চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ করোনার প্রভাবে বন্ধ রয়েছে অফিস-আদালত, যানবাহন, দোকানপাট। বাগেরহাট সদর সহ হালিশহরেও কমছে পোলট্রি মুরগি ও ডিমের দাম। এতে করে চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে পোলট্রি ব্যবসায়ীদের।
বাগেরহাট প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলায় চার হাজার আর এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ১০০টির মত পোলট্রি খামার রয়েছে। সব খামারই ছোট বা মাঝারি ধরনের। এসব খামারে ব্রয়লার, লেয়ার, পাকিস্তানি জাতের মুরগিই বেশি।
সরেজমিন খালিশপুরের বিভিন্ন এলাকার খামার ঘুরে খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস বিস্তারের আগে এখানে পোলট্রি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হতো ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজি। বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি দরে। প্রতিদিনই কমছে দাম।
হালিশহর গ্রামের খামারি বিশ্বজিত বিশ্বাস জানান, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে খরচ হয় ৯০ টাকার ওপর। এখন সেই মুরগি ৩০-৩৫ টাকা লোকসানেও বিক্রি করতে পারছিনা। সকল গাড়ী চলাচল বন্ধ থাকায় মহাজনরাও এখন এত দুরে মুরগি কিনতে আসতে চায় না। যার কারনে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে শত শত মুরগি। যার কারনে আমরা পথে বসতে যাচ্ছি। আমাদের চালানও হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। সরকার এই মুহুর্তে আমাদের পাশে না দাড়ালে আমরা আমাদের পরিবার নিয়ে চলাও কষ্টাসাধ্য হয়ে যাবে। এছাড়াও তিনি আরো বলেন, এই ক্ষতি কাটা আমরা সরকারে পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাই।নতুবা আমরা আর ঘুরে দাড়াতে পারবো না। গেলো সপ্তাহে আমার প্রায় ১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে আমার আরও ২ লাখ টাকার বেশি লোকসান পড়তে হবে বর্তমান পরিস্থিতির কারনে।
চিতলমারির খামারি ঝন্টু জানান, মুরগির দাম কমলেও খাবারের দাম বেড়েছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এভাবে চলতে থাকলে তাদের পথে বসা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
চিতলমারির আরেক খামারি বেল্লাল হোসেন জানান, বর্তমানে বিয়েসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানের সময় চলছিল। এসব অনুষ্ঠানে ব্রয়লার মুরগির বেশ চাহিদা ছিল। করোনার কারণে এসব অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বড় ধরনের একটা ধাক্কা খেয়েছেন খামারিরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন খামারি জানিয়েছেন, তারা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে খামার চালাতেন। করোনার প্রভাবে লোকসান গুনে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। জীবন বাঁচাতে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এছাড়া মুরগির ওষুধ ও খাবার নিয়েছেন বাকিতে। সেখান থেকেও আসছে চাপ। আমরা এখন কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ লুৎফর রহমান জানান, বাগেরহাটে মুরগির ৪০০০টি খামারি আছে। প্রায় খামারই ছোট ও মাঝারি। করোনার প্রভাবের কারণে খামারিরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তারা চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন। এ কারনে বর্তমানে আমরা খামারিদের কম সংখ্যক বাচ্চা উঠানোর পরামর্শ দিচ্ছি। যাতে করে বাজার স্বাভাবিক থাকে এবং খামারিদের ক্ষতির পরিমানটাও যাতে কমে আসে। আর সরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হলে তারা অবশ্যই সেটা জানতে পারবেন।