মুজিববর্ষে বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সোনার বাংলা গড়ার শপথ নিলেন খুলনার দশ হাজারের অধিক মানুষ। খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে আজ (বৃহস্পতিবার) বিকালে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কন্ঠ মিলিয়ে তাঁরা এই শপথ গ্রহণ করেন। এসময় তাদের হাতে ছিল বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে দেশব্যাপী এই শপথ পাঠ করানোর সময় খুলনা প্রান্তে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন, কেএমপির পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড. খঃ মহিদ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদসহ বিভিন্ন শেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে গল্ল¬ামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও প্রত্যুষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইনে পঞ্চাশবার তোপধ্বনির মধ্যদিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন ও প্রতিষ্ঠানসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়। গল্ল¬¬ামারী শহিদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন খুলনা মহানগর ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় কমিশনার, কেএমপির পুলিশ কমিশনার, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ও তার অংগসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সকাল সাড়ে আটটায় খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মোঃ ইসমাইল হোসেন। পরে সেখানে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান ও শরীরচর্চা প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগীয় কমিশনার প্রধান অতিথি হিসেবে কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। পুলিশ কমিশনার, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি এবং পুলিশ সুপার বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ মনিরুজ্জামান তালুকদার।
নগরীর শহীদ হাদিস পার্কে খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিস, পিআইডি’র আয়োজনে ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ওপর স্থিরচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের সংবর্ধনা দেয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুলনার জেলা প্রশাসক। স্বাগত জানান স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক। অন্যান্যর মধ্যে বক্তৃতা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার মাহবুবার রহমান, নুর ইসলাম বন্দ প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলমগীর কবীর। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জেলা ও উপজেলা সদরে স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের সমাবেশ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, ফুটবল, কাবাডি ও হাডুডু খেলার আয়োজন করা হয়। সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত সিনেমা হল ও উন্মুক্তস্থানে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা টিকিটে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। বিভাগীয় জাদুঘর ও দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য বিনা টিকেটে উম্মুক্ত রাখা হয়। বাদজোহর হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশু বিকাশ কেন্দ্র, শিশু পরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। নৌ-বাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের দর্শনের জন্য বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে বেলা দুইটা হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উম্মুক্ত রাখা হয়। সকালে পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে মহিলাদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা সভা ও ক্রীড়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগর ভবনে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
সন্ধ্যায় খুলনা শহিদ হাদিস পার্কে ‘জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার’ শীর্ষক আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রচনা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটি উপলক্ষে খুলনা বেতার বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে