চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ দীর্ঘ দশ বছর বন্ধের পর খুলনার ঐতিহ্যবাহী দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী চালু করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে ভাইয়া গ্রুপকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে তারা চালু করতে ব্যর্থ হলে, সরকার এ বছরের শেষের দিকে মিলটি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করে উৎপাদনে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি ও বন্ধ মিলটির শ্রমিকদের অসহায়ত্ব বিবেচনায় রয়েছে সরকারের। গতকাল রবিবার নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে শিল্প সচিব মোঃ আব্দুল হালিম একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, লোকসানের দোহাই দিয়ে ভাইয়া গ্র“প খুলনার দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী বন্ধ করে দেয়। শত শত শ্রমিক অসহায় হয়ে পড়ে। বিভিন্ন সময়ে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শ্রমিকদের কিছু অনুদান দেয়া হয়েছে।
শিল্প সচিব আরও বলেন, “ভাইয়া গ্র“পের মালিকাধীন দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীর বন্ধ হওয়ার আগপর্যন্ত অডিট কার্যক্রম চলছে। ব্যাংকের পাওয়া পরিশোধের জন্য ভাইয়া গ্র“পকে তাগিদ দেয়া হয়েছে; ব্যাংককেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ঋণ আদায়ের। পাশাপাশি তাদের মালিকানায় মিলটি চালু করার কথাও বলা হয়েছে। ভাইয়া গ্র“প অপারগতা প্রকাশ করলে শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সরকারি উদ্যোগেই মিলটি চালু করা হবে। মিলটি আর এভাবে বসিয়ে রাখা হবে না।”
সূত্রমতে, ১৯৫৬ সালে শহরের টুটপাড়া মৌজায় প্রায় ১৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত খুলনা দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে পাঁচ শতাধিক স্থায়ী শ্রমিক ছিল। দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক অন্তত ২৫০ জন। ১৯৮৪ সালে সরকার এই কারখানাটি সুইডিশ কোম্পানির কাছে ইজারা দেয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে তারা ভাইয়া গ্র“পের কাছে ইজারা হস্তান্তর করে। ভাইয়া গ্র“প সরকার বা শ্রমিকদের সাথে আলোচনা ছাড়াই ২০১০ সালের ১ ফেব্র“য়ারি কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। এর কয়েক মাস পর ওই বছর ১৮ আগস্ট দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়ে সকল শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকুরি থেকে বিদায় দেয়।
পরবর্তীতে ২০১১ সালে ৫ মার্চ খুলনার খালিশপুরে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই বছর ২৩ মার্চ শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসন ফ্যাক্টরীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বুঝে নেয়। এ ঘটনার পর সরকারি উদ্যোগ ব্যাহত করতে ইজারা গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ভাইয়া গ্র“প ওই মাসেই হাইকোর্টে রিট করে ফ্যাক্টরীর কর্তৃত্ব ফিরে পেতে। কিন্তু আদালত রিট খারিজ করে দেয়। রায়ের পর সরকারিভাবে ফ্যাক্টরীটি পুনরায় চালুর বিষয় নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরেবহু চিঠি চালাচালি হয়। সেই থেকে দীর্ঘ বিরতির পর বন্ধ মিলটি চালুর সরকারি উদ্যোগ গ্রহন করায় আশার আলো দেখছে খুলনাবাসী।
দীর্ঘ দশ বছর খুলনার ঐতিহ্যবাহী এ মিলটি বন্ধ থাকায় অনাহার-অর্ধাহার ও বিনা চিকিৎসায় ফ্যাক্টরীর ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ দিলখোশ মিয়াসহ অন্তত ৭১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।