ভারতের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রবিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর ১টায় উপাচার্যের কার্যালয়ে স্বাক্ষরিত হয়। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী এই এমওইউতে স্বাক্ষর করেন। এমওইউ স্বাক্ষর শেষে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এবং ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সুশান্ত কুমার চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে তা উভয়পক্ষের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
এ সময় সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে রিসার্চ ফোকাসড ইউনিভার্সিটি হিসেবে উল্লেখ করে ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিসিপ্লিন বিশ্বমানের ওবিই কারিকুলামের আওতায় এসেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এ বছর এপিএ মূল্যায়নে আমরা চতুর্থ স্থান অর্জন করেছি। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপাত বিশ্বমানের। অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের ফ্রেমওয়ার্ক অনুসরণ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামগুলোর অ্যাক্রেডিটেশন অর্জনের লক্ষ্যে এখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্বাক্ষরিত এই সমঝোতা স্মারকের ফলে শিক্ষা-গবেষণা ও প্রকাশনায় পারস্পরিক সহযোগিতাসহ গ্র্যাজুয়েটদের দক্ষতা উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন আজ সর্বত্র দৃশ্যমান। বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেনের দূরদর্শী নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মানোন্নয়ন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা সক্ষমতা ও অনুদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বেশকিছু এমওইউ স্বাক্ষর হয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতেও অনুদান দেওয়া হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলো সত্যিই প্রশংসনীয় এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকরণীয়।
এ সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর অমিত রায় চৌধুরী, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, দ্য অফিস অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক প্রফেসর সেহরীশ খান, উপাচার্যের সচিব সঞ্জয় সাহা উপস্থিত ছিলেন।
এই এমওইউ স্বাক্ষরের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদীয়মান গ্র্যাজুয়েটরা শিল্পক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, গবেষণা, উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য উপকৃত হবে। এ ছাড়াও স্বাক্ষরিত এমওইউতে একাডেমিক প্রকাশনা এবং প্রতিবেদন বিনিময়, যৌথ শিক্ষামূলক কার্যক্রম, শিক্ষার্থী, স্টাফ এবং ফ্যাকাল্টি এক্সচেঞ্জ, গবেষণা ও উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি, অতিথি বক্তৃতা, অনুষদ উন্নয়ন কর্মসূচির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
এর আগে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সুশান্ত কুমার চক্রবর্তীকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। এ সময় তিনি তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম খচিত ক্রেস্ট উপহার দেন।
পরে দুপুর ২.৩০ মিনিটে ফিশারিজ এন্ড মেরিন রিসোর্স টেকনোলজি (এফএমআরটি) ডিসিপ্লিনের উদ্যোগে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে এক সায়েন্টিফিক টক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তিনি বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে রিসার্চ ফোকাসড ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুন্দরবন ও উপকূলের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে এ বিষয়ে গবেষণাও করা হয় বেশি। সুন্দরবন নিয়ে গবেষণার জন্য এখানে আইআইএসএসসিই নামে একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। ভবিষ্যতে ইনস্টিটিউট এ অঞ্চলের জন্য একটি গবেষণা হাবে পরিণত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে ‘ভারতের সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ইকোসিস্টেমের ইকো সম্ভাব্যতা এবং ইকোসিস্টেম স্থিতিস্থাপকতা: হুমকি, অভিযোজিত সহ-ব্যবস্থাপনা এবং ইকো পুনরুদ্ধার কৌশল’ শীর্ষক পেপার উপস্থাপন করেন ভারতের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এফএমআরটি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. গোলাম সরোয়ার। সঞ্চালনা করেন সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ তারেক আরাফাত। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনসমূহের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।