চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃ অবশেষে গুঞ্জনই সত্যি হলো। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ভাঙল। দলীয় প্রধান অলিকে বাদ দিয়েই নয় সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন বিদ্রোহীরা।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মওলানা আকরম খাঁ হলে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
নতুন কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন আবদুল করিম আব্বাসী। আর মহাসচিব হয়েছেন শাহাদাত হোসেন সেলিম।
খুব শিগগিরই বর্ধিত সভা করে এলডিপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে এবং তারা ২০ দলেই থাকবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
গত ৯ নভেম্বর ২০৩ সদস্য বিশিষ্ট দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির তালিকা প্রকাশ করে এলডিপি। সাত মাস ধরে দলের কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকার অভিযোগে এই কমিটিতে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে রাখা হয়নি। এরপর থেকেই এলডিপিতে ভাঙনের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
নতুন কমিটিতে সেলিমের ‘সম্মানজনক’ পদ না থাকায় তার অনুসারীরা ভীষণ রকম ক্ষুব্ধ হন। কর্নেল অলির বিরুদ্ধের স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে সেলিমের সঙ্গে একজোট হন এলডিপির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক হুইপ আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল করিম আব্বাসী, সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গণি। এর মধ্যে গত শনিবার রাজধানীর উত্তরায় বৈঠক করেন অলিবিরোধী নেতারা। সেই বৈঠকেই নতুন কমিটি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, গত তিন মাস আগে থেকে কর্নেল অলির সঙ্গে রাজনৈতিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মুলত জাতীয়তাবাদী ঘরনার। আর তিনি জাতীয়তাবাদের বিপক্ষে বেশ কিছুদিন ধরে অবস্থান নিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী দলের বিপক্ষে কথা বলছেন। এগুলো আমি মানতে পারি নি। কর্নেল অলি তার একক সিদ্ধান্তে মুক্তি মঞ্চ গঠন করেছেন, যার উদ্দেশ্য আমাদের কাছে পরিস্কার না। আমরা ভেবেছিলাম, খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য তিনি এই মুক্তি মঞ্চ করেছেন। কিন্তু পরে দেখলাম, সেখান থেকে বিএনপির বিরুদ্ধেই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আবার তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে জামায়াতের পক্ষ নিচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য আমাদের কাছে ভালো বলে মনে হচ্ছে না। যে কারণে তাকে ছাড়া কিছু করার চিন্তা করছি।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারার সঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল অলি আহমেদ ও বিএনপির অপর ২৪ মন্ত্রী-এমপি একত্রিত হয়ে দলটি গঠন করেন। তবে ২০০৭ সালে আদর্শগত কারণে বিকল্প ধারা এলডিপি থেকে বের হয়ে যায়। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এলডিপি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে অবস্থান করে। কিন্তু ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে এলডিপি মহাজোট থেকে বের হয়ে আসে এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। ওই নির্বাচনে ১৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে মাত্র একটি আসনে জয়লাভ করে। দলের সভাপতি অলি চট্টগ্রাম-১৩ আসনে জয়লাভ করেন। ২০১২ সালে এলডিপি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটে যোগ দেয়। এই জোট ২০ দলীয় জোটে বর্ধিত হওয়ার পর কর্নেল অলি বেশ কিছুদিন এর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের ভরাডুবির পর গত জুনের শেষ দিকে তিনি গঠন করেন ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে নতুন আরেকটি জোট।