চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেয়ার শর্তে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া গ্রামের দুটি পাড়ার ১২২০টি পরিবারের প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে তোলা হচ্ছে।
পাশাপাশি কয়েকটি পরিবার টাকা না দেয়ায় স্থানীয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দালালরা হুমকি দিচ্ছেন টাকা দিতে না পারলে ঘরে আলো জ্বলবে না। এমনিক যাদের বাড়িতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার সংযোগ দেয়া হয়েছে, টাকার নেয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে তাদের বাড়ির বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার খুলে নেয়া হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়নের মধ্যপুরুলিয়া ও দাড়িপর পাড়ায় যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, নড়াইল থেকে ১২২০ জন গ্রাহকের মধ্যে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য তাদের বাড়ির সামনে বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং তার বসানো হয়। আবাসিক সংযোগের জন্য একজন গ্রাহক অফিসে জামানত বাবদ ৪০০ টাকা এবং সমিতির সদস্য বাবদ ৫০ টাকা দিলে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার এবং মিটার গ্রাহকের বাড়িতে বসিয়ে দেয়া হবে। এরপর বাকি খরচ গ্রাহকের।
কিন্তু পুরুলিয়া ইউনিয়নের চন্দ্রপুর গ্রামের রকিবুল ইসলাম ও চাঁচুড়ি এলাকার মিলনসহ কয়েকজন ব্যক্তি বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে পুরুলিয়া মধ্যপাড়ার পলি বেগম, ফিরোজা বেগম, ইবাদুল শেখ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রুহুল কুদ্দুস, চান মোল্যা, খাজা মিয়া, লিটন শেখ, গফুর শেখ, জান্নু মোল্যা, সালামত শেখ, আকছির বাকা মিনা, দাড়িপর পাড়ার বাদল মোল্যা, সোহেল মোল্যা, সুরত গাজী, রবিউল ইসলাম, সাবু শেখসহ ১২২০টি পরিবারের প্রত্যেকের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন।
পুরুলিয়া মধ্যপাড়া গ্রামের শফিক মোল্যার স্ত্রী পলি বেগম বলেন, চন্দ্রপুর গ্রামের রাকিবুল মোল্যা বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেছেন। দাবিকৃত টাকা দেইনি বলে রকিবুল হুমকি দিয়েছেন, তোমার বাড়ির পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার খুলে নেয়া হবে। টাকা না দিলে ঘরে আলো জ্বলবে না। টাকা চাওয়ার বিষয়টি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এক অফিসারকে জানিয়েছি আমি।
পুরুলিয়া গ্রামের ভ্যানচালক ফেরদৌস গাজী বলেন, আমার বাড়ি খুঁটির আওতার বাইরে বলে রাকিবুল বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সংযোগের জন্য ১২ হাজার টাকা দাবি করেছেন। এক হাজার টাকা দিলেও আমার বাড়িতে খুঁটি পৌছায়নি। সোমবার রকিবুলের কাছে গেলে বলে দিয়েছেন টাকা ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে না।
একই গ্রামের বাবু কাজীর স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন, দুটি মিটারের জন্য রাকিবুলকে প্রাথমিকভাবে দুই হাজার টাকা দিয়েছি। রকিবুল আরও ছয় হাজার টাকা দাবি করেছেন।
একই গ্রামের ইবাদুল শেখ বলেন, একটি মিটারের জন্য তিন হাজার টাকা দিলেও এখনো আমার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। খুঁটিও বসানো হয়নি।
দাড়িপর গ্রামের বাদল মোল্যা বলেন, সুদের ওপর ২৫০০ টাকা এনে চাঁচুড়ি বাজারের মিলনকে দিলেও আমার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। এখন স্থানীয় শুকুর মিয়া ও তুহিন বাকি তিন হাজার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ি বাজার শাখার লাইন টেকনিশিয়ান মেঘনাথ বিশ্বাস বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না।
নিজেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইলেকট্রিশিয়ান দাবি করে রকিবুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে ওয়ারিং করার জন্য ১৫ জনের কাছ থেকে এক হাজার করে টাকা নিয়েছি। এর বাইরে টাকা নেয়া হয়নি। তবে দাড়িপর পাড়ায় কিছু লোক টাকা তুলতে পারেন।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইলের ডিজিএম দিলীপ কুমার বাইন বলেন, বিদ্যুতের জন্য টাকা নেয়ার ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার সাব-জোনাল অফিস এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে। তবে অনিয়মের বিষয়টি জোনাল অফিসের এজিএমকে আমি জানাব।
যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ নড়াইলের কালিয়া উপজেলার সাব-জোনাল অফিসের এজিএম রুবেল হোসেন বলেন, আবাসিক গ্রাহকের বাড়িতে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার পৌছে দিতে সরকারিভাবে রশিদের মাধ্যমে ৪৫০ টাকা জমা দিতে হবে। এর বাইরে অফিসের কোনো খরচ নেই। বাকিটা ব্যক্তিগত। আমরা এসব বিষয়ে ধারণা দিতে বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশ করেছি। তারপরও কীভাবে মানুষ দালালদের খপ্পরে পড়ে আমি বুঝি না। তবে স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেনি। আপনারা এসব দালালদের পুলিশে ধরিয়ে দিন।
তিনি আরও বলেন, এ বছরের মধ্যে কালিয়া উপজেলার সব গ্রামে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সেখানে এ ধরনের কাজ খুবই দুঃখজনক। টাকা নেয়ার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।