ভারতে নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন মসজিদের সমীক্ষার দাবি তুলে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছে ছোট-বড় নানা আকারের হিন্দুপন্থি সংগঠন, কিংবা কোনো হিন্দু নেতা বা ব্যক্তি। উদ্দেশ্য একটাই- সেই মসজিদের স্থানে কোনো যুগে মন্দির ছিল কিনা, সেটা যাচাই করে দেখা! এর জেরে সম্প্রতি দেশের নানা প্রান্তে অশান্তি, সাম্প্রদায়িক হিংসা পর্যন্ত ছড়িয়েছে।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি নিয়ে এবার মুখ খুললেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, এ ধরনের ঘটনা একেবারেই ‘গ্রহণযোগ্য নয়’। মহারাষ্ট্রের পুনেতে আয়োজিত ‘বিশ্বগুরু ভারত’ কর্মসূচির মঞ্চে ভাষণ দেওয়ার সময় এ মন্তব্য করেন তিনি।
ভাগবত বলেন, ইদানীং কিছু হিন্দু নেতা দেশের নানা প্রান্তে অযোধ্যার রাম মন্দিরের মতো ‘ডিসপিউট’ তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এটা গ্রহণযোগ্য নয় একেবারেই।
তিনি বলেন, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। ভারতের সেই নজির গড়ে তোলা উচিত, যেখানে বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী ও সম্প্রদায়ের মানুষ একইসঙ্গে পাশাপাশি সহাবস্থান করতে পারে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের একাংশের পক্ষ থেকে উত্তরপ্রদেশের সম্ভলের জামা মসজিদ, এমনকী রাজস্থানের আজমের শরিফ নিয়েও সমীক্ষার দাবি তোলা হয়। যা নিয়ে এখনো বিতর্ক চলছে।
সেই প্রেক্ষাপটে ভাগবত বলেন, ভারতকে তার অতীতের সমস্ত ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তবেই বিশ্ব মানচিত্রে ভারত ‘রোল মডেল’ হয়ে উঠতে পারবে। আমাদের প্রমাণ করতে হবে, নানা বৈচিত্র থাকা সত্ত্বেও কীভাবে একত্রে থাকা যায়।
এ বিষয়ে কথা বলার সময়েই ভাগবত বুঝিয়ে দেন, অযোধ্যার রাম মন্দিরের বিষয়টি ছিল স্বতন্ত্র। তার সঙ্গে অন্যান্য ঘটনা গুলিয়ে ফেললে চলবে না।
ভাগবত বলেন, ‘রাম মন্দির একটা বিশ্বাস ও আস্থার বিষয় ছিল। আর হিন্দুদের মনে হয়েছিল, এটা অবশ্যই গড়ে তোলা উচিত। কিন্তু, যেভাবে নতুন বেশ কিছু স্থানে একই ধরনের ইস্যু তুলে ধরা হচ্ছে, এবং তার ফলে যে ঘৃণা এবং শত্রুতার বাতাবরণ তৈরি হচ্ছে, তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তার মতে, সমাজে এই ধরনের বৈষম্য ও বিবাদ মেটানোর সব থেকে ভালো উপায় হল- প্রাচীন সংস্কৃতিতে ফিরে যাওয়া। খুবই তাৎপর্যপূর্ণভাবে ভাগবত বলেন, ‘চরমপন্থা, আগ্রাসী মনোভাব, জোর জবরদস্তি করা এবং অন্য ধর্মে আরাধ্যকে অপমান করা আমাদের সংস্কৃতি নয়।’
ভাগবত এরপর কার্যত ঘোষণার সুরে বলেন, ‘এখানে সংখ্য়াগুরু, সংখ্য়ালঘু বলে কিছু নেই। আমরা সবাই এক। এই দেশে যেন প্রত্যেকেই তার ধর্ম বিশ্বাস অনুসারে ঈশ্বরের উপাসনা করার সুযোগ পান।’