চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃচার বছর পর আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। এরই মধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে উচ্ছাসের পাশাপাশি কিছুটা ক্ষোভ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে জেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এ ক্ষোভ আর হতাশার বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইছে না। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীই দলে নব্য আওয়ামী লীগের (কাউয়া) দৌরত্ব ও হাইব্রিড নেতাদের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা সকলেই এবারের সম্মেলনে ‘হাইব্রিড’ ও ‘কাউয়া’ মুক্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের তৃনমূলের অনেক নেতা-কর্মী বলেন, দেশে বর্তমানে আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যাদের জামায়াত-বিএনপি’র বড় বড় পদে দেখেছি তারা এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা। দলের দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু নেতার হাত ধরে এসব হাইব্রিড নেতা ও কাউয়ারা দলে প্রবেশ করে ঠিকাদারী, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হয়ে আওয়ামী লীগের নাম খারাপ করছে। এরা মূলতঃ সুবিধাবাদি লীগ, এদের কোন দল নেই। আজ এদের কারনেই দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা দলীয় পদ-পদবি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এবারের সম্মেলনে দলের উচ্চপদস্থ নেতাদের কাছে আমাদের একটাই দাবী ‘হাইব্রিড’ ও ‘কাউয়া’ মুক্ত কমিটি চাই।
এদিকে, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। শহর জুড়ে প্রায় সকল জায়গায় ব্যাপক সাজসজ্জা করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে তোরন। শহরে ছেয়ে গেছে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের ব্যানার-ফেস্টুনে। এছাড়া দলীয় কার্যালয়েও আলোকসজ্জা করা হয়েছে। সম্মেলনকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিদিনই মিছিল, মিটিং, সমাবেশ করছেন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও বাগেরহাট-৪ আসনের এমপি প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব ডাঃ মোজাম্মেল হোসেন দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছর ধরে সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এবারও তিনি সভাপতি পদে বহাল থাকবেন বলে অধিকাংশ নেতা-কর্মীদের ধারণা। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকুও দুই বার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি অসুস্থতার দোহাই দিয়ে দায়িত্ব থেকে সরতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও স্বপদে বহাল থাকবেন বলে নেতা কর্মীদের ধারণা। তবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের দাবি জেলার প্রধান প্রধান পদগুলোর পরিবর্তন না হলেও যে সকল নেতৃবৃন্দ শুধু পদ আঁকড়ে বসে আছেন এবং দলের পদ পদবী ব্যবহার করে নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন তাদের কমিটি থেকে দূরে রাখা এখন সময়ের দাবি।
বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধ শেখ কামরুজ্জামান টুকু বলেন, ৯ ডিসেম্বর ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনে প্রায় বিশ হাজার নেতা-কর্মী যোগ দেবেন। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে চলেছে। বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একতাবদ্ধ হয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি উপহার দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সূত্র জানায়, ৯ ডিসেম্বর সোমবার খান জাহান আলী কলেজ মাঠ প্রাঙ্গনে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পিযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। সম্মানিত অতিথি থাকবেন শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আলহাজ¦ ডাঃ মোম্মেল হোসেন এমপি সভাপতি ও শেখ কামরুজ্জামান টুকু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।