বাগেরহাট: বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার ফলতিতা মৎস্য আড়ৎ বাংলাদেশের বৃহৎ চিংড়ি আড়ৎ। হোয়ইিট গোল্ড নামে খ্যাত এই চিংড়ি শিল্প দিন দিন ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে দরপত্তনের কারণে।
চিংড়ি চাষের সাথে জড়িত এমন কয়েকজন ঘের মালিকের সাথে আলাপকালে জানা যায়, পূর্বের বছরগুলোর তুলনায় এবছর তুলনামূলক ঘেরের হারি বেশি। চিংড়ি পোনার দাম ঊর্ধ্বগতি, খাবারের দাম বেশি, ঘের প্রসেসিংয়ের জন্য মালামাল এবং শ্রমিকের দাম বেশি। কিন্তু মাছের দাম কম। আর তার জন্যই দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ চাষিরা। উৎপাদন খরচের তুলনায় বিক্রয় মূল্য কম হওয়াতে পথে বসতে শুরু করেছে অনেক চিংড়ি চাষী। সম্প্রতি করোনা প্রাদুর্ভাব আসার পর থেকে ব্যাংক লোন এবং এনজিও লোন বন্ধ থাকায় অনেকেই চিংড়ি চাষের খরচ এড়ানোর জন্য বিকল্প হিসেবে সাদা মাছের চাষ করেছেন। কিন্তু সেখানেও দরপত্তনের কারণে দিশেহারা সাদা মাছের চাষীরা। মৎস্য আড়ৎ মালিক এবং কয়েকজন মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসাযীর সাথে আলাপকালে তারা জানান- অত্র মার্কেটে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং সিন্ডিকেটের কারণে এমন দরপতন হতে পারে। তারা আরো জানান, এখানকার কিছু ডিপো মালিক অধিক মুনাফার আশায় নিজের ডিপোতে বসে চিংড়ি চাষের হেডলেস প্রসেসিং করে থাকে। আর সে সময়ে মাছের ওজন বাড়ানোর জন্য পুশ করা হয় জেলি এবং শিশা। এসব কারণে পূর্বে বহুবার রপ্তানি করা মাছ ফেরত পাঠানো হয়েছে বহির্বিশ্বের মার্কেট থেকে। সংকুচিত হয়েছে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা চিংড়ি মাছের বহির্বিশ্বের মার্কেট। আগের তুলনায় মাছের উৎপাদন অনেক বেশি। কিন্তু রপ্তানি কমেছে বহুগুণ। বহির্বিশ্বের চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশ চিংড়ি উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় এমন দর পত্তন হতে পারে বলেও তারা জানান।
এ বিষয়ে ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিটলার গোলদার জানান – বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ চিংড়ি মার্কেট ফলতিতা বাজার মুলঘর ইউনিয়ন এর ভেতরে। সে সুবাদে তিনি বিভিন্ন সময়ে মৎস্য মার্কেট পরিদর্শন করে থাকেন। এ বাজারে কোন ব্যবসাযীর অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তিনি স্থানীয় ভাবে তা হস্তক্ষেপ করে সমাধান করে থাকেন এবং গুরুতর কোন বিষয়ে তিনি প্রশাসনের সহায়তায় নিয়ে থাকেন। তবুও এখানকার কিছু ব্যবসায়ী গোপনে মাছে জেলি পুশ করে থাকেন বলে অনেকেই তার কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে তিনি ব্যবস্থা নিতে পারেন না।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, এই মৎস্য আড়ৎ গুলোতে রাস্তার উপর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেনাবেচা হচ্ছে মাছ। এখানকার ডিপো মালিক এবং ব্যবসায়ীদের উপজেলা প্রশাসন থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হলেও মানছেনা কোন নীতিমালা। একদিকে যেমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কেনাবেচা হচ্ছে তেমনি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি। এখানকার মৎস্যচাষীদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় উন্নত প্রশিক্ষণ, স্বল্প সুদে ঋণ প্রদান,স্থানীয় প্রশাসনের সার্বক্ষণিক মার্কেট তদারকির মাধ্যমে এবং বহির্বিশ্বে অধিক ভাবে মার্কেট সৃষ্টি করতে পারলেই আবারো সম্ভাবনা মিলবে চিংড়ি শিল্পের এমনটাই দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।