সাতক্ষীরা তালায় জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার সময় তালা উইমেন জব ক্রিয়েশন সেন্টার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে উত্তরণ আমার প্রকল্পের আয়োজনে ও ইউেিরাপিয়ন ইউনিয়নের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মহাসচিব মোঃ রফিকুল ইসলাম মোল্যা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রকৃত মৎস্যজীবীরা (জেলে) বংশানুক্রমিকভাবে ও পেশাগথভাবে মৎস্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত থেকে মুক্ত ও বদ্ধ জলাশায়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মৎস্য উৎপাদন, আহরণ এবং বিক্রি তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। অথচ তালা উপজেলাসহ সাতক্ষীরা জেলার বেশিরভাগ জলমহালগুলো মৎস্যজীবীদের দখলে নেই। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ঘোষণা দেয় ‘জাল যার জলা তার’। এ বিষয়ে সরকার নীতিমালাও তৈরী করে। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী প্রকৃত মৎস্যজীবী ছাড়া অন্য কারো জলমহাল পাওয়ার সুযোগ নেই। ঘোষিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, দেশের খাস জলাশয় ও জলমহালসমূহ প্রকৃত মৎস্যজীবীদের অনুকুলে বন্দোবস্ত প্রদানে অগ্রাধিকার দেয়া এবং রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ, উৎপাদন বৃদ্ধি ও জলমহালসমূহ সরকারের দখল স্বত্ত্ব বজায় রাখাসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণও করা হবে।
অথচ বিপুল সংখ্যক জলমহাল থাকলেও বেশিরভাগ জলমহাল চলে গেছে প্রভাবশালি অমৎস্যজীবীদের দখলে। অন্যদিকে অনেক জলমহাল ভরাট হয়ে মাছ চাষের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এ কারণে জেলার কয়েক হাজার নারী পুরুষ মৎস্যজীবী এখন বাপ-দাদার পেশা হারিয়ে ফেলতে বসেছে। বিকল্প আয়ের জন্য তারা বর্তমানে বংশানুক্রমিক মৎস্য পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা জেলায় ২০ একরের উর্ধ্বে জলমহাল আছে ৪০ টি, এর আয়তন ১৫৮৬.১৪ একর এবং ২০ একর পর্যন্ত জলমহাল রয়েছে ৩৪৯টি, যার আয়তন ২৭৩৩.৩৭ একর। তালা উপজেলায় উন্মুক্ত জলমহাল রয়েছে ২০ একরের উর্ধ্বে জলমহাল ৮টি, এরমধ্যে চিংড়ীমহল ১টি। জলমহালের মধ্যে ইজারা হয় ৪টি এবং ৩টি বেদখল রয়েছে। ২০ একরের নি¤েœ জলমহাল রয়েছে ৩৭ টি, ইজারা দেয়া হয় ২৫ টি। বাকি জলমহল বেদখল আছে। এই বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে এক সময় জেলে সম্প্রদায়ের প্রথাগত অধিকার ছিল। নদী ভরাট, অধিক খাদ্য ফলাও নীতির কারণে সৃষ্ট ওয়াপদা বাঁধ, চিংড়ী ঘেরের মধ্যে অবস্থিত সরকারী খাস জমি চিংড়ি চাষীদের লীজ দেয়ার কারণে মৎস্যজীবীরা প্রথাগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হতে ক্ষয়িঞ্চু হয়ে পড়েছে। যার ফলে দরিদ্র অসহায় মৎস্যজীবীরা আরো দরিদ্র ও বেকার হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, অমৎস্যজীবীদের হাতে জলমহালগুলি থাকায় মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি অমৎস্যজীবীদের দ্বারা বিচরণ ভূমি সংকুচিত হওয়ার কারণে অনেক প্রজাতির প্রাকৃতিক মাছও বিলুপ্ত হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি অ-মৎস্যজীবী অবৈধ প্রভাবশালী দখলদারদের হাত থেকে জলমহাল উদ্ধার করা, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী মৎস্যজীবীদের তালিকা হালনাগাদ করে বাদ পড়া জেলেদের জেলে কার্ড প্রদান, সাগর ও নদ-নদীতে মৎস্য আহরণকারী ও ইলিশ আহরণকারী জেলেদের চিহ্নিত করে প্রচলিত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা,উন্মুক্ত জলমহালে সরকারী দখল ও রাজস্ব আয় এবং জেলেদের শান্তিপূর্ণ মৎস্য আহরণের স্বার্থে প্রকৃত জেলেদের টোকেন রাজস্বের বিনিময়ে লাইসেন্স বা অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে।