মোংলায় স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী দুই বোনকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন প্রতিপক্ষরা। নির্যাতনের শিকার দুই বোনই এখন বিছানায় কাতরাচ্ছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নির্যাতনের শিকার ওই দুই বোন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিস্যা নিলেও হাসপাতালে শয্যার সংকুলান না থাকায় তারা বাড়ীতে চিকিৎসারত রয়েছেন। এনিয়ে রাতে ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ দিলেও ঘটনার ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও মেলেনি কোন প্রতিকার। এদিকে থানায় অভিযোগ দেয়ায় বুধবার সকালে ও দুপুরে দুই দফায় ভুক্তভোগী পরিবারকে ভয়ভীতিসহ নতুন করে নির্যাতন ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন প্রতিপক্ষরা।
ভুক্তভোগী পরিবার ও থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার চিলা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের হলদিবুনিয়ার পাগলের মোড় এলাকার গীর্জার মাঠে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ব্যাডমিন্টন খেলছিলো স্থানীয় বাসিন্দা লিটন স্বর্নকারের দুই মেয়ে বৈশাখী স্বর্ণকার (১৮) ও শ্রাবন্তী স্বর্ণকার (১৭)। তখন একই এলাকার শহিদুল হাওলাদারের ছেলে রাসেল হাওলাদার (২৫) ও মৃত বেলায়েত হাওলাদারের ছেলে সিহাব হাওলাদার (১৭)সহ ৫/৬ জনে অতর্কিত হামলা চালায় খেলতে থাকা বৈশাখী ও শ্রাবন্তীর উপর। তখন হামলাকারীরা খেলার মাঠ থেকে তাদেরকে চুলের মুঠি ধরে রাস্তার উপর ফেলে প্রকাশ্যে ব্যাপক মারধরসহ নির্যাতন করেন। তাদের ডাক চিৎকারের আশেপাশের লোকজন ছুটে এলেও হামলাকারীরাদের ভয়ে তাদেরকে ছাড়ানোর সাহস করেননি কেউ। পরে খবর পেয়ে তাদের মা ছুটে এলে তাকেও মারধর করেন হামলাকারীরা। আহত অবস্থায় তাদেরকে সেখান থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাদের পরিবার। রাতে হাসপাতালে শয্যা না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে বাড়ীতে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দিলে তারা বাড়ীতে চলে যান। তাদের শরীরের সর্বাঙ্গে আঘাতের কালো দাগ, ফুলা জখম, আচর, কাটা-চেরার চিহ্ন রয়েছে। গত রাত থেকেই তারা বাড়ীতে বিছানায় শয্যশায়ী রয়েছেন। বিছানা থেকে নিজেরা উঠতে পারছেন না, আবার কেউর সহায়তায়ও উঠতে পারছেন না ব্যথার যন্ত্রনায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার প্রকাশ কুমার দাশ বলেন, মঙ্গলবার রাতে হলদিবুনিয়ার পাগলের মোড় এলাকা থেকে আসা গুরুতর আহত দুই বোনের সারা শরীরের মারাত্মক জখম দেখা গেছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর হাসপাতালে থাকার শয্যা সংকটের কারণে পরিবার তাদেরকে বাড়ীতে নিয়ে যান।
এদিকে বিছানা থেকে উঠার শারীরিক সক্ষমতা না থাকায় নির্যাতনের শিকার শ্রাবন্তী সরকারের বুধবার থাকা তার বাংলা দ্বিতীয়পত্রের ব্যাকরণ পরীক্ষা দিতে পারেননি। বার্ষিক পরীক্ষা দিতে না পারায় তার এক বছরের লেখাপড়ার ভবিষ্যৎও অন্ধকারে চলে গেছে। এনিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন নারী-পুরুষ বলেন, কোন কারণ ছাড়াই মেয়ে দুইটিকে প্রকাশ্যে মারপিট করলো রাসেল ও সিহাব গং। তাতে কোন বিচারও হয়নি, আবার মার খেয়ে পরীক্ষাও দিতে পারেনি শ্রাবন্তী। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এনিয়ে কোন জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের কোন ভূমিকাও নেই। সংখ্যালঘু তাই মার খেয়ে ও পরীক্ষা দিতে না পারার কোন বিচারই পাচ্ছেন না লিটন পরিবার।
স্থানীয় চায়ের দোকানী পলি সরকার বলেন, রাসেল ও সিহাবসহ আরো কয়েকজন এসে বৈশাখী ও শ্রাবন্তীর উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ব্যাপক নির্যাতন করেছেন। ওই সময় প্রচুর লোকজন জড়ো হলেও কেউ তা ঠেকায়নি। রাসেল ও সিহাব এলাকায় চরম বেপরোয়া, তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনা। তাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এ এলাকার বহু পরিবার, যার কোন বিচার হয়নি কোনদিন।
চরম নির্যাতনের শিকার শ্রাবন্তী স্বর্ণকার মালগাজী বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী, অপর বোন বৈশাখী স্বর্নকার মোংলা বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী।
অভিযুক্ত রাসেল ও সিহাব হাওলাদারকে বার বার ফোন করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।