বাগেরহাটের চিতলমারীতে বাড়িঘর ভাংচুর, মারধর ও শ্লীলতাহানীর বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মেহেবুবা সুলতানা নামের এক নারী উদ্যোক্তা। সোমবার (০৭ জুন) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মেহেবুবা সুলতানার নির্যা্তনের স্বীকার বড় বোন মাহমুদা সুলতানা, ভাসুর মোঃ ইব্রাহিম আদম বাবলু, ছোট ভাই মেজবাহ হাসান রাজ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে মেহেবুবা সুলতানা বলেন, আমার বাবার বাড়ি চিতলমারী উপজেলার রুইয়ারকুল এলাকায়। ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে স্বামী সন্তান নিয়ে আমি খুলনা শহরে বসবাস করি। রুইয়ার কুল এলাকায় আমার বেশকিছু জমি রয়েছে। সেখানে আমার বৃদ্ধ বাবা আকরাম উদ্দিন, মা, বিধবা বোন মাহমুদা সুলতানা ও তার সন্তানরা বসবাস করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রুইয়ার কুল এলাকার মৃত হরবিশ্বাস ঢালীর দুই ছেলে সাধন ঢালী ও ভজন ঢালী আমার বাবা ও বোনকে ওই বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে নানারকম ষড়যন্ত্র করে আসছে। সাধন ঢালী আমার বড়বোনকে কুপ্রস্তাবও দিয়েছে। আমার বোন কু প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সোমবার (৩০ মে) গভীর রাতে সাধন ঢালী অজ্ঞাত আরেক ব্যক্তিকে নিয়ে কৌশলে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে। এবং আমার বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বোনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে সাধণ পালিয়ে যায়। বিষয়টি আমাকে জানালে রাত তিনটার দিকে আমি রুইয়ারকুলে পৌছাই। সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় তোলপার সৃষ্টি হয়। ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মঙ্গলবার (৩১ মে) ভোরে সাধণ ঢালী, ভজন ঢালী, জয়ন্ত রায়, প্রসন্ত রায়, নিউটন পান্ডে, গোপাল মন্ডল, স্বপন মন্ডল, ফটিক রায়সহ অন্তত ৪০ থেকে ৫০ জন লোক আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এসময় তারা আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে এবং ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে সকলকে মারধর করে। বড়বোন মাহমুদা সুলতানার শ্লীলতহানী করে সাধণ ও তার লোকজন। তারা যাওয়ার সময়, আমাদের ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্নালঙ্কার ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান অশোক বড়াল মীমাংসার কথা বলায় আমরা মামলা মোকদ্দামায় যাইনি। কিন্তু পরবর্তীতে এই ঘটনা ধামা চাপা দেওয়ার জন্য ওই দিন বিকেলে সাধণ আমার স্বামী ইসমাইল আদম, ভাই ও ভাগ্নের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দেয় চিতলমারী থানায়। যার কোন ভিত্তি নেই। তারা মামলায় যে মিথ্যা ঘটনা ও সময়ের কথা উল্লেখ করেছে তার সাথে আমার স্বামী কোনভাবেই জড়িত নয়। আমার স্বামী সরকারের খাদ্য বিভাগের একজন কর্মচারী। তিনি ওই সময় সরকারি কাজে নিয়োজিত ছিল আামাদের কাছে সে প্রমান রয়েছে। তারপরেও আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়েছে সাধণ ও তার লোকজন।
মেহেবুবা সুলতানা আরও বলেন, যখন চেয়ারম্যান কোন উদ্যোগ নেয়নি তখন আমরা অনুপায় হয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছি। আদালত মামলা আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে সাধণ ও তার লোকজন ভয়ভীতি দিয়ে আমার বৃদ্ধ বাবা-মাকেও এলকা ছাড়া করেছে। ঘরে তালা দিয়ে তারা এখন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া আমার শ্বশুর একজন মুক্তিযোদ্ধা। এই মামলার মাধ্যমে আমাদের হেয় প্রতিপন্য করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই।
নির্যাতনের স্বীকার মাহমুদা সুলতানা বলেন, আমাদেরকে মারধর করল, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুট করল সাধণ ও তার লোকজন। আবার আমাদের নামে মিথ্যা মামলাও করল তারা । আমরা কোথায় যাব, কার কাছে গেলে সঠিক বিচার পাব এই বলে কান্না ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ভজন ঢালী বলেন, একটি মারধরের ঘটনা ঘটেছে। তবে আমার ভাই মার খেয়েছে। আর ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা মিথ্যা।
চিতলমারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক বড়াল বলেন, একটা ঘটনা ঘটেছে, দুই পক্ষও মামলাও করেছে। এক পক্ষের মামলায় আসামীরা গ্রেফতারও হয়েছে। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।