সব কিছু
facebook channelkhulna.tv
খুলনা শনিবার , ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
মস্কোতে মিরপুরবাসীর শীত আর মেট্রোতে বসে বই পড়া | চ্যানেল খুলনা

মস্কোতে মিরপুরবাসীর শীত আর মেট্রোতে বসে বই পড়া

ঢাকার মিরপুরে ছিল আমার বসবাস। মেট্রো রেলের কার্যক্রমের কারণে মিরপুরের বাসিন্দাই জানে কতটা অসহনীয় ছিল ওখানকার রাস্তাঘাটে চলাচল। আমরা প্রায়ই মজা করে বলতাম,মিরপুরবাসী শুধু মঙ্গল গ্রহই নয়,নরকে গিয়েও খাপ খাওয়াতে পারবে।সুতরাং আমি মিরপুরবাসী হয়ে মস্কোর মতো জায়গায় সেটা পারবো এটাই স্বাভাবিক।

রাশিয়ার মতো জায়গায় খাপ খাওয়ানো নিয়ে মিরপুরের সাথে কেন তুলনা করলাম অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে! রাশিয়ায় চারটি ঋতু শরত, শীত,বসন্ত, গ্রীষ্ম। এই চারটি ঋতু হওয়া সত্ত্বেও এখানকার আবহাওয়ায় বছরে নয় মাসই শীত থাকে আর সাথে বোনাস হিসেবে থাকে শৈত্য প্রবাহ।

এখানকার ঠাণ্ডা আবহাওয়া আর প্রতিকূল পরিবেশে বাস করা আরেক প্রকার যুদ্ধ। এ নিয়ে রুশদের নিজেদের নিয়েই মজা করা এক গল্প মনে পড়ে গেলো।এক রুশ ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাকে যমদূত এসে নিয়ে গেলো।

মস্কোর এক পার্কের জমে যাওয়া নদীতে সাতার কাটছে একজন রুশ, ১৭-০২-২০১৯।মস্কোর এক পার্কের জমে যাওয়া নদীতে সাতার কাটছে একজন রুশ!

বেশ আরাম আয়েসে সে দিন কাটতে লাগল। স্বর্গে বেশ শান্তি। কিন্তু সে ঘুরে ফিরে নিজের দেশের কোন লোক দেখতে পেলো না। তখন সে প্রহরীকে জিজ্ঞেস করলো, ‘আচ্ছা আমি কী এমন পুণ্য করেছি যে আমাকে স্বর্গে আনা হলো।

প্রহরী বললো – কে বলেছে এটা স্বর্গ।

লোকটি বললো, কেন এখানে তো বেশ সুখ স্বচ্ছন্দেই আছি আমি।

প্রহরী বললো , তুমি কোথা থেকে এসেছ। বলতো?

ব্যক্তি- কেন? রাশিয়া?

প্রহরী – ও তাহলে তো ঠিকই আছে।

রাশিয়ার নভোসিবার্সক শহরে একজন বৃদ্ধ পুরুষ পার্ক বেঞ্চে বসে বই পড়ছেন, ১৬-০৭-২০১৮।বই পাগল: রুশরা সব জায়গাতেই কিছু পড়ার সময় বের করে নেয়।

ফেব্রুয়ারি মাসে মস্কো তো পুরোটাই ডিপ ফ্রিজ। চারপাশ বরফাচ্ছন্ন । ছাইরঙা শহরটা এখন শ্বেতশুভ্র পবিত্র রূপ ধারণ করেছে। শহরটাতে একধরনের শূন্যতা বিরাজ করে। সবাই কেমন দলছুট।

মেট্রো,পথে,বাসে,শপে সবখানে মনে হয় যন্ত্র ঘুরছে। এদের ইন্টার‍্যাকশন হয় ফোনে। পাশের ব্যক্তিটি হয়তো তার কাছে বস্তুই মনে হয়।

তবে ফোনে যে তারা কথা বলে বেশি সেটা নয়, বরং সেল ফোনে তারা বেশির ভাগ বইই পড়েন। এখানে এসে আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি বিশেষ করে মেট্রোতে, বাসে নানা বয়সী পুরুষ নারী বই পড়েন।

বই অথবা সেল ফোনে তারা পড়ছেন। এমনও দেখেছি বসার সিট পায়নি কিন্তু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগে বই পড়ছেন। অনেকে মেট্রোর জন্য অপেক্ষা করছেন, সেই সময়টা নষ্ট না করে এক কোনায় বেঞ্চিতে বসে বই পড়তেও দেখেছি।

বসার জায়গা নেই মস্কো মেট্রোতে, তবু দাঁড়িয়েই বই পড়তে হবে।
বসার জায়গা নেই মেট্রোতে, তবু দাঁড়িয়েই বই পড়তে হবে।

রুশদের আসলেই নিজেদের সেরা পাঠক হিসেবে দাবি করা ভুল নয়। এরকমও শুনেছি, আজ থেকে দশ বছর আগেও যখন রাশিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ ছিল তারা ভিক্ষা করতো তবু বই পড়তো।

সেরা পাঠক হিসেবে রুশকিরা দাবি করে যে রাজনৈতিক কারণে নয়, বিশ্ববাসী রাশিয়াকে চেনে এখানকার কবি সাহিত্যিকদের জন্য।

সে যাই হউক, এখানকার মেট্রো অর্থাৎ পাতাল রেলের কথা বলতেই হবে। এক-একটা মেট্রো স্টেশন যেন এক একটা রাজ প্রাসাদ। মস্কোর প্রায় পুরো শহর জুড়েই মাকড়সার জালের মতো পাতাল রেলের ব্যবস্থা।

বিশ্বের ব্যস্ততম, সুশৃঙ্খল আর সুসজ্জিত মেট্রো এখানে। এর জন্মদিন ১৫ মে । অর্থাৎ ১৯৩৫ সালের পনের মে এখানে পাতাল রেল চালু হয়। বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম এর রুট দৈর্ঘ্যে ৩৮১ কিমি অর্থাৎ ২৩৭ মাইল।

মস্কোর পাতাল রেলের একটি স্টেশনের দৃশ্য।এক একটা পাতাল স্টেশন এক একটা বিস্ময় !

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাতাল রেলে মোট ২৬০ টি স্টেশন । মস্কো আসার পর কাজের সুবাদে বা ঘোরাঘুরির সুবাদে পাতাল রেলে চড়ার সুযোগ আমার হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটা স্টেশন আমার দেখা হয়েছে।

এক একটা পাতাল স্টেশন এক একটা বিস্ময় !!!

এক দুই মিনিট পরপরই ট্রেন আসছে। ঝটপট মানুষ উঠছে, নামছে। চলে যাচ্ছে । কারোর ট্রেন মিস করার ভয় নাই, পরপর আরেকটা ট্রেন চলে আসছে। শহরের ব্যস্ততা মনে হয় এখানে এলেই বেশি দেখতে পাওয়া যায়।

এখানে অনেক স্টেশনই দোতলা, তিনতলা। উপরে ও নিচে ট্রেন লাইন আছে। মাটির নিচে তারও গভীরে নেমে যাচ্ছে দীর্ঘ এস্কেলেটরগুলি । অথচ কোন ভয় কাজ করে না।

প্রত্যেকটা স্টেশন ঝকঝকে। দেয়ালে নেই কোন সেঁটে দেয়া বিজ্ঞাপন। কত কত শিল্পী ও বৈজ্ঞানিকদের মেধা যে এখানে মেশানো, কারুকার্যময় স্টেশনগুলোই তার প্রমাণ।

মস্কোর গভীরে পাতাল রেলের স্টেশন
মস্কোর গভীরে পাতাল রেলের স্টেশন

স্টেশনগুলোতে সমাজতান্ত্রিক, ঐতিহাসিক অনেক ধরনের শিল্পকর্ম দেখেছি। এক একটা স্টেশন যেন এক একটা ইতিহাস। শিল্পে ও সৌন্দর্যে অন্যতম। মেঝে, দেয়াল ও ছাদ ভর্তি সূক্ষ্ম কারুকার্য, মার্বেল দামি পাথর, মোজাইকে । সেগুলোতে ফুটে উঠেছে সমাজের নানা শ্রেণীর মানুষের প্রতিকৃতি । কারুকার্যময় বিশাল আলোর ল্যাম্প। অসাধারণ সব দেখতে।

স্টেশনগুলোতে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক অতীতের নিদর্শন অটুট রয়েছে।
স্টেশনগুলোতে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক অতীতের নিদর্শন অটুট রয়েছে।

এখানে ২,১৭০ রুবল দিয়ে আনলিমিটেড কার্ড কিনে নিলে সারা মাস দিব্যি কেটে যায়। বাসে ট্রেনে সবখানে এই কার্ড ব্যবহার করা যায়। এখানকার স্টুডেন্টদের জন্য আরো সুবিধা ছ’শ রুবলে কার্ড । আর এমনিতে ওয়ান টাইম যাত্রার জন্য আটত্রিশ রুবল দিয়ে টিকিট কিনতে হয়। তবে মজার ব্যাপার এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরলে আটত্রিশ রুবলে পুরো মস্কো ভ্রমণ করতে নেই মানা।

এতো সময় কোথায় এই ব্যস্ত শহরে ব্যস্ত মানুষের।

এখানকার ট্র্যাফিক সিস্টেম এর কথাও একটু বলতে হয়। পুরো রাস্তাটাই গুছানো। বাসে যেখানে সেখানে মন মর্জি মতো নামা যায় না। প্রত্যেকটা স্টপেজে বাস থামে সেখানে যাত্রী থাকুক আর নাই থাকুক।

অটো টাইমে গাড়ি থেমে যাচ্ছে জেব্রা ক্রসিং-এ সবাই রাস্তা পার হচ্ছে। এখানকার বাস বা গাড়ির ড্রাইভারদের আমাদের দেশের মানুষদের মতো কোন অস্থিরতা নেই ,কে কার আগে যাবে সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা নেই।

এমনও দেখেছি রাস্তা পার হবার জন্য গাড়ি থামিয়ে স্বয়ং ড্রাইভার পথচলতি মানুষকে হাত ইশারা করছে রাস্তা পার হবার জন্য। শুধু সিস্টেম থাকলেই হবেনা। সেটা প্রয়োগ করার মনোভাবও থাকতে হবে, যেটা এখানকার মানুষের আছে।

বারো মাস শীতে থাকা মানুষগুলো পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করেও আজ উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তাহলে আমরা কেন পারিনা?

https://channelkhulna.tv/

প্রবাস কথা আরও সংবাদ

মালয়েশিয়ার বিমানবন্দরে আজহারীকে আটকে দিল পুলিশ

মালয়েশিয়ায় একাধিক কারখানায় বিস্ফোরণ, ৩ বাংলাদেশি আহত

সৌদিতে বাংলাদেশিদের জন্য ই-পাসপোর্ট চালু

আমিরাত থেকে দেশে ফিরলেন আরও ২৮ বাংলাদেশি

নিরাপদে সড়কে চলতে মনিরামপুর নিসচার সচেতনতামূলক চা চক্রের আয়োজন

সৌদি আরবের জেদ্দায় প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের সম্মানে ইফতার ও মতবিনিময় সভা

চ্যানেল খুলনা মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন  
DMCA.com Protection Status
সম্পাদক: মো. হাসানুর রহমান তানজির
It’s An Sister Concern of Channel Khulna Media
© ২০১৮ - ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | চ্যানেল খুলনা.বাংলা, channelkhulna.com.bd
যোগাযোগঃ কেডিএ এপ্রোচ রোড (টেক্সটাইল মিল মোড়), নিউ মার্কেট, খুলনা।
প্রধান কার্যালয়ঃ ৫২/১, রোড- ২১৭, খালিশপুর, খুলনা।
ফোন- 09696-408030, 01704-408030, ই-মেইল: channelkhulnatv@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদফতরে অনলাইন নিউজ পোর্টাল নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।