খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের আয়োজনে ÔInternational Conference on STEM and the 4th Industrial Revolution 2022Õ শীর্ষক তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবনে সকাল ৯টা থেকে কী-নোট পেপার উপস্থাপনের মাধ্যমে শুরু হয়। এ দিন তিনটি কী-নোট পেপার উপস্থাপন ছাড়াও ৪ জন আমন্ত্রিত বক্তা ও প্লানেরি বক্তা ঝঃবস এর বিভিন্ন বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখেন। দিনভর ৫টি প্যারালাল সেশনে নানা বিষয়ে অর্ধশতাধিক সায়েন্টিফিক পেপার উপস্থাপন ও তাতে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে সম্মেলন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
সকাল ৯টায় দিনের প্রথমে কী-নোট সেশন-৩ এ কী-নোট স্পিকার ছিলেন কানাডার ইউওয়ার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জিয়ানহোং উই। সকাল ১০টায় প্লেনারি টক সেশন ওয়ান এ স্পিকার ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিভাগের প্রফেসর ড. এ এ মামুন, বাংলাদেশ ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিকাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মেদ নূরুল আবসার।
কী-নোট সেশন ফোর এ কী-নোট স্পিকার ছিলেন জাপানের ইয়ামানাসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাসানোরি হেনায়ো। তিনি ৪র্থশিল্প বিপ্লবকে সামনে রেখে জাপানের কর্মসূচি এবং তা ছাড়িয়ে সোসাইট-৫ কর্মসূচি ও চলমান কার্যক্রম তুলে ধরেন। তিনি বলেন ডাটা সায়েন্স এখন সময়ের উপযোগী হিসেবে প্রয়োজন হয়ে পড়ছে এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা,রোবটিক সহায়তাও প্রয়োজন হবে। কেননা মানুষ যেখানে কাজ করতে অক্ষম অথবা সীমাবদ্ধ সেখানে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা রবোটিক প্রযুক্তির দরকার হবে। এ বিষয়ে জাপানের শিল্প ব্যবস্থায় ইতোমধ্যে কোর্সকারিকুলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করাসহ সরকারের কৌশল নির্ধারণের বিষয়ে তুলে ধরেন।
পরে স্পেশাল ইভেন্টে ওয়াশ হেলথি খুলনা শীর্ষক বিষয়ে এক প্রাণবন্ত উপস্থাপন ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার শেষ পর্যায়ে সামগ্রিক বিষয়ের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, পুরাতন সভ্যতাগুলো বিলীন হয়েছে মূলত পানি ও পরিবেশ দূষণের কারণে। তাই আজ আমাদেরকেও ভাবতে হবে জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে ক্রমবর্ধমান উদ্ভুত চ্যালেঞ্জ আসছে। এর মধ্যে পানীয়জল সংকট অন্যতম একটি ইস্যু। বিশেষ করে ভূ-গর্ভস্থ পানির উৎস সংকট ও তা দিনে দিনে দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠার সমস্যা ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় শহরাঞ্চলে পানি ব্যবহারের পর বিরাট অংশ ওয়েস্ট হিসেবে চলে যাচ্ছে। এ পানি ট্রিটমেন্ট করে দৈনন্দিন ব্যবহারযোগ্য করা গেলে ব্যাপক সাশ্রয় হবে বলে উল্লেখ করেন। তিনি ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রথমত পাইলটিং হিসেবে সরকারি-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ভিত্তিতে ওয়েস্ট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি গ্রহণের ওপর জোর দেন এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন বিষয়ে চিন্তা কাজে লাগানো যায় কি না তা ভেবে দেখা হবে বলে উল্লেখ করেন।
প্রফেসর ড. অনির্বাণ মোস্তফার সভাপতিত্বে এ স্পেশাল সেশনে আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল্লাহ, পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চিফ ওপারেটিং অফিসার ড. আব্দুল্লাহ আল-মুয়িদ, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের পরিচালক (প্রোগ্রাম) হোসাইন আই আদিব এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটিএন-বুয়েটের প্রোজেক্ট ম্যানেজার আলাউদ্দিন আহমেদ বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য রাখেন। পরে আমন্ত্রিত অতিথিদের হাতে শুভেচ্ছা-স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন উপাচার্য এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি প্রফেসর ড. আফরোজা পারভীন।
সম্মেলন আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মোঃ হায়দার আলী বিশ্বাস জানান, নির্ধারিত সিডিউল অনুয়ায়ী সম্মেলনের বিভিন্ন সেশন যথারীতি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং দেশ-বিদেশের অংশগ্রহণকারী শিক্ষক, গবেষক ও ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিদের সরাসরি ও ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণে প্রতিটি সেশন প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। তিনি বিভিন্ন সেশনে কী-নোট স্পিকার, প্লেনারি স্পিকার এবং ইনভাইটেড স্পিকারদের কাছে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জানার কৌতুহল ও আগ্রহ তুলে ধরে বলেন তা ছিলো উল্লেখযোগ্য। দুপুরের পর নির্ধারিত সিডিউল অনুয়ায়ী ১টি কী-নোট সেশন, প্যরালাল – টেকনিক্যাল সেশন ও প্লেনারি টক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৫টায় দিনের শেষে কী-নোট স্পিকার হিসেবে পেপার উপস্থাপন করেন ২০২২ আইট্রিপলই প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট যুক্তরাষ্ট্রের ভর্জিনিয়া টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. সাইফুর রহমান। সন্ধ্যা সোয়া ৬টা থেকে পৌনে সাতটা পর্যন্ত প্লেনারি টক-২ সেশন অনুষ্ঠিত বলেও জানান সদস্য-সচিব। আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ৩টি কী-নোট পেপারসহ দু’দিনে ৫টি কী-নোট পেপার, চারটি স্পেশাল ইভেন্ট, পাঁচটি প্যারালাল টেকনিক্যাল সেশন ছাড়াও প্লেনারি টক সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসব সেশনে স্থাপত্য, রসায়ন, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা, ইলেক্ট্রনিক এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিষয়ে নির্ধারিত সংখ্যক পেপার উপস্থাপন করা হয়।
এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ২৫৭টি পেপার জমা হয়, তার মধ্যে ১২০টি পেপার গৃহীত হয়েছে, যার হার ৪২.০৮%। সম্মেলনে বাংলাদেশসহ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, ভারত ও নেপাল থেকে প্রতিনিধিরা সরাসরি ও ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়া দেশি-বিদেশি ৬১টি ইনস্টিটিউট থেকেও প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করছেন। ৯টি দেশের ৭৫ জন রিভিউয়ার রয়েছে বলে জানান আয়োজক কমিটির সদস্য-সচিব।