মাগুরায় পলিথিন ডাক্তারের অপচিকিৎসার কারণে মৌসুমী আক্তার (২৫) নামে এক প্রসুতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় মাগুরার বহুল আলোচিত চিকিৎসক মাসুদল হকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে নিহতের পরিবার। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে অভিযুক্ত ‘পলিথিন’ ডাক্তার খ্যাত চিকিৎসক মাসুদুল হক।
মাগুরা মুচিপাড়া এলাকায় হাসিনা ক্লিনিকে বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ডাক্তার মাসুদুল হক তাকে অস্ত্রপচার করার কিছু সময়ের মধ্যেই মৃত্যু হয়।
নিহত মৌসুমী আক্তার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের হাবিবর হোসেনের স্ত্রী।
এ ঘটনায় দিনভর নানা নাটকিয়তা শেষে রাতে ডাক্তার মাসুদুল হকসহ অজ্ঞাত আরও ৩ জনকে আসামী করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে নিহতের ভাই রুবেল।
নিহতের ভাই রুবেল অভিযোগ করেন, তার বোন মৌসুমীকে বুধবার ভোর ছয়টায় হাসিনা ক্লিনিকে আনা হলে তার সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য ক্লিনিক কতৃপক্ষ ডাক্তার মাসুদুল হককে দিয়ে অস্ত্রপচার করান। এই অস্ত্রপচারের কিছু সময় পরই তার মৃত্যু হয়। ডাক্তারের অপচিকৎসা ও ক্লিনিক কতৃপক্ষের অবহেলার কারনে তার বোনের মৃত্যু হয়েছে বলে ডাক্তার মাসুদুল হকসহ অজ্ঞাত আরও তিন জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন তিনি। এ জন্য দায়ী ডাক্তার মাসুদুল হক ও ক্লিনিক কতৃপক্ষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবিও জানান।
নিহত মৌসুমীর স্বামী দরিদ্র হাবিবর হোসেন জানান, ভোর ৬ টার দিকে প্রসুতি স্ত্রীকে নিয়ে হাসিনা ক্লিনিকে ভর্তি করে রেখে অর্থ ও খাবার আনার জন্য রাজাপুর নিজ বাড়িতে যাই। এ সময় অস্ত্রপচারের জন্য রক্তের প্রয়োজন বলে জানায় ক্লিনিক কতৃপক্ষ। এ অবস্থায় তিনি জরুরী ভিত্তিতে মাগুরার উদ্দেশ্যে রউনা দিয়ে মাগুরা মিরপাড়া মোড়ে আসলে স্ত্রীর মৃত্যর খবর জানতে পারি।
ইতিমধ্যে মিরপাড়া হতে সামান্য ব্যাবধানে পিটিআই স্কুলের সামনে অবস্থিত ক্লিনিকটিতে এলে ক্লিনিকের মালিক এ্যাম্বুলেন্সযোগে আমার স্ত্রীর মরদেহ নিয়ে আমার বাড়ির উদ্দেশ্যে রউনা হয়ে গেছেন বলে জানানো হয়।
এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন মরদেহ নিয়ে ক্লিনিকে ফিরে আসলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তিনি আরও জানান, ভর্তির পরপরই তড়িঘড়ি তারা অস্ত্রপচার করেন।
এ নিয়ে জানতে চাইলে ক্লিনিক মালিক সামনে না এসে দিনভর তার লোকজন পাঠিয়ে মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবার জন্য চাপ প্রয়োগসহ নানাভাবে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। পরে বিকালে থানায় গিয়ে অভিযোগ জানালে পুলিশ অভিযোগ আমলে নিয়ে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠায়।
ক্লিনিকে কর্মরত নার্সসহ অন্যরা জানান, সকালে ওই প্রসুতি নারীকে ভর্তির পর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তার নবজাতক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তাকে অস্ত্রপচার শেষে বেডে আনার কিছুক্ষণ পর হ্নদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
মাগুরা সদর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন জানান, এ ঘটনায় নিহত মৌসুমী আক্তারের ভাই রুবেল চিকিৎসক মাসুদুর রহমানসহ অজ্ঞাত ৩ জনকে আসামী করে বুধবার রাতে রাতে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মরদেহের ময়না তদন্তের জন্য মাগুরা ২৫০ শ্যয্যা হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এর আগেও অভিযুক্ত ডাক্তারের অপচিকিৎসায় রোগী মৃত্যর ঘটনায় সদর থানায় একটিসহ আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, মাগুরা জাহান ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মাসুদুল হকের অপচিকিৎসার চিত্র তুলে ধরে অপচিকিৎসার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে মাগুরার পলিথিন ডাক্তার আখ্যা দিয়ে জাতীয় গণমাধ্যম গুলিতে একাধিক প্রতিবেদন প্রাচারসহ আদালতে এক ডজনেরও বেশি মামলা দায়ের হয়েছে। সেই সাথে মাগুরা থেকে এই চিকিৎসককে বিতাড়িত করতে ঝাড়ুমিছিল মানবন্ধনসহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষ।
এতোকিছুর পর উচ্চ আদালত হতে জামিনপ্রাপ্ত হবার পর আবার মাগুরার সাধারণ রোগীদের তার নিয়োজিত দালালের মাধ্যমে নিজের জাহান ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে অপচিকিৎসার রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এ অবস্থায় পলিথিন ডাক্তার মাসুদুল হকসহ সকল অপচিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবার নামে নিম্নমান সম্পূর্ন ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে মানুষের জীবন নিয়ে খেলায় মগ্ন সংশ্ললিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থথা গ্রহনের দাবী তুলেছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ।