বাজেটের কিছু জায়গা পলিশ করার প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। শুক্রবার সকালে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ কি বৈষম্যমূলক পুনরুদ্ধারের পথে?’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর।
পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা অর্থমন্ত্রীও সেরা বাজেট দিতে পারেন না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক অর্থনীতির যে মডেলে আমরা এগোচ্ছি তাতে উই আর রাইট অন দা মিডল অফ দি রাইট ট্র্যাক।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরাও বলছেন বাজেট বিজনেস ফ্রেন্ডলি হয়েছে। কিছু এরিয়া পলিশ করার প্রয়োজন আছে। বাজেটের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিগত বছরগুলোতে যে মোমেন্টাম আমরা অর্জন করেছি তা ধরে রাখা।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিগত ১২ বছরে একটি চমৎকার পথরেখা দিয়ে আমরা এসেছি। আমাদের মূল দায়িত্ব ছিল বাঙালিকে ঘরে ফিরিয়ে আনা, আস্থা দিয়ে বসবাস করানো। পেটে-ভাতে, জলে পানিতে, আলো-বাতাসে পৃথিবীর অন্যান্য মানুষের মতো ভদ্রভাবে বাস করার সেরকম একটি সুযোগ তৈরি করা। আমরা বোধ হয় সে পথে আছি। যদিও আমি স্বীকার করব যে গতিতে আমরা আশা করেছিলাম সে গতিতে আমরা পারিনি।
এম এ মান্নান বলেন, আওয়ামী লীগ অন্য রাজনৈতিক দলের মতো শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল নয়, একটি রাজনৈতিক আন্দোলন। এর মূল উদ্দেশ্য মানুষের বিকাশ। বিকাশের অর্থ উন্নয়ন।
সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি’র জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশের ইকনোমি পিকুলিয়ার মডেলে রয়েছে। একটা গোষ্ঠীতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী দেশকে পরিচালনা করছে। পুরা বাজেট অ্যালোকেশন গোষ্ঠীতান্ত্রিক হয়েছে।
তিনি বলেন, দশ হাজার লোক কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পেয়েছে তাদের থেকে দশ শতাংশ কর আদায় হয়েছে। আট লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, বিগত বছরগুলোতে একটা টার্গেটেড কিছু লোকের সুযোগ-সুবিধার জন্য বাজেট করা হয়েছে। অতিরিক্ত কয়েকগুণ খরচ করে যে প্রকল্প করছে সেগুলো জিডিপিতে চলে আসছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক মডেল চালু আছে তা বন্ধ হবে না। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে তাদের সুবিধা দিতে হবে, এক থেকে দুই শতাংশ মানুষের হাতে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে আছে। যারা অর্থনীতি সচল করবে তাদের কাছে টাকা যাচ্ছে না। অন্যদিকে মাথাপিছু আয় বেড়েছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) -এর নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটের মূল অংশ হচ্ছে বাজেট প্রণয়ন, আলোচনা, বাজেট পাস ও বাজেট বাস্তবায়ন। বাজেট প্রণয়নের আইনগত অধিকার সরকারের। কিন্তু যেহেতু বাজেটটি জনগণের জন্য তাই তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু তারা তা করছেন বলে আমরা দেখিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। সেখানকার প্রস্তাবনাগুলোরও বাজেটে প্রতিফলন দেখা যায় না। বাজেট ঘোষণার পর অনেক গণতান্ত্রিক দেশে তাদের সংসদে সেটি নিয়ে প্রচুর তর্ক-বিতর্ক হয়। কোনো কারণে বাজেট পাস না হলে সরকারের ক্ষমতায় অভিঘাত আসে। আমাদের মতো দেশে তেমন কোনো আলোচনা হয় না। এমনকি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলেও হয়নি। নিজের দলের সদস্যদেরও নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে জনগণের পক্ষে কণ্ঠ সোচ্চার করার। বাজেট বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার মধ্যেও কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই।