শাহজাহান সিরাজ:: উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রায় মানুষ যখন করোনা সংক্রমনের ঝুকিতে এবং ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তান্ডবে ভাসছে তখনও থেমে নেই এনজিও কর্মীদের কিস্তি আদায়। এনজিও কর্মীরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে সাপ্তাহিক কিস্তি আদায় এই এলাকায় যে কোন দূর্যোগপরবর্তী সময় কখনও থেমে থাকতে দেখা যায়নি। তাই ঝড় ঝামটা বন্যা সহ যে কোন দূর্যোগের সময়েও দয়া দাখিন্য দেখায় না কিস্তি আদায়কারীরা এমনটি অভিযোগ এলাকাবাসীর। ঘূর্ণিঝড় আম্পান, ইয়াস সহ কয়েক দিন আগে অতিবৃষ্টিতে সমগ্র কয়রা উপজেলা যখন পানিতে ভাসছে, তখনও এনজিও নারী ও পুরুষ কর্মীরা রাত পোহাতেই কৃষকের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করছেন। আবার অনেক গ্রামে রাস্তাঘাট ইয়াসের পানিতে ভেঙে যোগাযোগ বিছিন্ন হলেও মুঠোফোনে কিস্তির টাকা ডেকে পাঠায় ওরা। অথচ কয়েকদিন আগেও ইয়াসের তান্ডবে যখন এই উপজেলার প্রায় ৫০ টি গ্রাম লবণ পানিতে ভেসে গ্রােেমর মানুষ জীবন বাঁচাতে ওয়াপদার বেঁড়িবাঁধে অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিল, কিস্তি আদায় তখনও থামেনি। উল্লেখ্য ২০২০ সালের ২১ মে আম্পান এবং ২০২১ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পাল্টে দেয় কয়রার অনেক গ্রামের চিত্র। অতঃপর চলতি আষাঢ়ের শুরুতেই ৩ দিনের টানা বৃষ্টিতে ছোট বড় হাজার হাজার চিংড়ী ঘের সাদা মাছের খামারসহ ভেসে যায় কৃষকের খেতের বর্ষাকালীন শাকসবজি। অথচ তারপরও সাপ্তাহিক কিস্তি আদায় থেমে নেই এনজিও কর্মীদের। এ বিষয় খবর নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) আশা, ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, টিএমএসএস, গণমুখী, সোনালী স্বপ্ন, ব্যুরো বাংলাদেশ, জাগরণী চক্র, এসডিএফ, এসডিএফ মৎস্য, সাস, জেজেএস, প্রদীপন, সহ স্থানীয় কিছু সংগঠন বাড়ী বাড়ী গিয়ে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা আদায় করছেন। মঠবাড়ী গ্রামের চিংড়ী চাষী প্রিতিশ মন্ডল, ছাগল পালনের জন্য ঋন নেওয়া আমেনা বেগম, ২ নং কয়রা গ্রামের হাসমুরগি পালনের ঋণ গ্রহীতা লতিফা খাতুন ও কদবানু বিবি সহ একাধিক এধরনের ঋন গ্রহিতা জানান, তারা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ঋন নিয়েছেন। কিন্তু বিগত দেড় বছর যাবত বিভিন্ন দূর্যোগের কারনে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা দিতে না পারলে অনেক বেশি কথা শুনতে হয় এমনকি মামলার ভয়ও দেখায়। তারা বলেন, বেশি কথা শোনার ভয়ে কিস্তি দেওয়ার ২ দিন আগে থেকেই ওদের টাকা জোগাড় করে রাখতে হয়। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যু ও আক্রান্ত্রের হার বাড়তে থাকায় সরকার দেশ জুড়ে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। ফলে আমাদের স্বামীরা দিনমজুর, কেউ ভ্যান চালায়, কারোর ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং চলাচল বন্ধ থাকায় আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ না খাটলে সংসার চলে না। সারা দিন ভ্যান চালিয়ে যে টাকা উপার্জন হয় তাতে সংসারই চলেনা এর মধ্যে কিস্তি দেব কোথা থেকে। অন্যদিকে করোনা সংক্রমন এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় বর্তমান কয়রায় চলছে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন এবং দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া লোকজন চলাচলও সীমিত করায় নিম্ম আয়ের মানুষদের কর্মসংস্থান কমে গেছে। এতে দিন মজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আয় নেই বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন গ্রামে চলছে এনজিও কর্মীদের কিস্তি আদায়। এতে এনজিও ঋণ গ্রহণকারী দরিদ্র মানুষ এখন বিপাকে।তাদের দাবি পরিস্থিতি স্বাবাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিস্তি আদায় স্থগিত করার। ভুক্তভোগীরা জানায়, কিস্তির টাকা না দিলে কর্মীরা কিস্তির জন্য রাত অবধি বসে থাকেন, এবং গালমন্দসহ হুমকি দেন। এ সম্পার্কে স্থানীয় এনজিও আশা এর ম্যানেজার সংকর বিশ^াস কিস্তি আদায় করা হচ্ছে না জানালেও মাঠে তাদের কিস্তি আদায় করতে দেখা যাচ্ছে। অপর সংস্থা গ্রামীন ব্যাংক এর ম্যানেজার আঃ গফুর সাপ্তাহিক কিস্তি আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন জোর করে কারোর কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ^াস বলেন, লকডাউন সময়ে কিস্তি আদায় করবে না। কোন এনজিও করলে কোন প্রমাণ পেলে আমরা তার ব্যবস্থা নিব।