারী আনসার কমান্ডারদের মধ্যে অভিযুক্ত উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমত আরা বেগম তার অনুসারীদের স্বাক্ষী দেয়ার জন্য ডেকে আনেন।
স্বাক্ষী দেয়ার পরে মদনপুরা ইউনিয়নের সহকারি আনসার কমান্ডার মো. সেহেল বলেন,তার ৬ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও ৫ হাজার টাকা দিয়ে মাস্টার রোলে স্বাক্ষর নেন ইসমত আরা বেগম এমন কথাটাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানান।এদিকে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ডার আবু সাইদ ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে গত ২০ জুলাই শনিবার অধিকাংশ সদস্যদের ডেকে আংশিক টাকা ফেরত দিয়ে সম্পূর্ন টাকা বুঝিয়া পাইয়াছি মর্মে স্বাক্ষর নিয়ে ঘটনাটি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য শাসিয়ে দেন।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা পিযূষ চন্দ্র দে বলেন, তদন্ত চলছে। অবশ্যই আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।এ ব্যাপারে আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ডেন্ট আবু সাইদ বলেন, এ বিষয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। জেলা অফিসে স্বাক্ষরের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। ২০ জুলাই জেলা অফিসে কি হয়েছে তা তদন্ত কমিটি জানে।
উল্লেখ্য,রূপপুরের বালিশ দুর্নীতিকেও হার মানিয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন বাউফল উপজেলা আনসার-ভিডিপির কর্মকর্তা ইসমত আরা। ১০ টাকার রেভিনিউ স্ট্যাম্প কেনার নামে তার অধীনস্থ উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডার, উপজেলা আনসার প্লাটুন কমান্ডার, ইউনিয়ন আনসার প্লাাটুন কমান্ডার, ইউনিয়ন সহকারী আনসার প্লাটুন কমান্ডারদের মাসিক সম্মানী ভাতা থেকে জন প্রতি হাতিয়ে নিয়েছেন ২ হাজার ২০০ টাকা।
উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমত আরা দীর্ঘদিন ধরে তার অধীনস্থ আনসার সদস্যদের মাসিক সম্মানী ভাতা, পূজা ও নির্বাচনী ডিউটির টাকা আত্মসাৎ করলেও রহস্যজনক কারনে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমত আরার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ইসমত আরা একের পর এক ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডারকে ডেকে মাস্টার রোলে স্বাক্ষর করিয়ে টাকা দিচ্ছে। এ সময়ে কার্যালয়ের ভিতরে ঢুকে নিজের পরিচয় দিয়ে উপস্থিত ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার ও ইউনিয়ন সহকারী আনসার প্লাটুন কমান্ডারদের কাছে তাদের প্রাপ্য সম্মানীর টাকার পরিমাণ জানতে চাইলে নাজিরপুর ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার মো. ওবায়দুল ইসালাম বলেন, তার প্রাপ্য সম্মানী ৭ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু তাকে দেয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকা। একই কথা জানান দাশপাড়া ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার গোপাল কৃষ্ণ সাহা এবং বগা ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডার আমিনুল ইসলাম।
ইউনিয়নের আনসার প্লাটুন কমান্ডারের সম্মুখেই উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা ইসমত আরার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অফিসিয়াল কিছু খরচপাতি আছে এ জন্য ওই টাকা রাখা হয়েছে। কিসের খরচ জানতে চাইলে তিনি বলেন রেভিনিউ স্ট্যাম্পের খরচ এরপর কল্যাণ তহবিল। রেভিনিউ স্টাম্পের দাম কত জানতে চাইলে তিনি জানান, ১০ টাকা।কল্যাণ তহবিলে কত জমা হয় জানতে চাইলে বলেন, কল্যাণ তহবিলে ৫ টাকা জমা হয়। তাহলে বাকি ২ হাজার ১৮৫ টাকা কোথায় যায় জানতে চাইলে তিনি এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
অক্টোবর ২০১৮থেকে মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত মোট ৬ মাসের সম্মানী ভাতা প্রদানের মাস্টার রোলে দেখা যায়, উপজেলা আনসার কোম্পানি কমান্ডারে জন্য বরাদ্ধকৃত সম্মানী ভাতার পরিমাণ লেখা রয়েছে ৯ হাজার টাকা, উপজেলা আনসার সহকারী কোম্পানি কমান্ডারের ৭ হাজার ৮০০ টাকা, ইউনিয়ন আনসার প্লাটুন কমান্ডারের ৭ হাজার ২০০ টাকা, ও ইউনিয়ন সহকারী আনসার প্লাটুন কমান্ডারের ৬ হাজার টাকা। ওই মাস্টার রোলে বিভিন্ন পদমর্যাদার মোট ৩৩ জন আনসার কমান্ডারের নাম এবং বরাদ্ধকৃত টাকার পরিমাণ উল্লেখ্য করা রয়েছে।