অনলাইন ডেস্কঃবাংলাদেশ সরকার বিদ্যুতের পর এবার ভারত থেকে জ্বালানি তেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারত থেকে জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করতে বাংলাদেশ বছরে ১০ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানি করবে। আর এই তেল আনতে মাটির নিচ দিয়ে ভারতের শিলিংয়ের নুমালীগড় রিফাইনারি (এনআরএল) থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর ডিপো পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন (আইবিএফপিএল) নামের এ প্রকল্পটি জ্বালানি মন্ত্রণালয় নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করার প্রস্তাব দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে পেট্রোলিয়াম পণ্যের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ৫৮ লাখ মেট্রিক টন। দেশে বিদ্যমান গ্যাস সঙ্কট থাকায় পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। আর ২০২১ সালের পর দেশের পুরনো বিভিন্ন ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলন কমতে থাকবে। তখন যদি দেশে কোনো নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত না হয়, তখন পেট্রোলিয়াম পণ্যের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
জানা গেছে, বতর্মানে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ১৫ লাখ মেট্রিক টন, যা গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোগুলোর মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। চাঁদপুরে অবস্থিত তেল বিপণন কোম্পানিগুলোর তিনটি ডিপোতে জ্বালানি তেলের বর্তমান চাহিদা প্রায় ১ দশমিক ৫৫ লাখ মেট্রিক টন।চট্টগ্রামে প্রধান স্থাপনা থেকে কোস্টাল ট্যাংকারযোগে বর্তমানে গোদনাইল, ফতুল্লা ও চাঁদপুরে জ্বালানি তেল পরিবহন করা হয়।
দিন দিন যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, কৃষি, ও শিল্প খাতে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নয়ন কাজে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্যাসের ঘাটতি মোকাবিলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। আর উত্তরাঞ্চলে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি শিল্প কারখানাও স্থাপিত হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা পাঁচ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন।
দেশের উত্তরাঞ্চলে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কৃষি সেচ মওসুম হিসেবে বিবেচিত হয়। এ সময় এসব এলাকায় জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ে। উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোয় নৌপথে ও রেলপথে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়। নৌপথে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও চিলমারী, রেলপথে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিপো, রংপুর ডিপো, নাটোর, রাজশাহী, হরিয়ানে জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হয়।
সূত্র জানিয়েছে, আইবিএফপিএল প্রকল্পের রিসিভ টার্মিনাল নির্মাণের জন্য পার্বতীপুর ডিপোতে ছয় হাজার ৭৬১ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ছয়টি ট্যাংক নির্মাণ করা হবে। এজন্য ১৮৭ দশমিক ৩৪ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ১২৬ দশমিক ১৪ একর জমি হুকুম দখল করা হবে। পাশাপাশি সৈয়দপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে তেল সরবরাহ করার জন্য ১২ একর জমি অধিগ্রহণ এবং ৮ একর জমি হুকুম দখল করা হবে।প্রকল্পের জন্য মোট ১৯৯.৩৪ জমি অধিগ্রহণ ও ১৩৪.১৪ একর জমি হুকুম দখল করা হবে।
এই প্রকল্পের জন্য সৈয়দপুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ডিজেল সরবরাহের জন্য প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি শাখা পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বার্ষিক প্রায় দুই লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল প্রয়োজন হবে। ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি থেকে পার্বতীপুর ডিপোতে আইবিএফপিএলের মাধ্যমে বার্ষিক ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেন আনা সম্ভব হবে।
এখন দেশে পার্বতীপুর ডিপোর চাহিদা দৈনিক প্রায় ১৫শ মেট্রিক টন। আর রংপুর বিভাগ ও তৎসংলগ্ন রংপুর ও চিলমারী ডিপোর দৈনিক চাহিদা ৫০০ মেট্রিক টন।
তথ্য অনুযায়ী,ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারির শিলিগুড়িস্থ মার্কেটিং টার্মিনাল থেকে দিনাজপুরের পাবর্তীপুর ডিপোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য ৩০৮ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকার জমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখলের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। বিপিসির নিজস্ব অর্থায়নে মেঘনা পেট্রোলিয়াম এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
এদিকে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি উইং বলছে, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব তহবিলে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ ও অনুমোদন পদ্ধতিসংক্রান্ত পরিকল্পনা বিভাগের পরিপত্রের ২ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অর্থ বিভাগ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। তবে অর্থ বিভাগের কোনো ছাড়পত্র ডিপিপির সাথে সংযুক্ত করা হয়নি।