করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকারের জারি করা সাত দিনের কঠোর নিষেধাজ্ঞার আজ চতুর্থ দিন চলছে। এ সময়ে ১১টি নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। ইতোমধ্যেই দুটি শিথিলও করা হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবারের (৬ এপ্রিল) ঘোষণায় বুধবার (৭ এপ্রিল) থেকে সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে গণপরিবহন। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে সরকার ঘোষণা করে আগামীকাল (শুক্রবার) থেকে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে শপিংমল।
খবরটি ব্যবসায়িক মহলে জানাজানি হওয়ার পরই অনেকেই দোকান খুলতে শুরু করেন। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ব্যবসায়ীদের পড়তে হয়নি কোনো বাধার মুখে। রাজধানীর গাউছিয়া, চাঁদনীচক ও চিশতিয়া মার্কেটে সরেজমিনে দেখা যায়, ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত দোকানিরা।
চিশতিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. মনিমুল্লাহ বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা শুনেই দোকান খুলেছি। তবে ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখলে আমাদের তেমন লাভ হবে না। আমরা রাত ৮টা পর্যন্ত খোলার জন্য চেয়েছিলাম। মার্কেটে মানুষ আসে সন্ধ্যার পর, দুপুর ১২টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত দিলে আমাদের সুবিধা হতো। তবে এখন দোকান খোলার সুযোগ পাওয়াটাই বড় বিষয়।’
গাউছিয়া মার্কেটের ঝিনুক ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মামুন বলেন, ‘৫টা পর্যন্ত সময় দেওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হব। আমরা নিজেরাই কারখানায় মালামাল তৈরি করি, যা শবে বরাতের পর থেকেই বিক্রি শুরু হয়। ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকলে আমাদের পক্ষে এই মালামাল বিক্রি সম্ভব নয়। রাজশাহী, চট্টগ্রাম, মাগুরাসহ সারা দেশ থেকেই খুচরা ব্যবসায়ীরা আমাদের এই মার্কেটে কাপড় নিতে আসেন। ৫টা পর্যন্ত দিলে দূরের কাস্টমার আসতে পারবেন না। গতবারের ধাক্কা এখনও আমরা সামালে উঠতে পারিনি। এখন ব্যবসা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
একই সুরে কথা বলছেন ব্যবসায়ীক নেতারাও। চাঁদনি চক ব্যবসায়িক ফোরামের সমাজকল্যাণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত দিলে ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো হতো। কেননা নারী কাস্টমাররা আসেন সকালে এবং সন্ধ্যার পর। দূরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও আসেন বিকেলের দিকে। আগামীকাল থেকে ৯টায় খুললেও কাস্টমার পাব না। সকাল ১১টা থেকেই কাস্টমার আসা শুরু হয়। কারখানার মতো আমাদের সারাদিনই কাজ হয়। আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীরা অনলাইনে এক পিস মালও বিক্রি করতে পারিনি।’
ইসমাইল মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. শাহজালাল বলেন, ‘গত লকডাউনের ক্ষতি এখনও পুষিয়ে উঠতে পারিনি। এখন বিকেল পর্যন্ত সময় দিলে কীভাবে সেই ক্ষতি পুষিয়ে উঠব? সামনে রমজান, আমাদের আগের অর্ডারের কাপড়গুলোও এখনও ডেলিভারি দিতে পারিনি।’
চাঁদনি চকের চাঁদনি লেডিস ফ্যাশনের দর্জি মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দর্জিরা দিনে অর্ডার নেয়, কাটিং হয় সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। পৃথিবীর সব দেশেই এমনই হয়। ঈদ উপলক্ষে আমাদের যে কাজের অর্ডার আছে, এর চার ভাগের এক ভাগও কাজ শেষ করতে পারিনি। ৫টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখলে কোনোভাবেই আমাদের ব্যবসা চালানো সম্ভব নয়। সকালে কাপড় কাটব নাকি অর্ডার নেব? এর থেকে খোলার চেয়ে না খোলাই ভালো। ইলেকট্রিক বিল দেওয়ার মতো টাকাও ওঠাতে পারছি না।’
‘রাতে যদি কাজ না করি তাহলে কীভাবে কাপড় বানিয়ে কাস্টমারদের দেব?’, যোগ করেন তিনি।
সুবিশি টেইলারের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম খোকন বলেন, ‘এই নির্দেশনা আমাদের জন্য নতুন যন্ত্রণা তৈরি করেছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করতে চাই। রমজানে এই নির্দেশনা মানা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’
এ বিষয়ে চিশতিয়া মার্কেটের সভাপতি সুরুজ হাওলাদার বলেন, ‘নিরুপায় হয়েই সরকারি নির্দেশনা মেনে নিতে হবে। তবে আমাদের ব্যবসার মূল সময়টা যেহেতু সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয়, তাই রমজানে কী করা যায়- তা নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেই সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।’