চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃমেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় ঝন্টু হোসেন (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।শনিবার (২ নভেম্বর) দুপুরে মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।নিহত ঝন্টু মেহেরপুর শহরের স্টেডিয়াম পাড়ার দিন মোহাম্মদের ছেলে। সে ইউনিলিভার কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ দিকে, এ ঘটনার পর থেকে রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল ঘেরাও করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।নিহতের স্বজনরা জানায়, জরুরি বিভাগে প্রায় আধা ঘণ্টা রেখে দেওয়ার পর ঝন্টুর চিকিৎসা শুরু করা হয়। তারপর গ্যাসের ইনজেকশন দেওয়ার ৩ মিনিটের মাথায় তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
নিহত ঝন্টুর ছোট ভাই মন্টু বলেন, প্রতিদিনের মতো শনিবার সে কোম্পানির কাজে বের হয়। মেহেরপুর সদর উপজেলার রাইপুর গ্রামে পৌঁছালে ঝন্টু মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ওয়াদুদ রহমানকে বারবার অনুরোধ করেও তিনি ব্যবস্থা নিতে গাফিলতি করেন। বারবার বলাতে তিনি আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বসে থাকতে বলেন। এরপর চিকিৎসা শুরু হলে প্রথমে তাকে একটা ইনজেকশন দেওয়া হয়। এরপর ৩ মিনিটের মাথায় কালো বর্ণ ধারণ করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে ঝন্টু।স্বজনরা আরও অভিযোগ করে বলেন, ঝন্টুকে হাসপাতালের একজন শিক্ষানবিস সেবিকা তার শরীরে ইনজেকশন দেয়। মৃত্যুর পরই সেই সেবিকা হাসপাতাল থেকে আত্মগোপন করে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগী মৃত্যুর ঘটনায় স্বজনরা হাসপাতালে উত্তেজনা সৃষ্টি করলে তোপের মুখে পড়ে চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) এহসানুল কবির প্রথমে আসতে না চাইলেও পরবর্তীতে তোপের মুখে তিনি আসতে বাধ্য হন। আরএমও আসার পর স্বজনরা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। সদর থানার ওসি শাহ দারা খানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম হাসপাতালে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঝন্টুকে চিকিৎসা দেওয়া জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ওয়াদুদ রহমান জানান, আমরা রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে গ্যাসের ইনজেকশনের সঙ্গে আরও কিছু ওষুধ দেয়। তার হার্টের ইসিজি পরীক্ষা করে রিপোর্ট নরমাল পাওয়া যায়। সে অনুযায়ী তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেমন একটা দেরি হয়নি।
হাসপাতালের আরএমও এসানুল কবির বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ভর্তি করানো হয়েছে। তার হার্টের অবস্থা ভালো ছিল। আমাদের ধারণা তার ব্রেন স্ট্রোকে মৃত্যু হতে পারে। স্ট্রোকের রোগীকে গ্যাসের ইনজেকশন দেওয়া যায় কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো সঠিক উত্তর দিতে পারেননি। তিনি আরও জানান, চিকিৎসায় গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবেন বলে জানতে পেরেছি।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. তাপস কুমার বলেন, রোগীটি ভুল চিকিৎসায় না কি অন্য কারণে মারা গেল এটা ফরেনসিক রিপোর্ট দেখার পর বলতে পারব। তবে রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী গ্যাসের ইনজেকশন দেওয়ার পর সে মারা গিয়েছে কি না আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি।
হাসপাতালের শিক্ষানবিশ কাউকে দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের কোনো এখতিয়ার নেই। তারা সিনিয়র স্টাফদের সাহায্য করবে।
মেহেরপুর সদর থানার ওসি শাহ দারা খান বলেন, রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।