চ্যানেল খুলনা ডেস্কঃপ্রাণের শহর ঢাকা বদলে দেওয়ার প্রত্যয়ে একটি স্বপ্ন শিকড় গেড়েছিল নগরবাসীর মনে। নগরীর এক প্রান্তের দখলদার-সন্ত্রাসীরা পিছু হটে। একে একে বদলাতে থাকে অন্যায় ও অনিয়মের ধারা। দুই বছর হয়ে গেল, আধুনিক ও বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার সেই স্বপ্ন সারথি নেই। সেই সঙ্গে বদলে গেছে উত্তরের আশার হাওয়া। মেয়রের প্রস্থানে এখন নীরবে কাঁদে নগরীর স্বপ্ন। ২০১৭ সালের এই দিনে মারা যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রথম নির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক। আজ ৩০ নভেম্বর তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।
রাজধানীবাসীর কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় প্রয়াত এই মেয়রের মৃত্যুবার্ষিকীতে দিনব্যাপী দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করেছে তার পরিবার।
এ দিকে উত্তরের সাবেক এই স্বপ্নবাজ মেয়র জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ছিলেন তার তারুণ্য দীপ্ত পদক্ষেপের কারণে। মৃত্যুর আগে যতটুকু সময় পেয়েছিলেন তার মধ্যেই নগরীর অনেক উন্নয়ন কাজ শুরু করেছিলেন তিনি। নগরীকে রক্ষায় প্রভাবশালীদের সম্মুখে প্রতিরোধ গড়েছিলেন। সড়ক ও ফুটপাতে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছিলেন। সড়ক ও ফুটপাত প্রশস্ত, শ্যামলী থেকে গাবতলী পর্যন্ত রাস্তা ও বিভিন্ন এলাকার পার্ক দখলমুক্ত করেন উত্তরের এই সাবেক মেয়র।
নগরজুড়ে পথচারীদের জন্য নির্মাণ করেন আধুনিক টয়লেট। সড়কে গণপরিবহনের নৈরাজ্য ঠেকাতে নেওয়া পদক্ষেপের শুরুতে ‘ঢাকা চাকা’ নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সেবা চালু করেন আনিসুল হক। বিমানবন্দর সড়কে যানজট কমাতে মহাখালী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়কে ইউলুপ করার উদ্যোগটিও নেন তিনি। তার দৃঢ় পদক্ষেপের ফলে সড়কে ঝুলে থাকা মৃত্যুফাঁদ সেই অবৈধ বিলবোর্ড অপসারিত হয়েছিল। রাজধানী নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল নগর পিতার। সেই স্বপ্নের শুরুটা হলেও অকাল মৃত্যুর কারণে অনেক স্বপ্নই এখন নীরবে কাঁদছে।
নগরীকে বাসযোগ্য করতে আনিসুল হকের নেওয়া বেশ কিছু উদ্যোগ স্থবির হয়ে পড়েছে। তার চলে যাওয়ার পর সাতরাস্তা সড়ক পুরোপুরি দখলমুক্ত করতে পারেনি ডিএনসিসি। ‘নগর অ্যাপ’ নামে তৈরি করা অ্যাপ্লিকেশনটিও চালু করা হয়নি।
এক নজরে আনিসুল হক :
স্বপ্নবাজ এই মানুষটি ১৯৫২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার শৈশব কাটে নানাবাড়ি ফেনীতে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার করে সত্তরের দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
১৯৮০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে টেলিভিশন উপস্থাপক হিসেবে পরিচিতি পান আনিসুল হক। আশির দশকেই তৈরি পোশাক শিল্পে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন মোহাম্মদী গ্রুপ। ২০০৫ সালে বিজিএমইয়ের সভাপতি ও ২০০৮ সালে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১০ সালে সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নির্বাচিত হন আনিসুল হক।
রাজধানী বিভক্তের পর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে মনোনয়ন পান তিনি। রাজধানীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই বছর পরেই মারা যান এ নগর পিতা। মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রদাহ (সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস) ধরা পড়লে লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।