মোংলায় জমির মালিকদের ৬০ একর জমি জবরদখল করে র্দীঘ ১২/১৩ বছর ধরে চিংড়ি চাষের অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয় প্রভাবশালী এক ঘের মালিকের বিরুদ্ধে। জমির মালিকদেরকে হারির/লিজের (চুক্তি অনুযায়ী জমির বিপরীতে নির্ধারিত টাকা) টাকা না দেয়ায় এর প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। জমির মালিকেরা তাদের জমি ঘিরে নিয়ে যে যার মত করে মাছ চাষের উদ্যোগ নিলেও প্রভাবশালী ওই ঘের মালিকের বাঁধা, হামলা ও হুমকি-ধামকিতে তাও করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ভুক্তভোগীদের গণস্বাক্ষরিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সালাম শেখ তার নিজের জমির সাথে অন্য মালিকদের ৬০ একর জমি হারি/লিজ নিয়ে র্দীঘদিন ধরে চিংড়ি চাষ করে আসছেন। কিন্তু চুক্তি মোতাবেক জমির মালিকদের হারির/লিজ টাকা না দিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ধরণের হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছনে সালাম। সালামের এহীন র্কমকান্ডে অতিষ্ট জমির মালিকেরা তাদের প্রাপ্ত হারির/লিজ টাকা বুঝে পেতে ও তাদের জমি আলাদা করে ঘিরে চিংড়ি চাষের আওতায় নিতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। চলতি মৌসুমের শুরুতেই জমির মালিকেরা সালামের ঘেরের মধ্যে থাকা তাদের জমি ঘিরতে গেলে তাতে বাঁধা দেয় সালাম শেখ। শেষমেষ জমি ঘিরতে না পেরে ও হারির/লিজের টাকা না পেয়ে প্রশাসনের দারস্থ হয়েছেন অসহায় জমির মালিকেরা। জমি ঘিরে নিতে বাঁধা দিয়ে ও হারির টাকা না দিয়েইে চলতি মৌসুমে ওই জমিতে আবারো ঘের শুরু করেছেন সালাম। এনিয়ে জমির মালিকদের মাঝে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ঘের মালিক সালাম ও জমির মালিকদের মধ্যে যে কোন সময় সংর্ঘষের আশংকা বিরাজ করছে। বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তজেনা ছড়িয়ে পড়েছে।
এদিকে জমির মালিকেরা দীর্ঘদিনেও হারির/লিজ টাকা না পাওয়ায় নতুন করে একই এলাকার ঘের ব্যবসায়ী ও ওই ঘেরের মধ্যে ক্রয়কৃত জমির মালিক নজরুল ইসলাম হাওলাদাররে কাছে তাদের জমি হারি/লিজ দিয়েছেন। নজরুল ইসলামও ওই সকল জমির মালিকদেরকে নগদ হারির/লিজের টাকা পরিশোধ করলেও সালাম শেখের বাঁধার কারণে জমিতে ঘের করতে পারছেন না। তাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে জমি জবরদখলকারী আব্দুস সালাম শেখের বিরুদ্ধে প্রশাসনরে বিভিন্ন দপ্তরে জমির মালিকদের সাথে নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলেও প্রায় মাসখানকে সময়েও তার কোন প্রতিকার মিলেনি।
জমির মালিক আ: রশিদ হাওলাদার, ইউসুফ আলী খান, তৈয়বুর রহমান শেখ, আব্দুল মজিদ খান, মো: টুকু খান, আবুল কালাম ফকির বলনে, আমাদের ৬০ একর জমি জবরদখল করে সালাম শেখ র্দীঘদিন ধরে ঘের করে আসলেও আমাদের হারির/লিজের টাকা দেয়না। হারির/লিজের টাকা চাইতে গেলে গালাগালি, হুমকি-ধামকিসহ নানা ধরণের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন সালাম। হারির/লিজের টাকা না দেয়ায় আমরা আমাদের জমি ঘিরে নিতে গেলে তাতেও বাঁধা দিয়ে জবরদখল করে রেখেছেন সালাম শেখ। আমরা আমাদের হারির/লিজের টাকা ও জমি ঘিরে নিতে প্রশাসনের দারস্ত হয়েছি। কিন্তু তাতেও এখনও পর্যন্ত কোন সুফল পাচ্ছিনা বলেও জানান তারা। ভুক্তভোগীরা আরো বলনে, মুলত সালামের জবরদখলকৃত প্রায় ১শ একরের ঘেরের মধ্যে সালামের নিজের জমি রয়েছে মাত্র ১৭ একর। নিজের ১৭ একর জমির সাথে বাকী জমির মালিকদের জমি জবরদখল করে ১২/১৩ বছর ধরে ঘের করে আসছেন সালাম।
ভুক্তভোগীদের জমি হারি/লিজ নেয়া নজরুল ইসলাম বলেন, আমি হারির টাকা পরিশোধ করে জমি লিজ নিয়েও সালাম শেখের জবরদখল ও বাঁধায় সেই জমিতে যেতে পারছিনা। আমি জমিতে ঘের করতে না পারলে তো আমার হারি দেয়া টাকাই লোকসানে যাবে। তাই আমিও প্রশাসনের কাছে এর প্রতিকারে জোর দাবী জানাচ্ছি। নজরুল ইসলাম আরো বলেন, সালামের জবরদখলে থাকা প্রায় ১শ একরের ঘেরের মধ্য হতে আমি জমির মালিকদের কাছ থেকে ১৯ একর ৯২শতক জমি কিনেছি। আমার ক্রয়কৃত জমিতেও যেতে পারছিনা সালামের বাঁধার কারণে।
অভিযুক্ত জমি জবরদখলকারী ঘের মালিক আব্দুস সালাম শেখ বলনে, আমার কাছে কেউ কোন হারির/লিজের টাকা পাবনো। আর যারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিচ্ছেন আমার ঘেরের মধ্যে তাদের নিজেদের কোন জমিই নেই বলে দাবী করেন তিনি।
উপজলো নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, জমি ও ঘের সংক্রান্ত বিষয়ে আব্দুস সালাম শেখের বিরুদ্ধে নজরুল ইসলাম হাওলাদারের একটি অভিযোগ পাওয়ার পর এনিয়ে একবার বসাবসি হলেও সে সময় এর মিমাংসা হয়নি। সুতরাং বিরোধপূর্ণ বিষয়টির মিমাংসার জন্য পুনরায় উভয় পক্ষকে ডেকে নিয়ে বসে সুষ্ঠু সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।