চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃখুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে বায়ু দূষণে এগিয়ে রয়েছে বাগেরহাট জেলা। এরপরই অবস্থান খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার। এসব জেলাগুলোতে বায়ু দূষণের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে শিল্প কলকারখানা, ইট ভাটা, সড়ক নির্মাণ ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া। গত ৬ মাসে বায়ুর মানের সূচক ২৫০ থেকে ৪শ’ পর্যন্ত উঠানামা করেছে। যেখানে বায়ুর মানের সূচক ২শ’-এর অধিক হলেই খুবই অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বলা হয়ে থাকে। এমনকি মাস্ক পরার পরামর্শ, সাইকেলে চলা নিষেধ, জানালা বন্ধসহ শিশু ও হৃদযন্ত্রের রোগীদের খুব জরুরি প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হতে নিরুৎসাহী করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ২৪ নভেম্বর রাতে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল প্রথম।
পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় সূত্র জানায়, বাগেরহাট এলাকার শিল্প কলকারখানায় বায়ু দূষণের সব থেকে পরিমাণ বেশি পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সিমেন্ট কারখানা এলাকাগুলোতে বায়ুর সূচক গত ছয় মাসে ৭শ’ পর্যন্ত উঠেছিল। পাশাপাশি বাগেরহাট থেকে মোংলা পোর্ট এলাকায় রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় যানবাহন চলাচলের সময় ধুলাবালির কারণেও বায়ু দূষণ হচ্ছে। এরপরই খুলনা জেলার সোনাডাঙ্গা ও ডাকবাংলার মোড় এলাকায় বায়ু দূষণ হচ্ছে। যানবাহন থেকে কালো ধোঁয়া এবং রাস্তার পাশে অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণাধীন কাজ করার জন্য এ দূষণের সৃষ্টি। এরপরই যশোর জেলার অধীনে নওয়াপাড়া-বসুন্দিয়া-মনিহার পর্যন্ত সড়ক সংস্কার এবং সাতক্ষীরা জেলার অধীনে খুলনা থেকে সাতক্ষীরা সড়কে সংস্কারের কারণে ব্যাপক হারে বায়ু দূষণ হচ্ছে। সম্প্রতি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সড়ক নির্মাণ কাজের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ব্যবহারসহ নির্মাণ সামগ্রী ঢেকে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে বায়ু দূষণ কম হচ্ছে নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায়। তবে ইট ভাটা, শিল্প কলকারখানা ও যানবাহনের কালো ধোঁয়া থেকে এসব জেলাগুলোতে বায়ু দূষণ হলেও তার পরিমাণ খুবই কম।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. দিলীপ কুমার দত্ত জানান, বায়ু দূষণ করার পিছনে আমরা নিজেরাই অনেকটা দায়ী। কারণ প্রত্যেকে যদি সচেতন হই তবে বায়ু দূষণ অনেকাংশ কমে যাবে। বাতাসে বালুর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে বায়ু দূষণের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। সেক্ষেত্রে নির্মাণ কাজ করার সময় পানি ব্যবহার করলে দূষণ কমবে। পাশাপাশি শিল্প কলকারখানা ও যানবাহন মালিকদেরও অসচেতনতা বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ।
খুলনা বিআরটিএ’র সহকারি পরিচালক মোঃ আবুল বাসার বলেন, প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের মত যানবাহনের ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন ও রুট পারমিটের কাগজপত্র হালনাগাদ নেই। যার মধ্যে সব থেকে বেশি হচ্ছে বাস, ট্রাক, বেবীট্যাক্সি এবং পিকআপ। এসব যানবাহনগুলোতে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করাসহ স্ব স্ব মালিকদের কাগজপত্র নবায়নের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক সাইফুর রহমান খান (উপসচিব) এ প্রতিবেদককে জানান, বায়ু দূষণের অনেকগুলি কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ইট ভাটা, শিল্প কলকারখানার ধোঁয়া, ফিটনেসবিহীন গাড়ির ধোঁয়া, নির্মাণ কাজ থেকে সৃষ্ট ধুলাবালি। সম্প্রতি বিশ্বের মধ্যে বায়ু দূষণে শীর্ষে অবস্থান করেছে ঢাকা শহর। সেই তুলনায় অবশ্য খুলনা বিভাগে বায়ু দূষণ কম। বিভাগের বায়ু দূষণ তিনটি স্থায়ী ষ্টেশনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে পরিমাপ করা হয়ে থাকে। খুলনা ও বাগেরহাট এলাকায় বায়ু দূষণ তুলনামূলক বেশি। তবে এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎপরতা অনেক বেশি।
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিভাগের সকল জেলা প্রশাসককে অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদসহ ড্রাম চিমনি ইট ভাটাগুলো পেলে তা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্মাণ কাজে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ছিটিয়ে নির্মাণ কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে যানবাহন থেকে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য বিআরটিকে প্রধান দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে চলাচল করলে কোন ভাবেই কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।