চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃযশোরের বেনাপোল কাস্টমস হাউসের নিরাপদ গোপনীয় ভোল্ট ভেঙে ২০ কেজি স্বর্ণ চুরি করেছে দুর্বৃত্তরা। চুরি যাওয়া সোনার বাজার মূল্য ১০ কোটি টাকা বলে কাস্টমস সূত্র জানায়। তবে ডলার ও টাকা-পয়সা খোয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। রাতে বিষয়টি স্বীকার করেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী। সোমবার রাত ১১টায় বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে কাস্টমসের পক্ষ থেকে।
চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে পোর্ট থানাসহ র্যাব, ডিবি, সিআইডি এবং পিবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। লকার ইনচার্জ শাহিবুল সর্দারসহ পাঁচজনকে বরখাস্ত (সাসপেন্ড) করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত শুক্রবার থেকে রবিবার ও ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় কেউ অফিসে ছিলেন না। সোমবার সকালে অফিস খুললে চুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। চুরির ঘটনায় কাস্টমস’র যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলামকে প্রধান করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার এস এম শামীমুর রহমান জানান, পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় গোপনীয় একটি কক্ষের তালা ভেঙে ফেলে চোরেরা। সেই কক্ষে রক্ষিত লোহার লকার ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খুলে ২০ কেজি সোনা লুট করে নিয়ে যায় তারা। লকারে মূল্যবান আরো বিপুল পরিমাণ সোনা, ডলার ও টাকা থাকলেও শুধুমাত্র ২০ কেজি সোনা নিয়ে যায় তারা। লকার ভাঙার আগে চোরেরা সিসি ক্যামেরার সবগুলো সংযোগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। লকারে কাস্টম, কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা, বিজিবি ও পুলিশের উদ্ধার করা সোনা, ডলারসহ বিভিন্ন দেশের মুদ্রা ও মূল্যবান দলিলাদি ছিল।
সূত্র জানায়, সোমবার সকালে ওই লকার রুমের তালা ভাঙা দেখে চুরি হয়েছে বলে আশঙ্কা করেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। খবর পেয়ে কাস্টমসের কর্মকর্তাসহ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। তারপর ওই স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বাইরের কাউকে সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিকেল পাঁচটা নাগাদ ডিবি, সিআইডি, পিবিআই, র্যাব ও বেনাপোল পোর্ট থানার কর্মকর্তারা ওই লকার রুমে প্রবেশ করেন। সেখানে হাত-পায়ের ছাপসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার শহিদুল ইসলাম, ডিএসবির এএসপি তৌহিদুল ইসলাম, ইন্সপেক্টর সৈয়দ মামুন হোসেন, র্যাব জেলা কর্মকর্তা কামরুজ্জামান, আতিকুর রহমান, এআরও জিএম আশরাফ, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান প্রমুখ। তারা যৌথভাবে তদন্ত চালাচ্ছেন।
কাস্টমস হাউজে বেশ কিছু বহিরাগত (এনজিও) বিভিন্ন শাখায় অবৈধভাবে কাজ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তাদের মধ্যে ক্যাশ শাখার দায়িত্বে থাকা এনজিও টিপু এ ঘটনায় জড়িত বলে পুলিশ জানায়। টিপু বর্তমানে পুলিশী হেফাজতে রয়েছে বলে জানানো হয়।
কাস্টমস হাউজে সিসি ক্যামেরায় আওতায় একটি সংরক্ষিত এলাকায় কিভাবে এ ধরনের চুরির ঘটনা ঘটলো তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সব মহলে। কাস্টমস হাউজে নিজস্ব সিপাইসহ আনসার ব্যাটালিয়নের একটি ইউনিটও নিরাপত্তার কাজে দায়িত্ব পালন করে থাকে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খান বলেন, ‘বেনাপোল কাস্টমসের লকারে বিকল্প চাবি ব্যবহার করে সোনা চুরি করা হয়েছে। এখানে পুলিশ সুপার মঈনুল হকসহ সিআইডি ও পিবিআই কর্মকর্তারা তদন্ত কাজ চালাচ্ছেন। আশা করা যায় দ্রুত চোরচক্রদের আটক করা সম্ভব হবে।