চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে বিদ্রোহী প্রার্থীরাই এখন আওয়ামী লীগের গলার কাঁটা। দলটির হাইকমান্ড বার বার কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েও নির্বাচনী মাঠ থেকে তাদের সরাতে পারছে না। এরমধ্যে ঢাকা দক্ষিণের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড অন্যতম। একসময় ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম এ ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর ছিলেন। ২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এখন থেকে দলের সমর্থন নিয়ে নির্বাচিত হন তারই ভাগ্নে মো. হাসান পিল্লু। এবারও তিনি দলীয় সমর্থন পেয়েছেন। যদিও ভাগ্নের ওপর ভরসা রাখতে না পেরে নিজের ছেলে ইরফান সেলিমকেই প্রার্থী করেছেন হাজী সেলিম।
বড়কাটরা, ছোটকাটরা, দেবদাস ঘাট লেন, কমিটিগঞ্জ, চম্পাতলী লেন ও ইমামগঞ্জ নিয়ে গঠিত ঢাকা দক্ষিণের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড। এবারের নির্বাচনে এখানে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন তিন প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মো. হাসান পিল্লু লড়ছেন মিষ্টিকুমড়া প্রতীক নিয়ে। বিদ্রোহী হিসেবে তার মামাতো ভাই ইরফান সেলিমের প্রতীক টিফিন ক্যারিয়ার। ফলে এ ওয়ার্ডের নির্বাচন যতটা না মামাতো-ফুফাতো ভাইয়ের দ্বৈরথ, তার থেকেও বেশি মামা-ভাগ্নের।
স্থানীয় নেতাকর্মীরাও এমপি হাজী সেলিমের বিপক্ষে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে নামছেন না। সব মিলিয়ে এখানে বাড়তি সুবিধায় রয়েছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মোহাম্মদ ইলিয়াস। দলের এই ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, উভয় সংকটে রয়েছেন তারা। একদিকে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী পিল্লু, অন্যদিকে স্থানীয় এমপি হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান। আবার স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী-অঙ্গ সংগঠনের কমিটিতে একক আধিপত্য হাজী সেলিম সমর্থকদের। বলতে গেলে তার রাজনৈতিক উত্থান এ ওয়ার্ড থেকেই। সব মিলিয়ে দলীয় সমর্থন পেলেও জোরালোভাবে মাঠে নামতে পারছেন না ভাগ্নে হাসান পিল্লু। অথচ আগের নির্বাচনে হাজী সেলিমই তাকে দাঁড় করিয়েছিলেন। কিন্তু এবার নিজের ছেলে ইরফান সেলিমের জন্য দলের সমর্থন চেয়ে না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী করেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হাসান পিল্লু বলেন, ‘আমি দলীয় মনোনয়ন পেয়েছি। কিন্তু স্থানীয় এমপির ছেলেই আমার বিদ্রোহী প্রার্থী। আশা করছি দলীয় হাইকমান্ড বিষয়টি দেখবে।’
তিনি এও বলেন, ‘আমার নির্বাচনী প্রচার চালানোর কারণে দলের নেতাকর্মীদের এলাকাছাড়া করা হচ্ছে। অনেককে মারধর করে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়িতে। কেউই মাঠে নামতে পারছে না। প্রচার চালাতে দেওয়া হচ্ছে না।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্রোহী প্রার্থী ইরফান সেলিম বলেন, ‘আমি নির্বাচনী মাঠে আছি। কারো প্রচারণায় বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি।’
বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সরে দাঁড়ানোর কোনো নির্দেশনা আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে দলের পক্ষ থেকে কোনো কিছু বলা হয়নি।’
সরেজমিন দেখা যায়, ডিএসসিসির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত চকবাজার থেকে মিটফোর্ড পর্যন্ত সড়কগুলোয় যানজট লেগেই থাকে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে। এর প্রভাব পড়ছে আশপাশের এলাকায়ও। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। চকবাজার থেকে মিটফোর্ড পর্যন্ত রাস্তার এক পাশে ড্রেন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ফলে দিনের পুরো সময়টা বন্ধ থাকে এই রাস্তা। চকবাজারের মোগলটুলির রাস্তার সঙ্গে বাবুবাজার, সোয়ারীঘাট, বেড়িবাঁধের সংযোগ সড়ক থাকায় এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কের একদিকে নালা তৈরি, অন্যদিকে অবৈধ দোকানপাট ও মালামাল রেখে তা দখল করে রেখেছেন দোকানিরা।
স্থানীয়রা জানান, বছরের প্রায় সময়ই খোঁড়াখুঁড়ি চলে এই রাস্তায়। গত এক মাস ধরে ঢিলেঢালাভাবে ড্রেন সংস্কারের কাজ চলছে। এ কারণে রাস্তাটি বন্ধ থাকায় পুরো চকবাজার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু যানজট না, এলাকায় প্রতিটি মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। অলিগলিতে রয়েছে অসংখ্য কেমিক্যাল ও প্লাস্টিক কারখানা। নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার না করায় বেড়েছে দুর্গন্ধ, মশার উপদ্রব তো আছেই। নেই খেলার মাঠ এবং কমিউনিটি সেন্টার।
ভোটারদের দাবি, চকবাজারের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে অপরিকল্পিত গুদাম, কারখানাগুলো স্থানান্তর করার, যাতে চুড়িহাট্টা বা নিমতলীর মতো ভয়ানক কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। ভোটাররা বলছেন, ওয়ার্ডটি নিরাপদে বসবাস উপযোগী করতে যে কাজ করবে তাকেই তারা নির্বাচিত করবেন।
ওয়ার্ডটির মধ্যে আছে দেবীদাস ঘাট লেন, চম্পাতলী লেন, জুম্মন ব্যাপারী লেন, ইমামগঞ্জ, লালগোলা, রজনী বোস লেন, সোয়ারীঘাট, রায় ঈশ্বর চন্দ্র শীল বাহাদুর স্ট্রিট, সদর নারায়ণ দাস লেন ও মিটফোর্ড রোড। ৫ বর্গকিলোমিটারের এই ওয়ার্ড হাজী সেলিমের এলাকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৪ সালে তিনি এই ওয়ার্ডে নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন। ’৯৬ এর নির্বাচনে হাজী সেলিম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তার স্ত্রী গুলশানারা সেলিম উপনির্বাচনে কাউন্সিলর হন। ২০০২ সালের সিটি নির্বাচনে ওয়ার্ডটি বিএনপির দখলে চলে যায়। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হাজী সেলিমের ভাগ্নে মো. হাসান পিল্লু নির্বাচিত হন।