জাতীয় পর্যায়ে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়নে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ‘ব্লেন্ডেড শিক্ষা বিষয়ক মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়নের লক্ষ্যে এক কর্মশালা শনিবার (৮ জুন) সকাল ১০টায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।
সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, মহামারী কোভিডের সময় যখন সবকিছু বিপর্যস্ত, তখন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে শিক্ষা ব্যবস্থাকে চলমান রাখা ছিল এক ধরনের বড় সাফল্য। এটি ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদান। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, শিক্ষক সমাজ এবং বিডিরেন যার যার অবস্থান থেকে কাজ করেছেন। সেই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে সশরীরে ও অনলাইন শিক্ষা সমন্বিত করে উচ্চশিক্ষার জন্য ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং’ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইউজিসি। উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশ যেন পিছিয়ে না পড়ে সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে এই নীতিমালায়। এ ছাড়া ক্লাসরুম শিক্ষা অধিক অংশগ্রহণমূলক করা, শিক্ষার্থীদের কার্যকরভাবে শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত এবং শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক প্রভাব রাখাই হচ্ছে এই নীতিমালার উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। তাই বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের পরিকল্পনা ও সক্ষমতা দিয়ে ব্লেন্ডেড শিক্ষা পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবন ব্যতীত উন্নয়ন সম্ভব না। দুর্যোগের মধ্যেও দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা করা উচিত। এক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দরবন নিয়ে আরও গবেষণা করতে হবে। দেশের উন্নয়নে গবেষণাকে কাজে লাগাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা হবে, সম্পদ তৈরি হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় হবে মানবিক শিক্ষা, প্রযুক্তিগত শিক্ষা, নলেজ শেয়ারিং, ইতিহাস ও সংস্কৃতির শিক্ষার ক্ষেত্র।
ইউজিসি সদস্য বলেন, আগামীর উদ্ভাবনী বাংলাদেশ গড়তে বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দেবে, স্মার্ট সিটিজেন এবং সোনার বাংলাদেশ তৈরিতে অগ্রগামী ভূমিকা রাখবে। একই সাথে যেকোনো ধরনের অপপ্রচার থেকে নতুন প্রজন্মকে সচেতন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তিনি দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিযুক্ত ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি রিসার্চ ফোকাসড ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায় উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। গবেষণাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একটি মানুষকে উত্তরণ বা উন্নত করতে হলে মানসম্মত ও বিশ্বজনীন শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। সময়ের চাহিদা পূরণে বাস্তব ও কর্মমুখী শিক্ষা চালু করতে হবে। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে ‘ব্লেন্ডেড শিক্ষা বিষয়ক মহাপরিকল্পনা’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
কর্মশালার দ্বিতীয় পর্ব টেকনিক্যাল সেশনে ‘উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ব্লেন্ডেড শিক্ষা মহাপরিকল্পনা’ বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযক্তি ইনস্টিটিউটের প্রফেসর ড. মুহাইমিন আস সাকিব এবং ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং রোডম্যাপ: কস্ট মডেলিং অ্যান্ড অ্যাস্টিমেশন’ বিষয়ে প্রেজেন্টেশন দেন বাংলাদেশ রিসার্চ নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) সিইও মোহাম্মদ তৌরিত।
এ ছাড়া, ‘ব্লেন্ডেড শিক্ষা’বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ করণীয় শীর্ষক গ্রুপ ওয়ার্কে অংশগ্রহণ করেন ইউজিসি’র পরিচালক ড. দূর্গা রানী সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মুহাইমিন আস সাকিব, বিডিরেন এর সিইও মোহাম্মদ তৌরিত এবং ইউজিসি’র অতিরিক্ত পরিচালক বিষ্ণু মল্লিক। কর্মশালার তৃতীয় পর্বে গ্রুপ ওয়ার্কে প্রাপ্ত তথ্য, ফলাফল উপস্থাপন ও তার ভিত্তিতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এ কর্মশালায় খুলনা এবং বরিশাল অঞ্চলের ১১টি সরকারি ও ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্য প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন ইউজিসির অতিরিক্ত পরিচালক বিষ্ণু মল্লিক।