চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃযশোরের মণিরামপুরে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা ১১ বছরের সেই শিশুটি মা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় সে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানটিকে ভূমিষ্ঠ করা হয়। প্রসবের পর সন্তান সুস্থ থাকলেও মায়ের অবস্থা এখনও ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের মণিরামপুর উপজেলা সহকারী কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে ওই শিশুটি থাকতো। বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে গত জানুয়ারি মাস থেকে তাকে কিবরিয়া নিয়মিত ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। এ সময় ওই শিশু অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানতে পেরে শিশুটির স্বজনরা আইনের আশ্রয় নেন। পুলিশ গত পহেলা জুলাই অভিযুক্ত কিবরিয়াকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। এবার ডিএনএ টেস্ট করে গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
এরই মধ্যে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন ছিল আগামী ১৭ অক্টোবর।
শিশুর স্বজনরা জানায়, ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় গত বুধবার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার অবস্থা জটিল হওয়ায় হাসপাতালের ডাঃ নিলুফার ইসলাম তাকে খুলনায় রেফার করেন। টাকার অভাবে স্বজনরা তাকে খুলনায় নিতে না পারায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে থেকে যায়।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, গত শুক্রবার গভীর রাতে মেয়েটির প্রসববেদনা উঠলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল সার্জন ডাঃ নিলুফার ইয়াসমিন ও ও ডাঃ তানজিলা ইসলাম শনিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে তার দেহে অস্ত্রোপচার করেন। এ সময় ডাঃ রবিউল ইসলাম ও ডাঃ মাহবুবুর রহমান সহযোগিতা করেন।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু জানিয়েছেন, সিজারিয়ান অপারেশনের পর বাচ্চাটি সুস্থ থাকলেও মায়ের অবস্থা গুরুতর।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আহমেদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সুমন বলেন, তার ওজন হয়েছে আড়াই কেজি। মা ও নবজাতক হাসপাতালের চিকিৎসক টিমের নিবিড় তত্ত্বাবধায়নে আছেন। তাদের সুস্থ রাখতে চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ লিটু আরও জানান, যশোরের জেলা প্রশাসক ও পৌর মেয়র মা ও ছেলের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। চিকিৎসার যাবতীয় খরচ তারা বহনের উদ্যোগ নিয়েছেন। পাশাপাশি এটির সাথে যেহেতু ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে, এ কারণে মা ও বাচ্চাটির নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মণিরামপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোমেন জানান, ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুটির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। এর আগে এ মামলায় গ্রেফতার হওয়া মণিরামপুরের পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের সহকারী কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে। এখন ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর ডিএনএ টেস্ট করলেই সব কিছু জানা যাবে।
এদিকে ধর্ষণের শিকার শিশুমায়ের বাবা বলেন, তারা হাসপাতালে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কারণ এ মামলার একমাত্র আলামত হচ্ছে ওই নবজাতকের ডিএনএ। সে কারণে নবজাতককে যেন হাসপাতাল থেকে চুরি কিংবা অন্য কোনভাবে আসামিপক্ষ নিয়ে না যেতে পারে সেজন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন।