সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ড তদারকির নামে ডেকে নিয়ে হল রুমে নির্যাতন চালায় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। নির্যাতনের মুখে প্রাণ হারান ফাহাদ। এ ঘটনার প্রতিবাদে বুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাসের মূল গেইটের সামনে শহীদ মিনারে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এ কথা বলেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ছাত্ররাজনীতি বন্ধ চাই না। আমরা চাই, সাংগঠনিক যে রাজনীতি আছে সেটি বন্ধ হোক। এ বিষয়ে বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নয়। আমাদের আন্দোলন নষ্ট ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে। আমরাও স্বীকার করি যে আমাদের দেশের ইতিহাসে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু আজকে বুয়েটে যে নষ্ট ছাত্ররাজনীতি হয়েছে, যার জন্য আমরা আসলে বেঁচে থাকতে পারছি না। হলে ও ক্যাম্পাসে প্রতিটি শিক্ষার্থী ত্রাসের মধ্যে থাকে, আমাদের আন্দোলন তার বিরুদ্ধে।
প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এ বিষয়টির স্বীকৃতি দিয়েছেন। আমাদের আন্দোলনটি আসলে রাজনীতির বিরুদ্ধে নয়, বরং শুধুমাত্র বুয়েট ক্যাম্পাসে সংগঠনভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে।’
এছাড়া শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘গণমাধ্যমে বিভিন্ন টকশোতে যারা কথা বলছেন, তারা আমাদের দাবির মধ্যে পার্থক্যের জায়গাটা বুঝে নেন। বছরের পর বছর সাংগঠনিক রাজনীতির নামে জোর করে মিছিল মিটিংয়ে নেওয়ার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে সেটি আমরা আর এগোতে দিতে চাই না।’
বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন থেকে ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মধ্যে একটি হলো সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা।
এর আগে বুধবার (৯ অক্টোবর) সকাল সোয়া ১১টায় বুয়েট ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নতুন করে দশ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তাদের দশ দফা দাবির মধ্যে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েট থেকে সকল প্রকার রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দেন।
দশ দফা দাবি উত্থাপন করে আন্দোলনকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমের জন্য অস্বস্তিতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের বিভিন্ন সময় জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করা হয়। এমনকি না গেলে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাই এ কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
তারা অভিযোগ করে বলেন, বুয়েটের অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীই বিশেষ করে জুনিয়ররা রাজনৈতিক নির্যাতনের শিকার। জুনিয়ররা হলে উঠলে র্যাগ দেওয়া, তাদের রাজনীতিতে জড়াতে বাধ্য করা এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন এসবে অতিষ্ঠ সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এজন্যই আবরার ফাহাদকে প্রাণ দিতে হয়েছে। তাই অবিলম্বে আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে বুয়েট থেকে সকল ধরনের রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন নিষিদ্ধের আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
গত রবিবার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলায় আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ফাহাদ বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।