সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শনিবার , ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
ভূতুরে বিলের পর এবার ট্রান্সফরমার কেলেঙ্কারী! | চ্যানেল খুলনা

ভূতুরে বিলের পর এবার ট্রান্সফরমার কেলেঙ্কারী!

ভুতরে বিল, গ্রহক ভোগান্তি, রাজস্ব ফাঁকি, নতুন সংযোগের নামে ঘুষ, ভুল রিডিং দিয়ে অতিরিক্ত বিল, চাকরি দেওয়ার নামে বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম কেলেঙ্কারিতে ভরপুর ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ডিপিডিসি। জুরাইন, মুগদা, বনশ্রীসহ বেশ কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে একই ধরনের চিত্র।

টাকা দিলে সংযোগ: টাকা দিলেই মিটার মিলে ডিপিডিসিতে। এমন অভিযোগ ভুড়ি ভুড়ি। সম্প্রতি বনশ্রী এলাকায় একটি নতুন সংযোগ নিতে গুনতে হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা! এ ছাড়া মিটারের নাম পরিবর্তন করতেও গুনতে হয় টাকা। টাকা ছাড়া কোনো কাজই হয় না বিদ্যুৎ বিতরণকারী এই কোম্পানিতে।

রাজধানীর জুরাইনের মনোয়ারা বেগম অভিযোগ করে বলেন, নতুন সংযোগ পেতে সময় লেগেছে দীর্ঘ সময়। আর টাকা গুনতে হয়েছে ১ লাখ। শুধু মনোয়ারা বেগমই নন, এমন অভিযোগ অনেকেই। শ্যামপুরের রহমত আলী বলেন, এসটি সংযোগ পেতে গুনতে হয়েছে ১০ লাখ টাকা। কিন্তু সংযোগ বাবদ ব্যাংকে জমা দিতে হয়েছে ৪ লাখ। আর ঘুষ দিতে হয়েছে ৬ লাখ টাকা।

জুরাইন বিদ্যুৎ অফিস মানেই টাকা: নতুন সংযোগ কিংবা মিটার পরিবর্তন করতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। প্রকৌশলী থেকে মিটার রিডার পর্যন্ত সবাই এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। বিদ্যুৎ অফিসের পিয়নও এই চক্রের সদস্য। নির্বাহী প্রকৌশলী মেজবাহ উদ্দিন অনিয়মের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন জুরাইন বিদ্যুৎ অফিসে। গ্রাহকদের কৌশলে ফাঁদে ফেলে অবৈধভাবে আয় করছেণ বিশাল অঙ্কের টাকা।

শ্যামপুরের বাসিন্দা মো. মোশারফ হোসেন লিখিত অভিযোগে বলেছেন, হঠাৎ করে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে। ঘটনার পরই আমি বিদ্যুৎ অফিসে যাই। এর পর জরিমানা ও বিল বাড়িয়ে করার হুমকি দেয়া হয় আমাকে। আরেক অভিযোগকারী মো. মোক্তার হোসেন বলেন, আমার বাসায় বিদ্যুতের মিটারে কিছু অনিয়ম দেখিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়। এ নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে গেলে ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানার রশিদ ধরিয়ে দেয়। যা পরিশোধ করতে না পারায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। অন্ধকারেই বসবাস করতে হচ্ছে। এ ছাড়া দালালচক্রের মাধ্যমে গ্রাহকদেরকে নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়তই।

নিয়ম ভেঙে ট্রান্সফরমারের ভাড়া মওকুফ: বাড়ির আয়তন ১৬,৮০০ বর্গফুট। নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির আয়তন সাড়ে ৮ হাজার বর্গফুট অথবা ৮০ কিঃওয়ার্ড বিদ্যুৎ লাগলে নিতে হবে উচ্চ লোডের এসটি সংযোগ। এতে সব মিলিয়ে গ্রাহকের খরচ করতে হবে ১৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে আবাসিক সংযোগের জন্য তৎকালীন ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) হারুর অর রশীদের কাছে দুই বছরের জন্য ভাড়ায় ট্রান্সফরমারের আবেদন করেন রাজধানীর বাসাবোর কদমতলা এলাকায় বহুতল ভবনের মালিক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। ওই আবেদন মঞ্জুর করা হয় (যার নম্বর ৪২৫০)। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের আগষ্ট পর্যন্ত প্রতি মাসে সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে ভাড়া দেন গ্রাহক। দুই বছরের চুক্তিতে টানা ২০ মাস পরিশোধের পরই সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ করে ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছে মুগদা বিভাগ। এ ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙে সরকারের রাজস্ব ফাঁকিতে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে ডিপিডিসির মুগদা কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিয়েছে তারা। মুগদা বিভাগের দুই কর্মকর্তা নির্বাহী প্রকৌশলী আরফান আলী ও সহকারী প্রকৌশলী অভিজিৎ দেওয়ানজির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে গ্রাহক গিয়াস উদ্দিনের ছেলে জাফর সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘ডিপিডিসির কর্মকর্তা কিছু না বলেই ভাড়া বাবদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা মওকুফ করে। মুগদা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরফান আলী স্যারের সঙ্গে দেখা করে তার কাছে জানতে চেয়েছি। স্যার আমাদের ট্রান্সফরমার ভাড়া মওকুফ হওয়ার কারণ কি। তিনি বলেন, ভাড়ার নিয়ম নেই। তাই ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে। তাহলে আমরা ২০ মাস ভাড়া দিলাম সেই টাকার কি হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, তা আমি জানি না।’

কৌশলে বিদ্যুৎ চুরি: প্রতিদিনই বাড়ছে ডিপিডিসি’র গ্রাহক সংখ্যা। এই কোম্পানির ৩৬টি আঞ্চলিক অফিসের এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ চুরির দায়ে যে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে, তার বেশির ভাগই যায় কর্মকর্তাদের পকেটে।

জানা গেছে, মিল-কারখানা কিংবা বাণিজ্যিক ভবনের অসাধু মালিকরা নানা কৌশলে মিটার টেম্পারিং করে মিটার রিডারকে ঘুষ দিয়ে লাখ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ চুরি করছে। দুর্নীতি, জালিয়াতির কারণে বিদ্যুৎ খাতে সিস্টেম লস বন্ধ করতে পারছেন না ডিপিডিসি। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা রাতারাতি হয়ে যাচ্ছেন কোটিপতি। এই কোম্পানির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তালিকায় রয়েছে ডিপিডিসির বেশ কিছু কর্মকর্তাদের নাম।

ভূতুড়ে বিলের দায়ে শাস্তি পাওয়া সেই ২৮৭ জন চাকরিতে বহাল: ডিপিডিসিতে দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন কর্মকর্তারা। তাদের দুর্নীতি তদন্ত করতে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, সেই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এটা এক ধরনের লোক দেখানো শাস্তি। শুধু কাগজে কলমে। প্রকৃত ভাবে ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে বিচার করা হয়নি। যে কারণে আপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছেন।

শাস্তি পাওয়া কর্মকর্তারা অফিস না করেও বেতন পেয়েছেন নিয়মিত। ওই সব কালো তালিকাভুক্ত কর্মকর্তারা তদবির করে আবার পদে পূনর্বহাল হয়েছেন। গত বছরের ৫ জুলাই টাস্কফোর্স ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) চারজন প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এছাড়া ৩৬ জন প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া এবং আর ১৩ মিটার রিডার সুপারভাইজারকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করেছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা অফিস করছে পূর্বের ন্যায়।

ডিপিডিসির অ্যাকশন: দুর্নীতির দায়ে সিস্টেম কন্ট্রোল স্ক্যাডার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল ফাতাহারসহ তিন জনের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে নিয়েছে ডিপিডিসি। গত ২৬ জানুয়ারী পৃথক আদেশে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ২৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে রাজধানীর কদমতলীর অনুপম বরফ কলের মালিক মো. মতিউর রহমানের কাছ থেকে ২৫ লাখ ঘুষ নিয়েছিলেন ডিপিডিসির মাতুয়াইল ডিভিশনের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ। ঘুষ দিলেও মেলেনি সংযোগ। এ ঘটনায় তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন গ্রাহক। এর পর নড়েচেড়ে বসে ডিপিডিসি। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে ঘুষ নেওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা।

ছাফাই গাইলেন ডিপিডিসির কর্মকর্তারা: মুগদা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরফান আলী বলেন, ট্রান্সফরমার ভাড়া নেওয়ার বিধান নেই। তাই মওকুফ করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়। এই ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী বলতে পারবেন। তিনি দায়িত্ব থাকাকালীন এই ভাড়া চুক্তি হয়েছে।

মুগদা বিভাগের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে শ্যামপুর নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উল্লাহ সরকার বলেন, নিয়ম মেনে ট্রান্সফরমার ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়নি। কি কারণে ভাড়া মওকুফ করলো, বুঝে উঠতে পারছি না। তবে মুগদা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরফান আলী যদি নিয়ম ভেঙে ট্রান্সফরমারের ভাড়া মওকুফ করে থাকেন, তাহলে এটা রাজস্ব ফাঁকির মধ্য পড়ে।

নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) ও অতিরিক্ত দায়িত্ব নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) মো: গিয়াস উদ্দিন জোয়ার্দার বলেন, তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তথ্য যাচাই-বাছাই করে কমিটি রিপোর্ট জমা দিলেই অ্যাকশনে যাবো। অভিযুক্ত যে-ই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি আরো বলেন, ভাড়া নেওয়ার বিধান আছে, কেউ যদি ভাড়া নিতে চায়। সেক্ষেত্রে প্রতিমাসে তাকে ভাড়া দিতে হবে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। তবে কি কারণে ওই গ্রাহকের ভাড়া মওকুফ করা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, যারা বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান চাকমা বলেন, যার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাবো, তার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেবো। ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগেও ভূতরে বিল নিয়ে কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। এবারও হবে না।

এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদকের) উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতিবাজ যতই শক্তিশালী হউক। ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে জুরাইন ডিপিডিসি অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে। বেশ কিছু দুর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে। এখানে দুর্নীতির সঙ্গে কে কে জড়িত তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, পরিচালক, প্রকৌশলীসহ বেশ কিছু নাম পাওয়া গেছে। তাদের সম্পদের খোঁজে মাঠে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। যে সব কর্মকর্তার আয়ের চেয়ে সম্পদ বেশি, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে কমিশন।

https://channelkhulna.tv/

রাজধানী আরও সংবাদ

শহীদ বুদ্ধিজীবীরা একটি সমৃদ্ধ এবং মাথা উঁচু করা জাতি দেখতে চেয়েছিলেন

বায়ুদূষণে ঢাকা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন

বিএনপির ৩ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের প্রতিনিধিরা ভারতীয় হাইকমিশনে

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে জাতির জন্য কঠিন নির্বাচন : তারেক রহমান

কাকরাইল মসজিদে সাদপন্থিদের ঢুকতে দেওয়া হবে না তাবলিগ জামাত

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কুশীলবদের খুঁজতে কমিটি গঠনে রুল

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।