১৪৯ রানে অলআউট আর ৪ উইকেটে ১৫৮। প্রথম স্কোর চেন্নাই টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের। দ্বিতীয়টি ম্যাচের তৃতীয় দিন পর্যন্ত বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের। দুই স্কোরের পার্থক্যই বলে দিচ্ছে, প্রথম ইনিংসের তুলনায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো করেছেন। আরও পরিষ্কার করে বললে, প্রথম ইনিংসে নাজমুল হোসেনদের ব্যাটিং ছিল বাজে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসীই দেখা গেছে। এমন পরিবর্তনের কারণ কী?
আজ ভারতের বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ দলের পক্ষ থেকে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প। তাঁর কাছেই জানতে চাওয়া হয়েছিল এক রাতের ব্যবধানে ব্যাটিংয়ে দৃশ্যমান পরিবর্তনের কারণ।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশকে শুরুতেই ৬২ রান এনে দিয়েছেন দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম। কিছুক্ষণের ব্যবধানে দুজন ফিরে গেলেও দিনের বাকি সময়ে এক প্রান্ত আগলে রাখেন অধিনায়ক নাজমুল। তিনে নামা এই ব্যাটসম্যান দিনের শেষ পর্যন্ত ৬০ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত। যা টেস্টে সর্বশেষ ১১ ইনিংসে তাঁর প্রথম ফিফটি, প্রতিপক্ষের মাঠে ১৬ ইনিংসে প্রথম।
হেম্পের মতে, নাজমুলসহ বাংলাদেশের অন্য ব্যাটসম্যানদের প্রথম ইনিংসের তুলনায় ভালো করার অন্যতম কারণ ভারতীয়দের বোলিংয়ের নিশানা, ‘দুই ইনিংসের মধ্যকার পার্থক্য হচ্ছে বল মোকাবিলায়। প্রথম ইনিংসে ভারতের বোলাররা স্টাম্পকে লক্ষ্য বানিয়ে বল করে গেছে। ওখানেই সফল হয়েছে। আমরা জুটি গড়তে পারিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে আমরা জুটি গড়তে পেরেছি। এখানে আমাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আমরা সব সময়ই রান করতে চেয়েছি। আমার মনে হয়েছে এই ইনিংসের শুরু ওরা আমাদের পরীক্ষায় ফেলতে চেয়েছে, স্টাম্পের ভেতরে ও স্টাম্পের আশপাশে বল করে গেছে।’
ভারতের বোলিং আক্রমণকে মানসম্পন্ন উল্লেখ করে হেম্প যোগ করেন, ‘নিজেদের মাঠে ওরা খুবই আত্মবিশ্বাসী হয়ে খেলে। আমাদের দিক থেকে ব্যাপারটা ছিল কীভাবে সামাল দেওয়া যায়। এই ভাবনা থেকে আমরা রান বের করতে চেয়েছি। ব্যাটসম্যানদের বলা হয়েছে তারা যেন নিজেদের শক্তির জায়গায় আস্থা রেখে খেলে।’
০১২ সালের পর ভারত নিজেদের মাটিতে সিরিজ হারেনি। চেন্নাই টেস্টেও বাংলাদেশের বিপক্ষে জয়ের সম্ভাবনায় অনেক এগিয়ে রোহিত শর্মার দল। বাংলাদেশকে ৫১৫ রানের বড় লক্ষ্য দিয়ে ভারত এখনো ৩৫৬ রানে এগিয়ে। ম্যাচে ভারতের এই শক্ত অবস্থান ও দলটির পেছনের সাফল্য বিষয়ে হেম্পেরও জানা। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ দলের খেলার কৌশল যতটা সম্ভব রান করে যাওয়াই বলে জানালেন ব্যাটিং কোচ, ‘আমাদের (ব্যাটসম্যানদের) মধ্যে সুযোগ নেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা মাথায় থাকতেই হবে, না হলে খেলতে আসার মানে নেই। আমরা বুঝতে পারছি, প্রতিপক্ষের দিক থেকে হুমকি কী কী, একই সঙ্গে সুযোগও–বা কী আছে। আমাদের চিন্তা হচ্ছে নিজেদের সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে ম্যাচে কীভাবে প্রভাব রাখা যায়। যেমন নির্দিষ্ট একটা সময়ে বোলারকে এলোমেলো করে দেওয়া, আবার ফিল্ডারের বিষয়েও সচেতন থাকা, যাতে একজনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধরনের বল টানা করে যেতে না পারে।’
ভারতের বোলাররা মানসম্পন্ন হলেও দিন শেষে সবাই মানুষ মনে করিয়ে হেম্প আরও বলেন, ‘রানের জন্য সুযোগ খোঁজা, যাতে ওরা ঠিক জায়গায় বল না রাখলেই কাজে লাগানো যায়। ভারতের বোলাররাও কিন্তু মানুষ। ওরা সব সময় কার্যকর হবে না। আর আপনি যদি রানের কথা না ভাবেন, সুযোগ এলে মিস করে ফেলবেন। আমাদের যদি ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো ওপরের দিকের দলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হয়, তাহলে এই মানসিকতাই লাগবে।’