চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃম্যাচ চলাকালীন প্রতিপক্ষ কোচদের সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়াটাকে অভ্যাসে পরিণত করছেন লিওনেল মেসি। এই তো গত মাসে সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ব্রাজিল কোচ তিতের সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বার্সেলোনা স্ট্রাইকার। যে ম্যাচে ব্রাজিল কোচকে ‘মুখ বন্ধ রাখুন’ হুমকিও দেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
সেই ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। এর মধ্যে আবারও প্রতিপক্ষ কোচের সঙ্গে এক চোট হয়ে গেল মেসির। শনিবার রিয়াল মায়োর্কার বিপক্ষে বার্সেলোনাকে ৫-২ গোলের জয় এনে দিতে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করেছেন। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে পেছনে ফেলে গড়েছেন লা লিগায় সর্বোচ্চ হ্যাটট্রিকের নতুন রেকর্ড। লা লিগায় মেসির হ্যাটট্রিক এখন ৩৫টি।
সে ম্যাচটিতেও প্রতিপক্ষ মায়োর্কার কোচ ভিসেন্তে মরেনোর সঙ্গে বেঁধে যায় মেসির। ম্যাচ চলাকালেই বাগ-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন দুজনে। স্পেনের গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী, দায়টা মেসিরই বেশি। তিনিই আগ বাড়িয়ে ডাগ আউটের কাছে গিয়ে ভিসেন্তে মরেনোর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন।
ঘটনাটা ম্যাচের ৩৫ মিনিটের দিকে। গ্রিজম্যান ও মেসির গোলে বার্সেলোনা তখন ২-১ গোলে এগিয়ে। একটু আগেও বার্সা ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল। সবে মায়োর্কার হয়ে একটা গোল শোধ করেছেন অন্তে বুদিমির। একদিকে মায়োর্কার খেলোয়াড়েরা গোলের উদযাপন করছেন। অন্যদিকে, ক্যামেরায় ধরা পড়ে মায়োর্কার ডাগ আউটের কাছে গিয়ে কোচ মরেনোর সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করছেন মেসি।
দুজনের মুখায়বেই ছিল ক্রুদ্ধতার ছাপ। যা স্পষ্টই বলে দিচ্ছিল, কোনো কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটিই হচ্ছে দুজনের মধ্যে। কী নিয়ে এই কথা কাটাকাটি, পরে অবশ্য কারণটাও জানা গেছে। কারণটা জানিয়েছেন মায়োর্কার কোচ স্বয়ং মরেনো।
ঘটনাটা রেফারির একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে। বুদিমির গোলের একটু আগেই বল দখলের লড়াইয়ে নেমে মেসির সঙ্গে মায়োর্কার এক খেলোয়াড়ের হালকা সংঘর্ষ হয়। মেসিকে পেছন থেকে ট্যাকেল করেন মায়োর্কার ঐ খেলোয়াড়। মেসি সঙ্গে সঙ্গেই রেফারির কাছে ফাউলের আবেদন করেন। এমনকি প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে হলুদকার্ড দেওয়ার দাবিও করেন তিনি। কিন্তু খুব কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা রেফারি স্পষ্ট বলে দেন, এটা ফাউল নয়। সুতরাং হলুদকার্ডের প্রশ্নই আসে না।
কিন্তু রেফারির সিদ্ধান্ত মোটেও মনঃপুত হয়নি মেসির। তিনি ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন। ঘটনাটা যেহেতু মায়োর্কার ডাগ আউটের খুব কাছে, ফলে মায়োর্কার কোচও বলে ওঠেন, এটা ফাউল নয়। ব্যস, এ নিয়েই দুজনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ!
মেসির আচরণে মরেনো এতটাই অসন্তুষ্ট যে, ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনেই ঘটনাটা ব্যাখ্যা করেন। যেখানে তিনি মেসির গায়ে সেঁটে দেন ‘বুজকুড়ি’ বা ‘বুদবুদ’-এর কালো তিলক। মেসিকে আখ্যায়িত করেন ‘বাবল’ হিসেবে। পানিতে যেমন বুদবুদ ওঠে, ফুটবল মাঠে মেসি নাকি ঠিক তাই! নিজের তারকাখ্যাতি দিয়ে অন্যায়ভাবে রেফারিকে প্রভাবিত, প্ররোচিত করে সিদ্ধান্তগুলো নিজের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা করেন! মানে কথায়, আচরণে রেফারিকে প্ররোচিত করেন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে অহেতুক ফাউল-হলুদকার্ড দিতে!
মেসির বিরুদ্ধে রেফারিকে প্ররোচিত-প্রভাবিত করার অভিযোগ নতুন নয়। গত মাসে ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাও এই অভিযোগ করেছেন। ব্রাজিল কোচ তিতে তো মেসির বাজে আচরণের জন্য ফিফার কাছে অভিযোগও করেছেন।
সেই অভিযোগের রায় এখনো আসেনি। এরই মধ্যে ঘটে গেল আরেক কাণ্ড। তিন দিন পেরিয়ে গেলেও মেসির পক্ষ থেকে এখনো প্রতিবাদ আসেনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি মরেনোর ‘বুদবুদ’ বা ‘বুজকুড়ি’ অভিযোগ মেনে নিয়েছেন মেসি?