অনলাইন ডেস্কঃউন্নয়নের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক এ উন্নয়নকে ত্বরান্বিত ও টেকসই করতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে পণ্য রফতানি বাবদ অতিরিক্ত ৪ হাজার কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এ লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বেজা)। এরই মধ্যে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল।বেজার হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নকাজ সমাপ্ত হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে—বাগেরহাটে মোংলায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ । আর মোংলায় অর্থনৈতিক অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বন্দর কর্তৃপক্ষের তৃতীয় শ্রেণীর এক কর্মচারি ও বিআইডাব্লিউটিএ কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সম্মন্বয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালি ঘষিয়াখালী চ্যানেলে খনন করা বালু মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট ।
ঐ সিন্ডিকেট মোংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেলের খনন করা বালু মাটি কর্তৃপক্ষ ফ্রি দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে । অথচ ফ্রি বালু মাটি প্রতারণার মাধ্যমে ঐ সিন্ডিকেট সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বালু ভরাটের নামে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । আর সথে সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের তৃতীয় শ্রেণীর এক কর্মচারি। এ ঘটনার সাথে বিআইডাব্লিউটিএ, মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের কতিপয় কর্মকর্তাসহ ৯ সদস্যের একটি শক্তিশালী প্রতারকচক্র জড়িত বলে অনুসন্ধানে তথ্য পাওয়া গেছে ।
জানা গেছে, মোংলা ঘষিয়াখালী চ্যানেলে নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরকারি অর্থায়নে নিয়মিত ড্রেজিং কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিআইডাব্লিউটিএ। এ চ্যানেলে খনন করা বালু ও মাটি ফেলা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী নদী সংলগ্ন জমিতে। তার পরেও বালু মাটি ফেলার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। পরে বিআইডাব্লিটিএ থেকে ফ্রি বালু মাটি নেওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। বালু ভরাটের নামে কোন টাকা নেয়ার নিয়ম না থাকলেও মোংলার অর্থনৈতিক অঞ্চলে (বেজায়) পলি ফেলে বিআইডাব্লিউটিএ’র ড্রেজারের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে মোংলা বন্দরের ট্রাফিক শাখায় কর্মরত সহকারি ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এনামুল হক। মোংলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল উন্নয়নে মেসার্স শিকদার গ্র“পের নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান মেসার্স কামার জানি এন্টারপ্রাইজ-এর মালিক মোঃ মাহবুবুর রহমানের কাছ থেকে প্রতারণা করে প্রায় ৬৬ লাখ টাকা গ্রহণ করেছে বন্দরের ওই কর্মচারী এনামুল। ব্যবসায়ী মাহাবুবুর রহমান জানান, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মচারী এনামুল নিজেকে একজন ড্রেজার ব্যবসায়ী দাবি করে মোংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলের নিচু জায়গা ভরাটের জন্য প্রতি ফুট দুই টাকা হারে মৌখিক চুক্তি করেন তাদের প্রতিষ্ঠানের সাথে। এর পর তিনি বালু ভরাট করা শুরু করে একই সাথে বিল নিতে থাকেন। প্রায় ৪০ লাখের অধিক ঘন ফুট বালু ভরাট করে গত ৪ জুলাই পর্যন্ত। এর বিনিময়ে হিসাব অনুযায়ী তার কাছ থেকে পাওনা টাকাও বুঝে নিয়েছেন এনামুল। এরপর গত ৪ জুলাই তিনি জানতে পারেন, ওই বালু ভরাট করা হয় মোংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেলের ডেজিং কাজে নিয়োজিত ড্রেজার দ্ধারা। তিনি অভিযোগ করেন, মোংলা বন্দরের কর্মচারী এনামুল হক তাদের সাথে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে এনামুল হক জানান, তিনি প্রতি ফুট বালু ভরাটের জন্য দুই টাকা হারে গ্রহণ করেছেন। তবে এনামুল দাবি করেন বালু ভরাট বাবত টাকা তিনি একা নেননি। বিআইডাব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা, কামারজানি এন্টারপ্রাইজ-এর ব্যবস্থাপক আনন্দ বাবু ও দু’জন মিডিয়া কর্মীসহ ৯ জনকে ভাগ দিয়েছেন। ফ্রি বালু ফেলছে বিআইডাব্লিউটিএ কিন্তু কেন টাকা নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বন্দরের কর্মচারী এনামুল বলেন, তার ক্ষমতা আছে তাই তিনি নিয়েছেন।
সরকারি ড্রেজার দিয়ে ডেজিং কাজ চলছে কিন্তু সরকারি অন্য প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক জোন উঁচু করণে কেন টাকা নেয়া হয়েছে জানতে চাওয়া হলে বিআইডাব্লি¬উটিএ’র ড্রেজিং প্রকল্পে নিয়োজিত প্রকৌশলী মতিউর রহমান বলেন, এনামুল হকসহ তিন ব্যক্তি আমাদের দপ্তরে সাদা কাগজে লিখিত আবেদন করেন ফ্রি বালু দ্বারা বেজার নিচু এলাকা ভরাটের জন্য। এর পর আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটি প্যাডে লিখিত আবেদন করতে বলেন। পরে তারা একটি প্যাডে আবেদন করার পর আমরা বালু ভরাট করি। লেনদেনের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। এ বিষয়ে শিকদার গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোন করা হলে তিনি দেশের বাইরে থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে গ্র“পের মাকেটিং ম্যানেজার জয়সন স্টিফারকে ফোন করা হলে তিনি খোঁজ নিয়ে পরে কথা বলবেন বলে পরে আর কথা বলেননি।