সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরায় মিথ্যা ঘোষণায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের চার ট্রাক বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে নামমাত্র মূল্যে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এসব মাছ মাত্র ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় নিলাম দেয়ায় কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।
একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ভোমরা বন্দরের ইছামতি ফুডস্ দু’টি বিল অফ এন্টিতে ৮ ট্রাক ও ১০ ট্রাক মোট ১৮ ট্রাক বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আমদানি করে।ভোমরা শুল্ক স্টেশনের কতিপয় রাজস্ব কর্মকর্তা এবং কিছু অসাধু মাছ আমদানীকারক দির্ঘ দিন যাবত সামুদ্রিক মাছ আমদানীর ঘোষনায় মিষ্টি পানির মাছ খালাস করে আসছে । আর এর বিনিময় ভোমরা কাস্টমসের কর্মকর্তারা আমদানীকারকদের কাছ থেকে ট্রাক প্রতি তিন লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে পন্যের ছাড়পত্র দিয়ে আসছেন । গতকাল ভোমরার মেসার্স সুন্দরবন ট্রেডিং এজেন্সি এই মাছ ভোমরা কাস্টমস থেকে ছাড় করান। প্রায় ৪০ লাখ টাকার মত শুল্ক ফাঁকি দেয়া এসব মাছ ভোমরা বন্দর থেকে ৩০টি ট্রাক যোগে ঢাকায় পাঠানোর সময় গত বুধবার সন্ধ্যায় এর মধ্যে ৪ ট্রাক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিব সদস্যরা শহরের বিজিবি ক্যাম্পের সামনে থেকে আটক করে। যার মধ্যে আড়াই থেকে তিন কেজি ওজনের বোয়াল, ফলুই, ট্যাংরা, ভেটকি, বাইন, গোলসা, রিটা মাছ অন্যতম। আটক এসব মাছের মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, বিজিবি ও কাস্টমস্ কর্মকর্তারা গত বুধবার রাত ১২টার দিকে আটক ৪ ট্রাক মাছের মধ্যে ঢাকা মেট্রো-ট ১৩-২৫৬৮ নাম্বারের মা আমেনা নামের কার্গো ট্রাক ভর্তি মাছ নিলামের জন্য বিজিবি ক্যাম্প থেকে শহরের কাস্টমস্ গোডাউনে নিয়ে আসে। বাকি ৩ ট্রাক মাছ বিজিবি সদর দপ্তরে রাখা হয়। নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করেন কাস্টমস্ গোডাউন অফিসার আজিজ রেজা ও সরকারি নিলামকারী মোঃ জাহিদুল ইসলাম। নিলামে অংশ নেয় মেসার্স আশিক এন্টারপ্রাইজ, মুকুল স্টোর, অজয় ট্রেডার্স, মিন্টু এন্টারপ্রাইজ, জাহিদ এন্টারপ্রাইজ, সাহেবা এন্টারপ্রাইজ, সৈয়দ সাকলাইন এন্টারপ্রাইজ, সৌরভ এন্টারপ্রাইজসহ মোট ৮টি প্রতিষ্ঠান। ওপেন নিলামে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় চার ট্রাক মাছ ক্রয় করেন আশিক এন্টারপ্রাইজের মালিক আল ফেরদৌস আলফা।
এ ব্যাপারে কাস্টমস গোডাউন অফিসার আজিজ রেজা ও সরকারি নিলামকারী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, গভীর রাত বলে ম্যাজিস্ট্রেট ডাকা হয়নি। মোট ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আশিক এন্টারপ্রাইজ এই নিলাম ক্রয় করেছেন। আশিক এন্টারপ্রাইজ-এর মালিক আল ফেরদৌস আলফা সাংবাদিকদের বলেন, তিনি যথাযথ প্রক্রিয়ায় এই মাছ কিনেছেন। কারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এনেছেন সেটি তাদের বিষয়।
ভোমরা কাস্টমস-এর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এনামুল হোসেন জানান, ২৪ আগস্ট ভারতের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স নাজ ইমপেক্স এর মাধ্যমে সাতক্ষীরার ইসরাইল গাজীর মালিকানাধীন ভোমরা ইছামতি ফুডস দু’টি বিল অফ এন্টিতে মোট ১৮ ট্রাক মাছ আমদানি করেন। মেসার্স সুন্দরবন ট্রেডিং এজেন্সি এই মাছ ছাড় করান। কাস্টমসে দেখানো হয়েছে সামদ্রিক কাউয়া, মুলা ও মধুমতি মাছ হিসাবে। সামদ্রিক মাছের চাইতে মিষ্টি পানির মাছের শুল্ক দেড়গুণ বেশি। বন্দর থেকে মাছ খালাসের পর সেগুলি দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায় ব্যবসায়ীরা। তবে বিজিবির হাতে আটক ৪ ট্রাক মাছের মালিক কে তা আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরাস্থ বিজিব ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার জানান, মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে মিঠা পানির হিমায়িত মাছ আমদানি করা হয়। এসব মাছ ভোমরা বন্দর থেকে ট্রাকযোগে ঢাকায় পাঠানোর সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে শহরের বিজিবি হেডকোয়াটারের সামনে থেকে চারটি ট্রাক আটক করা হয়। তবে ভোমরা বন্দর দিয়ে আমদানি করা এসব মাছের মালিকানা কেউ দাবি করেনি। পরে আটক ৪ ট্রাক মাছ কাস্টমসে হস্তান্তর করা হয়। তবে সম্প্রতি ভোমরা বন্দর দিয়ে এভাবে বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষনা দিয়ে সামুদ্রিক মাছের নামে মিষ্টি পানির মাছ আনছে এমন খবরের কারনে বিজিবি অভিযান চালিয়ে এই মাছের চালান আটক করে।