চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা স্বাধীন দেশ। আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব সশস্ত্রবাহিনীর ওপর ন্যস্ত। স্বাভাবিকভাবেই একটি স্বাধীন দেশের উপযুক্ত সশস্ত্রবাহিনী যেটা জাতির পিতা গড়ে তুলেছিলেন, তাকে আরও উন্নতমানের এবং আন্তর্জাতিক মানসম্পন্নভাবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা সবসময় আমাদের রয়েছে।’
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
‘একসময় বাংলাদেশকে ভিন্ন চোখে দেখা হতো, যা আমাকে কষ্ট দিতো’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) সদস্যরা ‘নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাই গার্ডস এর লক্ষ্য’ এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত সাহস, আন্তরিকতা, পেশাগত দক্ষতা, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেমের শপথে বলীয়ান হয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।’
সরকার প্রধান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসামান্য দূরদর্শিতায় রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে এই রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন।’
তিনি সকলকে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘আজকে এই গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যরা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে এবং নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’
পিজিআরসহ বিভিন্ন বাহিনী এবং সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আওয়ামী লীগ যখনই সরকারে এসেছে তখনই একে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পেশাগত প্রয়োজনে পিজিআর সদস্যদের সঙ্গে প্রতিদিন সাক্ষাতের উল্লেখ করে তিনি তাদেরকে নিজের পরিবারের সদস্য হিসেবেও মনে করেন। এরআগে প্রধানমন্ত্রী পিজিআর সদরদফতরে পৌঁছলে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পিজিআর কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম তাকে স্বাগত জানান।
পিজিআরের একটি সুসজ্জিত দল এ সময় প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। প্রধানমন্ত্রী পিজিআরের সকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ সময় দায়িত্ব পালনকালে আত্মোৎসর্গকারী পিজিআরের বীর সদস্যদের পরিবারের মাঝে অনুদান এবং উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ারমার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম-উজ-জামান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মাদ জাভেদ পাটওয়ারী, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং উচ্চ পদস্থ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সরকার গঠনের পরই তার সরকার পিজিআর সদস্যদের জীবনের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে প্রথম ঝুঁকি ভাতার প্রবর্তন করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করতে ইতোমধ্যে সেনানিবাসে একটি ইনডোর পিস্তল ফায়ারিং রেঞ্জের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, রেজিমেন্টের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ২০১৩ সালে তিনি এর জনবল বৃদ্ধিসহ পিজিআরকে একটি স্বতন্ত্র রেজিমেন্টে রূপান্তরিত করার ধারাবাহিকতায়, প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টে আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) সংযুক্তের ব্যবস্থা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নিরপত্তা প্রদান করবে, তাদের নিরাপত্তার কথাটাও আমাদের ভাবতে হয়, চিন্তা করতে হয়।’ তাছাড়া এর সদস্যদের বাসস্থলের জন্য ইতোমধ্যে একটি ১৪-তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণ কার্যক্রম চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে এই দেশ গড়ে উঠেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ বিশ্বে একটি সম্মানজনক অবস্থানে তার জায়গা করে নেবে, আমরা সবসময় সেই প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী একটি জাতি। কাজেই জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারের আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই এবং আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘ইতোমধ্যে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট আমরা দিয়েছি। আমাদের প্রবৃদ্ধিকে ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দারিদ্রের হার আমরা ২১ দশমিক ৮ ভাগে নামিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য আরও বড়, বাংলাদেশকে আমরা সম্পূর্ণ দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
তিনি বলেন, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমরা সক্ষম হয়েছি এখন আমাদের লক্ষ্য দেশকে দারিদ্রমুক্ত করা। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী আমরা উদযাপন করবো। আর স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করবো ২০২১ সালে। তখন বাংলাদেশ হবে দারিদ্র মুক্ত দেশ।’
১৭ মার্চ ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ সময়কে তার সরকার ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলে দেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। আমরা যে সেটা পারি, তা এই সরকারের গত ১০ বছরের শাসনামলে সমগ্র বিশ্বের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, আজকের বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন বাংলাদেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা নিজস্ব স্যাটেলাইটও আজকে উৎক্ষেপন করেছি (বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট)। যার ভিত্তি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই রচনা করে দিয়ে গিয়েছেন।
তিনি এ সময় পিজিআরের বিভিন্ন সময়ে শহিদ এবং শাহাদাৎ বরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানান। সূত্র: বাসস।