নগরীর অভিজাত মিষ্টির কারখানা ‘মিষ্টিমহল’-এ নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরী করছে শ্রমিকরা। পুরাতন মিষ্টির রস ব্যবহার করে তৈরী হচ্ছে নতুন মিষ্টি। আধুনিক যুগে এসেও তারা খালি হাত দিয়ে শরীরের ঘাম আর ময়লায় একাকার করে তৈরী করছে নামি-দামি মিষ্টি। এমনই অভিযোগে সত্যতা পেয়েছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। তারই প্রেক্ষিতে কেসিসির ভেটেরিনারী বিভাগ ওই মিষ্টির কারখানা পরিদর্শন করে অভিযোগে সত্যতা পেয়ে তাদের নোটিশ করেছে। এমনই তথ্য দিয়েছেন কেসিসির সিনিয়র ভেটেরিনারী সার্জন ডা. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্থানে চারটি শোরুম দিয়ে অভিজাত মহলের প্রিয় মিষ্টি ‘মিষ্টিমহলের মিষ্টি’। কিন্তু এ অভিজাত মিষ্টি কারখানায় পরিদর্শনে গিয়ে শুধু অবাকই হননি রীতিমত তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, খুলনার অভিজাত পরিবারের প্রিয় মিষ্টিএ কারখানায় তৈরী হয়। অথচ এত নোংরা পরিবেশে মান্ধাতার আমলে নিয়মে খালি হাত দিয়ে মিষ্টি তৈরী করা হয়। পুরো কারখানা জুড়ে কাদামাটিতে সয়লাব। খালি গায়ে বসে কর্মচারীরা মিষ্টি তৈরী করেন। ঘাম আর মাছি তো ভোক্তাদের জন্য বোনাস। এমনই অভিযোগের তদন্তে গিয়ে সত্যতা পেয়েছেন তিনি।
এ অবস্থায় গত ৩১ জানুয়ারি মিষ্টিমহল কারখানার মালিক হাজী আবুল বাশারকে নোটিশ করেছে সিটি করপোরেশন। ওই নোটিশে তিনি আগামী সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, নগরীর খালিশপুর প্লাটিনাম মিলগেটে মিষ্টিমহল কারখানার অবস্থান। কারখানার কর্মচারিরা হ্যান্ড গ্লোভস, এ্যাপ্রোন, মাক্স ও ক্যাপ ব্যবহার করে না। ফলে তৈরীকৃত মিষ্টির সাথে ধূলা-ময়লা, শরীরের ঘাম মিশে খাদ্য দুষিত করছে। কর্মচারীদের করোনা ঝুঁকিও বাড়ছে। কারখানার মেঝে কাঁদা ও ময়লা পানিযুক্ত। মেঝেতে মিষ্টিদ্রব্য রাখার ফলে মেঝের কাঁদা ময়লা মিশে মিষ্টিদ্রব্য দুষিত হচ্ছে। দোকান থেকে ফেরত আনা ময়লাযুক্ত মিষ্টির সীরা (চিনি-পানি) নতুন মিষ্টিতে ব্যবহার করছে। দধি রাখা স্টোর রুমের ভিতর র্যাকে ও মেঝেতে রাখা দধির উপরে কর্মচারিদের ব্যবহৃত ময়লা কাপড় ও অন্যান্য ময়লাযুক্ত মালামাল রাখায় দধির উপর ময়লা ও ধুলা বালি পড়ে তা দুষিত হচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন অধ্যাদেশ ২০০৯-এর তৃতীয় তফশিলের ৩৯ ও ৬২ ধারা এবং নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩-এর ৩৩ ধারা মোতাবেক জরিমানাসহ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই শর্তভঙ্গের জন্য কারখানার নামে ইস্যুকৃত প্রিমিসেস লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না- তা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়।
তিনি বলেন, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এ প্রতিষ্ঠানটির চারটি শো রুম রয়েছে। নামী-দামি এ মিষ্টি অভিজাত পরিবারে বেশ জনপ্রিয়। অথচ সেই কারখানায় নোংরা পরিবেশে মিষ্টি তৈরীর করার বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না।
এ ব্যাপারে কথা হয় কারখানার মালিকের ছেলে মো. সোহেলের সাথে। তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, এমনই অভিযোগে ভিত্তিতে কেসিসি তাদের নোটিশ করে। তার জবাব তিনি ইতোমধ্যে দিয়েছেন।